টাইব্রেকে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ
ভারতের দ্বিতীয় টাইব্রেকার শটটি ঠেকিয়ে প্রায় কান্না করে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের গোলরক্ষক এয়ারজান বেগম। কেননা, শুরুতে পিছিয়ে পড়া বাংলাদেশ তখন ভারতের চেয়ে এগিয়ে। আরেকটি শট রুখে দিতে পারলেই কিংবা গোল করতে পারলেই জয় নিশ্চিত। কিন্তু ফের ভুল করে বাংলাদেশ। ভারতের জালে বল জড়াতে ব্যর্থ হয়ে সমতায় চলে আসে ম্যাচ। তাই আরও একবার দায়িত্ব নিতে হয় গোলরক্ষক এয়ারজনাকে। তবে হতাশ করেননি তিনি। আরেক দফা ভারতে আটকে দিয়ে টাইব্রেকার রোমাঞ্চে বাংলাদেশকে ম্যাচ জেতান ৩-২ গোলে। সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা উঁচিয়ে ধরে বাংলাদেশ। যা ২০১৭ সালের পর দ্বিতীয়বারের মতো জিতল বাংলাদেশ।
অথচ, অনূর্ধ্ব-১৬ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের গ্রুপপর্বে দাপুটে ফুটবল খেলেছে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের তিনটিতেই জয় পেয়েছে বড় ব্যবধানে। এরমধ্যে ফাইনালের প্রতিপক্ষ ভারতকেও ৩-১ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। তাই ফাইনালের আগে আত্মবিশ্বাসের কোনো কমতি ছিল না সাইফুল বারি টিটুর শিষ্যদের মধ্যে।
তবে সেই আত্মবিশ্বাসে এদিন শুরুতেই চিড় ধরায় ভারত। ম্যাচ শুরুর ৩ মিনিটের মধ্যেই এগিয়ে যায় তারা। সেই গোল শোধ দিতে বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৭০ মিনিট পর্যন্ত। এরপর বাকি সময় আর কোনো গোল না আসলে নিয়মানুযায়ী টাইব্রেকারে গড়ায় ম্যাচ। সেখানে রোমাঞ্চ শেষে দারুণ একটা জয় পায় বাংলাদেশ। নির্ধারিত সময়ে ১-১ গোলে শেষ হওয়া ম্যাচে টাইব্রেকারে ভারতকে হারিয়ে দেয় ৩-২ গোলের ব্যবধানে।
একটা সময় তো মনে হচ্ছিল অনূর্ধ্ব-১৯ মেয়েদের মতো না ১৬ কিশোরীরাও একই পথে হাঁটে। সেই শঙ্কা উঁকি দিচ্ছিল বৈকি। কেননা, গত মাসে শেষ হওয়া ঢাকার সেই সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালেও ১-১ গোলে শেষ হওয়া ম্যাচ গড়িয়েছিল টাইব্রেকারে। যদিও সেখানে বিতর্ক হয়েছে বেশ। এরপর ২২ পেনাল্টি শুট আউটের সেই ম্যাচে ট্রফি ভাগ করেছে দুই দল। তাই এদিনও ম্যাচ টাইব্রেকারে গেলে শঙ্কা ছিলই। ফের না তীরে এসে তরী ডুবে। তবে এদিন সেটি হতে দেননি গোলরক্ষক এয়ারজান। ফাইনালের চাপ জয় করেছেন এই কিশোরী। দলকে জিতিয়েছেন তিনটি সেভ দিয়ে।
অথচ, এদিন ম্যাচ শুরুর ৩ মিনিটের মাথায় গোল হজম করতে হয়েছে বাংলাদেশকে। গ্রুপপর্বে দাপুটে ফুটবল খেলা সাইফুল বারি টিটুর শিষ্যরা ঠিকমতো গুছিয়ে উঠার আগেই বাংলাদেশের জালে বল। মাঝ মাঠ থেকে বাড়ানো বল ধরে দারুণ দক্ষতার সঙ্গে কোনাকোনি শটে বাংলাদেশের জাল কাঁপায় ভারত। দলকে লিড এনে দেয় ভারতের ফুটবলার আনুষ্কা কুমারী। এরপর আর প্রধমার্ধে ম্যাচে ফিরতে পারেনি বাংলাদেশ। টুর্নামেন্ট জুড়ে দারুণ ফুটবল খেলা বাংলাদেশ ফাইনালে এসে এই প্রথম দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নামতে হয় ১-০ গোলে পিছিয়ে থেকে।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেও বেশ অগুছালো দেখা গেছে বাংলাদেশকে। তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে বেড়েছে আক্রমণের ধার। ম্যাচের ৬০ থেকে ৭০ মিনিটের মাঝের সময়টাতে বেশ কবার আক্রমণে গেছে বাংলাদেশ। ৬৬ মিনিটে তো গোল প্রায় পেয়েই গিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে শেষ পর্যন্ত গোল রক্ষকের বাধায় গোল উদযাপন করা হয়নি বাংলাদেশের। তবে পরের দফায় ৭০ মিনিটে ঠিকই গোল উদযাপন সেরেছে বাংলাদেশ।
৭০ মিনিটে পাওয়া কর্নার কিকটি ভারতের গোলরক্ষক তালুবন্ধি করতে না পারলে ঝটলার মধ্যে পেয়ে যান মরিয়ম বিন্তে হান্না। ভারতের জালে বল জড়ানোর এই সহজ সুযোগটি লুফে নিতে ভুল করেননি তিনি। বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরান দারুণ এক গোলে। উদযাপনের উপলক্ষ পেয়ে যায় বাংলাদেশ। এরপর ম্যাচে লিড নেওয়ার চেষ্টা চালায় বাংলাদেশ। তবে তাতে কোনো কাজ আসেনি। নির্ধারিত সময়ে আর কোনো গোল করতে পারেনি বাংলাদেশ। পরে ম্যাচ টাইব্রেকারে গেলে শেষ হাসি হাসে বাংলাদেশ।