ইংল্যান্ডকে ধসিয়ে আফগানদের স্মরণীয় এক জয়
অবিশ্বাস্য! এছাড়া আর একে কীইবা বলবেন আপনি?
দুই দলের প্রেক্ষাপটটা দেখুন। শেষ কয়েক বছর ধরেই আফগানিস্তান বিশ্ব ক্রিকেটে উদীয়মান এক শক্তি। কিন্তু ওয়ানডে ক্রিকেটটা যেন দলটা রপ্ত করতে পারেনি টি-টোয়েন্টির মতো করে। ওয়ানডে বিশ্বকাপে ১৪ ম্যাচে জয় নেই, ২০১৯ এর আসরটা কাটাতে হয়েছে জয়শূন্যভাবেই। শঙ্কা ছিল এবারের আসরটাও না একই ভাবে শেষ করতে হয়!
অন্যদিকে ইংল্যান্ড বিশ্বচ্যাম্পিয়ন, সাদা বলের দুই ফরম্যাটেই। এবার ভারতে পা রেখেছে ওয়ানডের শিরোপাটা ধরে রাখতেই। শুরুটা ভালো না হলেও বাংলাদেশকে উড়িয়ে দিয়ে আভাস দিচ্ছিল খুনে রূপে ফেরার। সেই ইংল্যান্ডকে আফগানরা হারিয়ে দেবে, সেটা দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে ম্যাচের আগে টসের সময়ও কে ভেবেছিল?
সে অভাবনীয় ঘটনাটাই ঘটিয়ে দেখিয়েছে আফগানিস্তান। ইংলিশদের হারিয়েছে ৬৯ রানে। বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের হারানো তো বটেই, ম্যাচটা আরও এক কারণে রশিদ খানদের কাছে বিশেষ কিছু। এই জয় দিয়েই যে বিশ্বকাপে আট বছরের খরা কাটাল দলটা!
উঠতি মুলো নাকি পত্তনেই চেনা যায়। সেটা আফগানদের শুরু দেখেই ঠাহর হচ্ছিল খানিকটা। 'খানিকটা'ই। রহমানউল্লাহ গুরবাজ যতক্ষণ উইকেটে ছিলেন, ততক্ষণ তো মনে হচ্ছিল আফগানরা বুঝি ৩০০-৩৫০ করেই ছাড়বে! ৫৭ বলে ৮৪ করে যেই না গুরবাজ বিদায় নিলেন অদ্ভুতুড়ে একটা রান চুরি করতে গিয়ে, তখনই তালটা কেটে গেল। তার আগে দুটো, তার পর আরও তিনটে উইকেট খুইয়ে বসল দ্রুতই।
সেখান থেকে ইকরাম আলীখিল বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। প্রথমে রশিদ খানের সঙ্গে, এরপর মুজিব উর রহমানকে নিয়ে জুটি গড়েন তিনি। ব্যক্তিগত ৫৮ রানে তিনি যখন ফিরছেন, দলের স্কোরবোর্ডে তখন জমা পড়ে গেছে ২৭৭ রান। তার বিদায়ের পর আরও ৭ রান যোগ করে আফগানরা। শেষমেশ অলআউট হয় ২৮৪ রানে।
পুঁজিটা নেহায়েৎ মন্দ নয়। তবে এ পুঁজি নিয়ে জিততে হলে শুরুতেই উইকেট চাই। সেটা এনেও দিলেন ফজলহক ফারুকি, ফেরালেন বিপদজনক জনি বেয়ারস্টোকে। এরপর মুজিব উর রহমান যখন পাওয়ারপ্লে শেষের আগেই বিদায় করলেন জো রুটকে, তখন তো আফগানদের বিশ্বাসটা আরও জোরাল হয়ে গেল, এ ম্যাচে জেতা খুব সম্ভব।
উপমহাদেশের উইকেটের সঙ্গে দাভিদ মালানের চেনাশোনাটা বেশ। আগের ম্যাচে বাংলাদেশের কপাল পোড়ানো সেঞ্চুরি করে সেটা সাফ বলেও দিয়েছিলেন। সে ফর্মটা আফগানদের বিপক্ষেও টেনে আনার আভাস দিচ্ছিলেন তিনি। তবে সেটা আর শেষমেশ হতে দেননি মোহাম্মদ নবী। এরপর থেকে ইংলিশরা উইকেট খুইয়েছে নিয়মিত বিরতিতে। উইকেটে ব্যাটার এসেছেন, কিন্তু রশিদ, নবী, মুজিবরা তাদের কাউকেই আর থিতু হতে দেননি।
হ্যারি ব্রুক একপাশ আগলে রেখে ফিফটি তুলে নিয়েছিলেন, কিন্তু ওপাশে সঙ্গীর আসা যাওয়া দেখতে দেখতে কতদূরই বা এগোনো যায়? তিনিও পারেননি শেষমেশ। ব্যক্তিগত ৬৬ রানে রণে ভঙ্গ দিয়েছেন। দলের হার তখন নিশ্চিতই হয়ে গেছে।
এরপরও ইংলিশদের রান ২০০ ছুঁয়েছে লেজের ব্যাটিংয়ে। আদিল রশিদ, মার্ক উড, রিস টপলিদের সবাই দুই অঙ্ক ছুঁয়েছেন। তাতে অবশ্য হারের ব্যবধানটাই কমেছে ইংল্যান্ডের, জয় মেলেনি। আফগানরাই তুলে নেয় স্মরণীয় জয়।