শান্তর সেঞ্চুরিতে ওয়ানডেতে শুভসূচনা
একেই ক্যাপ্টেন্স নক! দল যখন চাপের মুখে তখন নেমে নিজেকে উজাড় করে দিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। তুলে নিলেন শতরান, ১২২ রান তুলে দলের জয় নিশ্চিত করে তবেই ফিরলেন। তাকে দারুণ সঙ্গ দিলেন মুশফিকুর রহিম। এই অভিজ্ঞ ব্যাটারের ব্যাটে এল ৭৩। তার পথ ধরেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ জিতল ৬ উইকেটে।
বুধবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শ্রীলঙ্কা ৪৮.৫ ওভারে ২৫৫ রান তুলে অলআউট হয়ে যায়। জবাব দিতে নেমে শুরুতে চাপে পড়লেও শান্ত-মুশফিকের ব্যাটে শেষ অব্দি অনায়াসে ৪৪.৪ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। শান্ত হাঁকালেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি। মুশফিককে নিয়ে গড়েন হার না মানা ১৬৫ রানের জুটি! এই জয়ে বাংলাদেশ ৩ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে দল এগিয়ে গেল ১-০তে!
বাংলাদেশ আর শ্রীলঙ্কা, দুই দলের ব্যাটিং আজ হয়েছে একেবারে ১৮০ ডিগ্রি উল্টো ধারায়। টস জিতে শ্রীলঙ্কা ব্যাট করতে নেমে যখন শুরুর দশ ওভারে রান তুলল ওভারপ্রতি ৭ করে, তখন জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের নিখাদ ব্যাটিং উইকেটে বিশাল রানের পাহাড়ে চাপা পড়াকেই মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের নিয়তি। এরপর যখন ব্যাটিংয়ে নেমে ২২ রান তুলতেই নেই হয়ে গেল ৩ উইকেট, তখনও বিশাল হার দিচ্ছিল চোখরাঙানি।
তবে বাংলাদেশ হার মানেনি দুটো পরিস্থিতির কোনোটিতেই। শুরুর দশ ওভারে দুই জায়গাতে পিছিয়ে থাকলেও পরের চল্লিশ ওভারে দুই বিভাগই উতরে গেছে লেটার মার্কস পেয়ে।
বোলিংয়ের কথাই ধরুন! শুরুর বোলাররা যখন হালে পানি পাচ্ছিলেন না, তখন দৃশ্যপটে এলেন তানজিম হাসান সাকিব। টানা তিন ওভারে তুলে নিলেন শ্রীলঙ্কার তিন টপ অর্ডার ব্যাটারের উইকেট। শ্রীলঙ্কার সম্ভাব্য রানটা তখনই নেমে এল ৩৫০'র নিচে। যা সময়ের সাথে সাথে ক্রমে নিচেই নেমেছে।
তানজিমের ধাক্কার পর যখন শ্রীলঙ্কা ক্ষতটা সারিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়ায় ছিল, তখন মেহেদি মিরাজ ফেরান চারিথ আসালঙ্কাকে। পরের দৃশ্যটা অন্য দুই পেসার তাসকিন আহমেদ আর শরিফুল ইসলামের। তানজিম সাকিবের মতো দুই পেসারও উইকেট নিলেন টানা। তাসকিনের পালা এল প্রথমে। কুশল মেন্ডিস, ওয়ানিন্দু হাসরাঙ্গা আর মাহিশ থিকসানাকে ফিরিয়ে লঙ্কানদের মিডল অর্ডারটা গুঁড়িয়ে দিলেন তিনি। এরপর শরিফুল এসে ফেরালেন ইনিংস সর্বোচ্চ রান করা জানিথ লিয়ানাগে, প্রমোদ মাদুশান আর দিলশান মাদুশঙ্কাকে। এক ওভার বাকি থাকতে শ্রীলঙ্কা অলআউট ২৫৫ রানে, যে দলটা এক সময় চোখরাঙানি দিচ্ছিল ৩০০ ছাড়ানোর, সেই দলটা!
এরপর বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের শুরুটাও হয়েছিল বোলিংয়ের মতোই, যাচ্ছেতাই! প্রথম বলে লিটন বিদায় নিলেন প্লেড অন হয়ে। মাদুশঙ্কার পরের ওভারে সৌম্য সরকারও সাজঘরমুখো। এরপর তাওহীদ হৃদয় আউট হলেন শেষ টি-টোয়েন্টির মতো করে বোল্ড হয়ে। ২২ রানে ৩ উইকেট নেই, ২৫৬ রান তাড়া করতে নেমে এমন শুরু চাইবে না কোনো দলই।
বাংলাদেশ তার পরই ম্যাচে ফিরল, ঠিক যেমন করে বোলিংয়ে ফিরে এসেছিল। শুরুর কাজটা করে দিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ওপাশে নাজমুল হোসেন শান্ত তখনও নড়বড়ে। তবে মাহমুদউল্লাহ রানের চাকাটা সচল রেখেছেন। চাপটা পড়তে দেননি শান্তর কাঁধে। দুজন মিলে চতুর্থ উইকেটে তুলে নেন ৬৯ রান, ৬২ বলে। তবে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি আক্রমণাত্মক হতে গিয়ে উইকেটটা গচ্চা যায় রিয়াদের।
সে ভুলটা চোখের সামনে হতে দেখেছেন শান্ত, ডাগ আউট থেকে মুশফিকুর রহিম। সেটার পুনরাবৃত্তি আর হতে দেননি নিজেরা। শুরুতে পরিস্থিতি বিচারে স্থিতধী হয়ে ইনিংসকে সামনে বাড়িয়েছেন। এরপর সময় যত গড়িয়েছে, বোলারদের ওপর চড়াও হয়েছেন। জুটির ফিফটি ছুঁয়েছেন, তিন অঙ্কে নিয়েছেন, এই জুটিটা টিকল একেবারে শেষ পর্যন্ত। দলকে জিতিয়ে যখন মাঠ ছাড়ছেন দুজন মিলে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পঞ্চম উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটিটা গড়া হয়ে গেছে ততক্ষণে, অবিচ্ছিন্ন ১৬৫ রানের জুটি বাংলাদেশকে এগিয়ে দিল ১-০ ব্যবধানে। তবে এই জুটির বিশেষত্ব ছিল এমন, দুজন ক্রিজে জমে গেছেন যখন, এরপর থেকে আর এক মুহূর্তও মনে হয়নি এই ম্যাচ বাংলাদেশ হারতে পারে।
ব্যক্তিগত মাইলফলকও ছুঁয়েছেন দুজনে। ৪৯তম ফিফটির দেখা এই ম্যাচেই পেয়েছেন মুশফিক। আর শান্ত পেয়েছেন ক্যারিয়ারের ৩য় ওয়ানডে সেঞ্চুরির দেখা। দুজনের এমন ব্যাটিং শেষতক বাংলাদেশকে এগিয়ে দিয়েছে ১-০ ব্যবধানে।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১০টি সিরিজ এখন পর্যন্ত খেলেছে বাংলাদেশ। জিতেছে মোটে ১টিতে। সে সিরিজটা অবশ্য ছিল সবশেষ সিরিজই। সে সিরিজেও সিরিজের প্রথম ম্যাচে জিতেছিল বাংলাদেশ। জিতল এবারও। তিন বছর পর এবারও যে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তিই চাইবে স্বাগতিকরা, তা বলাই বাহুল্য!