মার্শ-ক্যারিদের দৃঢ়তায় টেস্ট সিরিজও অজিদের 

মার্শ-ক্যারিদের দৃঢ়তায় টেস্ট সিরিজও অজিদের 

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কিউইদের সবশেষ টেস্ট জয়টা ছিল এক যুগ আগে, ২০১১ সালের ডিসেম্বর। এরপর থেকে অজিদের কাছে লাল বলের ক্রিকেটে কিউইরা হয় দেখেছে হার নয়তো ড্র। সেই খরা কাটাতে ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে চতুর্থ দিনে কিউইদের দরকার ছিল ৬ উইকেট। এদিকে হাতে দুই দিন থাকলেও অজিদের দরকার ছিল ২০২ রান। টেস্টের শেষ এক-তৃতীয়াংশে যা বেশ কষ্টসাধ্য, এবং হয়েছিলও তাই। তবে ব্যাট হাতে অসাধারণ দৃঢ়তা দেখাল মার্শ-ক্যারি জুটি। তাদের ষষ্ঠ উইকেটে ১৪০ রানের জুটিতেই গড়ে যায় জয়ের মূল ভিত। 

পরে মার্শ ফিরলেও টিকে থাকেন ক্যারি। শেষে এসে সেঞ্চুরিতে ২ রানের আক্ষেপ থাকলেও জয়ের উচ্ছ্বাসে যেন তা ভুলেই গেছেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে অজিদের ৩ উইকেটের এই জয় অপেক্ষা বাড়াল কিউইদের সেই ‘ঐতিহাসিক’ জয়ের। এতে টি-টোয়েন্টির পর টেস্টেও স্বাগতিকদের ২-০ তে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া। 

ক্রাইস্টচার্চে তৃতীয় দিনেই নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিংয়ে নামে অজিরা। সেখানে জয়ের জন্য লক্ষ্য পায় ২৭৯ রান। যা মধ্যম মানের হলেও হেনরি-সিয়ার্স পেস তোপে ৩৪ রানেই ফেরেন অজিদের শুরুর চার ব্যাটার। এতে শুরুতে পড়লেও দিনের বাকি সময়ে চাপ সামলে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৭৭ রানে দিন শেষ করে সফরকারীরা। 

এতে বাকি ২০২ রান তুলতে চতুর্থ দিনের শুরুতে ফের ধাক্কা অজি দলে। দিনের একদম শুরুতে দলটির তারকা ব্যাটার ট্রাভিস হেডকে ফেরান কিউই অধিনায়ক টিম সাউদি। স্কোরবোর্ডে তখন ৫ উইকেটে স্রেফ ৮০! এতে জয়ের পাল্লা সিংহভাগ নিউজিল্যান্ডের দিকে ঝুলে যায়। তবে সেখানে ব্যাটিং নৈপুণ্য, দৃঢ়তা এবং হার না মানা মনোভাবে ম্যাচে আস্তে আস্তে নিজেদের করে নিতে থাকেন মিচেল মার্শ ও অ্যালেক্স ক্যারি। দুজনে গড়েন ১৪০ রানের সময় উপযোগী জুটি। 

৮০ রানে ৫ উইকেটের পর তাই ২২০ রানে এসে পড়ে অজিদের ষষ্ঠ উইকেট। সেখানে মার্শ ফেরেন ৮০ রান করে। ম্যাচের সেই অবস্থায় অজিদের দরকার আরও ৫৯ রান, এদিকে কিউইদের দরকার ৪ উইকেট। তবে পরের বলেই তা হয়ে যায় ৩ উইকেট! পরপর দুই বলে জোড়া শিকার করেন সিয়ার্স। এতে লক্ষ্য তাড়ায় আরও একবার চাপে পড়ে প্যাট কামিন্সের দল। তবে সেই কামিন্সকে নিয়ে বাকি পথ দাপটের সঙ্গে পাড়ি দেন ক্যারি। শেষ পর্যন্ত ছিলেন ৯৮ রানে অপরাজিত। সেঞ্চুরি আক্ষেপ ভুলে জয়টা যে এসে গেছে ততক্ষণে। 

এর আগে টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ইনিংসে সিরিজে চলমান ছন্নছাড়া ব্যাটিং আরও একবার দর্শীয়ে প্রথম ইনিংসে স্রেফ ১৬২ রানের পুঁজি পায় নিউজিল্যান্ড। সেখানে অজিদের হয়ে ফাইফার পান জশ হ্যাজলউড। জবাবে অজিদের প্রথম ইনিংসের শুরুটাও ছিল নিষ্প্রভ। সেখানে ম্যাট হেনরি একাই নেন ৭ উইকেট। তবে রানের ফেরার ইনিংসে মারনাস লাবুশেনের ৯০ রানের ইনিংসে চেপে আড়াইশ পেরিয়ে ২৫৬ রানের পুঁজি পায় অস্ট্রেলিয়া। 

পরে প্রথম ইনিংসের ব্যাটিং ব্যর্থতা এড়িয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে কিউই টপ অর্ডার ব্যাটারদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ৩৭২ রানে ভালো সংগ্রহ পায় স্বাগতিকরা। এতেই লক্ষ্যটা দাঁড়িয়েছিল ২৭৯ রানের। 

লক্ষ্য তাড়ার ইনিংসে ১২৩ বলে ৯৮ রানের নান্দনিক ব্যাটিং ছাড়াও ফিল্ডিংয়ে দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়েছেন ক্যারি। টেস্টের দুই ইনিংস মিলিয়ে উইকেটের পেছনে মোট ১০টি ক্যাচ নিয়েছে তিনি। এতে দাবিবার হিসেবেই ম্যাচসেরার খেতাব জেতেন ক্যারি। এদিকে সিরিজের দুই ম্যাচে দারুণ বল করা কিউই পেসার ১৭ উইকেট শিকারে জেতেন সিরিজসেরার খেতাব। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর: (তৃতীয় দিন শেষে)

নিউজিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ১৬২ (৪৫.২ ওভার) (ল্যাথাম ৩৮, হেনরি ২৯; হ্যাজলউড ৫/৩১, স্টার্ক ৩/৫৯)

অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ২৫৬ (৬৮ ওভার) (লাবুশেন ৯০, স্টার্ক ২৮; হেনরি ৭/৬৭)

নিউজিল্যান্ড ২য় ইনিংস: ৩৭২ (১০৮.২ ওভার) (রাচিন ৮২, ল্যাথাম ৭৩, মিচেল ৫৮, উইলিয়ামসন ৫১; কামিন্স ৪/৬২, লায়ন ৩/৪৯)

অস্ট্রেলিয়া ২য় ইনিংস: ২৮১/৭ (৬৫ ওভার) (ক্যারি ৯৮*, মার্শ ৮০; সিয়ার্স ৪/৯০, হেনরি ২/৯৪)

সম্পর্কিত খবর