জাকেরের হাত ধরে টি-টোয়েন্টিতে ‘পিগম্যালিয়ন ইফেক্টের’ শুরু?

জাকেরের হাত ধরে টি-টোয়েন্টিতে ‘পিগম্যালিয়ন ইফেক্টের’ শুরু?

৪০ বলে ৯২, সমীকরণটা ছিল এমন। আর সব দল এমন লক্ষ্য হরহামেশাই তাড়া করে ফেলে। তবে বাংলাদেশের সামনে এমন লক্ষ্য পড়লেই যেন কী হয়ে যায়। এমন কিছুর ইতিহাস বাংলাদেশের নেই অন্তত। 

শেষ সাত ওভারে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জেতার রেকর্ডটা বাংলাদেশের ৭৭। ২০১৮ সালে নিদাহাস ট্রফিতে। গত সোমবার প্রথম টি-টোয়েন্টিতে যখন এর চেয়েও ১৭ রান বেশি প্রয়োজন পড়ল শেষ সাত ওভারে, তার ওপর সে সময়ই যখন বিদায় নিলেন মাহমুদউল্লাহ, তখন হার তো বটেই, হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়াকেই মনে হচ্ছিল নিয়তি। 

সে নিয়তিটাকে অন্তত সেদিনের জন্য দলের পরিণতি হতে দেননি জাকের আলী অনিক। মাহমুদউল্লাহ ফেরার পর থেকে দলের জয়ের আশাটা শেষ ওভার পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেছেন তিনি। খেলেছেন ৩৪ বলে ৬৮ রানের দারুণ এক ইনিংস। হাঁকিয়েছেন ৬টি ছক্কা।

সে ইনিংসটা শেষমেশ বাংলাদেশকে জেতাতে পারেনি অবশ্য। কিন্তু দলকে একটা বিশ্বাস এনে দিয়ে গেছে অবশ্যই। ম্যাচটা শেষে দর্শক হিসেবে আপনার কি মনে হয়নি, এখন থেকে শেষ সাত ওভারে ১০০ দরকার পড়লেও আশা হারাতে হবে না? আগের বিশ্বাস আর এখনকার বিশ্বাসটা কি খানিকটা হলেও বদলে যায়নি?

***

আমাদের চারপাশ থেকে আমাদের নিজেদের বিষয়ে যে ধারণা দেওয়া হয়, তা আমাদের কাজে বড় ধরনের প্রভাব ফেলে। এই চারপাশ থেকে আসতে থাকা ধারণাটা আবার আমাদের কাজই নির্ধারণ করে দেয়। এটা একটা চক্র। মনোবিজ্ঞানের ভাষায় যার নাম ‘দ্য পিগম্যালিয়ন ইফেক্ট’। 

‘আমাদের দিয়ে টি-টোয়েন্টি হয় না’ বিশ্বাসটা বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি পারফর্ম্যান্সে বহু বছর প্রভাব ফেলেছে। বিগত বেশ কয়েকটা বিশ্বকাপে বাজে পারফর্ম্যান্সের নেপথ্যে যে এ বিষয়টা কাজ করেছে, তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। 

প্রথম টি-টোয়েন্টির পর এই ‘আমাদের দিয়ে টি-টোয়েন্টি হয় না’ বিশ্বাসটাই উলটে গেছে ১৮০ ডিগ্রি। বিশ্বাস না হলে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হোসেন পাপনের কথা শুনুন? গতকাল সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি বললেন, ‘তামিম নাই, সাকিব নাই, মুশফিক নাই এরপরেও ওরা যে সাহস নিয়ে খেলছে এটাই বড় কথা। ওদের খেলার ধরণ দেখে মনে হয়েছে এখন টি টোয়েন্টি খেলতে আমরাও পারি।’

এরপর কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের কণ্ঠেও ঝরে পড়ল একই সুর। জাকের আলী অনিককে নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি যা বললেন, তা শোনাল তা-ই। হাথুরু জাকেরকে নিয়ে বললেন, ‘সে কী করতে পারে, তা দেখে খুব ভালো লাগছে। আমি তার খেলা খুব বেশি দেখিনি। শুধু এবারের বিপিএলেই দেখেছি। সে খুবই শান্ত। এটাই চোখে পড়েছে এবারের বিপিএলে। এই জিনিসটা খুব ভালো লেগেছে। এই একটা গুণ আপনার দরকার, যখন আপনি পাঁচ-ছয়-সাতে ব্যাটিং করবেন। কারণ, বেশির ভাগ সময় আপনাকে কিছু কাজ করতে হবে অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যে।’ 

হাথুরুর মূল্যবান বাক্যটা এল সে বক্তব্যের শেষে। তিনি বললেন, ‘সে যা করেছে, তা দেখতে পেরে খুবই ভালো লেগেছে। আমাদের অনেক আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে।’ ‘আমাদের আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে’ তার মানে দল এখন বিশ্বাস করছে ভালোভাবেই!

এক পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি চলতে চলতে হঠাৎ একটা বিচ্যুতিতে পিগম্যালিয়ন ইফেক্টে নতুন রূপ দেখা যায়। এতদিন এর বাজে রূপটা দেখা গেছে দেশের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে। এবার প্রথম টি-টোয়েন্টির ‘বিচ্যুতি’ তাহলে এবার ভালো রূপটা দেখাক?

সম্পর্কিত খবর