তুষারার কাছে সিরিজ খোয়াল বাংলাদেশ

তুষারার কাছে সিরিজ খোয়াল বাংলাদেশ

সেই তিন বলেই তো মূলত এই ম্যাচ ‘শেষ’!

বাংলাদেশের ইনিংসের চতুর্থ ওভার। বোলার শ্রীলঙ্কার নুয়ান তুষারা। নামটা নতুন। এই সিরিজে প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কার একাদশে তিনি। কিন্তু নিজেকে চেনাতে বেশি সময় নিলেন না। এক বল লাগলো। দ্বিতীয় বলেই উড়ে গেল বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর স্টাম্প। পরের বলেই তাওহীদ হৃদয়ের স্টাম্প চুরমার! হ্যাটট্রিক বল ঠেকাতে এলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। পারলেন না তিনিও। বলের লাইন মিস করলেন। সামনে খেলবেন না পেছনের পায়ে খেলবেন দ্বিধা-দ্বন্দ্বে বল তার পেছনের পায়ে লাগল। আম্পায়ার আঙ্গুল তুলে জানালেন এলবিডব্লু। রিভিউ নিয়েও রক্ষা পেলেন না মাহমুদউল্লাহ। তিন বলে তিন উইকেট! নুয়ান তুষারার হ্যাটট্রিক! বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে জমা তখন ৪ উইকেটে ১৫! ওভার শেষ মাত্র ৪। জয়ের জন্য প্রয়োজন বাকি ৭০ বলে ১৪৩ রান। নিজের পরের ওভারে সৌম্য সরকারকে বোল্ড করে ম্যাচের দৈর্ঘ্য আরো কমিয়ে আনলেন তুষারা। বাকি সময় জুড়ে একটাই প্রশ্ন- সিরিজ নির্ধারনী এই ম্যাচ কতো বড় ব্যবধানে হারছে বাংলাদেশ।

রিশাদ হোসেনের ব্যাটিং সেই উত্তর পাওয়ার অপেক্ষা বাড়িয়ে দিল। এই ম্যাচে ব্যাট হাতে দারুণ লড়লেন এই লেগ স্পিনার। রেকর্ড ৭ ছক্কায় ক্যারিয়ারের প্রথম হাফসেঞ্চুরি করলেন। ব্যাটিংয়ে তার সঙ্গী হলেন তাসকিন আহমেদ। রিশাদ ৩০ বলে ৫৩ করে ফিরেন। তাসকিনের ব্যাটে আগুন ঝরলো। করলেন ২০ বলে ৩১ রান। এই দুজনের ক্যারিয়ার সেরা ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ ম্যাচে খানিকটা প্রতিরোধ গড়লো। শেষ ৬ বলে জয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন দাঁড়ালো ৩০ রানের।

এই সমীকরণে জিততে হলে বাংলাদেশকে বিশ্বরেকর্ড গড়তে হতো। সেটা আর হলো কই। ২৮ রানের বিশাল জয়ে শ্রীলঙ্কা টি- টোয়েন্টি সিরিজের ট্রফি জিতে নিল।

ব্যবধান ২-১। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম এবং শেষ ম্যাচ জিতে শ্রীলঙ্কা আরেকবার জানিয়ে দিলো এই ফরমেটে তারা এখনো পরিসংখ্যান, পরিকল্পনা, জোসও জেদে বাংলাদেশের চেয়ে অনেকদুর এগিয়ে।

১-১ সমতা নিয়ে শেষ ম্যাচ খেলতে নেমেছিল দু’দল। বাংলাদেশের সামনে এই প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টি- টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের একটা সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছিল। বলাবলি হচ্ছিল দাপুটে ভঙ্গিতে দ্বিতীয় ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ সিরিজের শেষ ম্যাচের আগে আত্মবিশ্বাসে টগবগ করছে। নতুন ইতিহাস গড়ার স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু কে জানতো এই ম্যাচে কী দুঃসময় অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের জন্য!

একটা তুলনা দেই। শ্রীলঙ্কা তাদের পাওয়ার প্লে’তে তুলেছিল ১ উইকেটে ৪১ রান। আর বাংলাদেশের ব্যাটিং পাওয়ার তো পাওয়ার প্লেতেই শেষ, ২৪ রানে নেই ৫ উইকেট। এই পাঁচ উইকেটের মধ্যে চারটিই শিকার করেন সেই পেসার নুয়ান তুষারা।

মুলত নূতন এই শ্রীলঙ্কান পেসার নুয়ান তুষারার কাছেই সিরিজের শেষ ম্যাচে ‘নাই’ হয়ে গেল পুরো বাংলাদেশ দল। আরেকটু সুনির্দিষ্ট করে বললে ধসের শুরু তার প্রথম ওভারেই। সেই ওভারে কোনো রান দিয়ে হ্যাটট্রিকসহ তিনটি উইকেট নেন তুষারা। পরে আরো দুই উইকেট। ক্যারিয়ার সেরা ২০ রানে ৪ উইকেট নিয়ে এই ম্যাচের সবটুকু জুড়ে যে নিজের নাম লিখে রাখলেন নুয়ান তুষারা।

এই ম্যাচের কথা যখনই উঠবে তখনই তুষারার সেই প্রথম ওভারের গল্পই সবচেয়ে বেশি আলো ছড়াবে। নাজমুল হোসেন শান্ত বোল্ড ১! তাওহীদ হৃদয় বোল্ড ০!!

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এলবিডব্লু ০!!! এই দুরাবস্থা শেষ হলো বাংলাদেশের ১৪৬ রানে অলআউটের মধ্য দিয়ে। তখনো ম্যাচের ৩ বল বাকি!

অথচ কি স্বপ্ন না দেখিয়ে এই ম্যাচ শুরু করেছিল বাংলাদেশ। টসে জিতে যথারীতি আগে বোলিং বেছে নিলেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। শ্রীলঙ্কার ওপেনিং জুটি বেশিদুর যেতে পারল না। তবে দলকে বড় রানের স্বপ্ন দেখালেন আরেক ওপেনার কুশাল মেন্ডিস। একপ্রান্ত আঁকড়ে রেখে মেরেকেটে বাংলাদেশের বোলিং একাকার করে দিলেন কুশাল। ৬ ছক্কা ও ৬ বাউন্ডারিতে ৫৫ বলে ৮৬ রান তুলে কুশাল যখন ফিরছেন তখন শ্রীলঙ্কার স্কোর ১৭ ওভারে ১৪০। কিন্তু শেষের দিকে বাংলাদেশের হিসেবি বোলিংয়ের কারণে শ্রীলঙ্কা গা জোয়ারি ব্যাটিং করতে পারেনি। থেমে যায় তারা ১৭৪ রানে।

তাসকিন আহমেদ ও স্পিনার রিশাদ হোসেন দুটি করে উইকেট নেন। বোলিংয়ের মতো ব্যাট হাতে রিশাদ এই ম্যাচে দলের সবচেয়ে কার্যকর পারফরর্মার।

তবে তার মারকুটো হাফসেঞ্চুরি বাংলাদেশের হারে ব্যবধান কমিয়ে আনা ছাড়া নতুন কোনো গল্প লিখতে পারলো না! এই ম্যাচের গল্প-কাহিনী-উপন্যাস সবকিছুই যে নিজের প্রথম ওভারেই লিখে গিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার ঐ একজন-নুয়ান তুষারা।

এই ম্যাচকে শ্রীলঙ্কা অনায়াসে নুয়ান তুষারার ম্যাচ বলে নতুন নাম দিতে পারে!

সম্পর্কিত খবর