লিটন দাস, শূন্যের সঙ্গে বসবাস!
সিরিজে বাংলাদেশের ইনিংসের প্রথম বলেই তিনি আউট। শূন্য রানের সেই শুরু। দ্বিতীয় ম্যাচে ৩ বলে সেই একই চিত্র। এবারও শূন্য রানে আউট। টানা দুই ম্যাচে লিটন দাস শূন্য রানে আউট। খেললেন মোটে ৪ বল। খালি রিক্ত হাতে ফিরলেন। এবং পুরো সিরিজটা তার শেষ হয়ে গেল ওভাবেই। রান করার কোনো সুযোগই মিলছে না তার তৃতীয় ম্যাচে। কারণ ওয়ানডে দল থেকেই যে তাকে বাদ দিয়ে ফেলেছেন নির্বাচকরা। শ্রীলঙ্কা সিরিজে প্রথম দুই ওয়ানডের দল ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশ। দুই ম্যাচের পারফরমেন্স দেখে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচের দল ঘোষণার পরিকল্পনা ছিল। সেই পরিকল্পনা কষতে গিয়ে নির্বাচকরা দেখলেন লিটন দাসের তো কোনো পারফরমেন্সই নেই! তাই তৃতীয় ম্যাচে তাকে রানে ফেরার সুযোগ দেওয়ার চেয়ে বাদ দেওয়াকেই যুক্তিযুক্ত মানলেন তারা।
শনিবার দুপুরে প্রেস রিলিজ দিয়ে বিসিবি জানিয়ে দেয়, সিরিজে শেষ ওয়ানডের দলে লিটন দাস নেই। তার জায়গায় দলে এসেছেন জাকের আলী অনিক। যিনি টি- টোয়েন্টিতে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ব্যাট হাতে ভালো ফর্ম দেখিয়েছিলেন।
এভাবে বাদ পড়ায় লিটন দাস হয়তো কিছুটা স্বস্তিও পেতে পারেন-যাক আমাকে এই সিরিজে তাহলে হ্যাটট্রিক শূন্যের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে না! বাংলাদেশের হয়ে এখন পর্যন্ত ওয়ানডে ফরমেটে টানা তিন ম্যাচে শূন্য রানে আউট হওয়ার নজির তিনজনের। এই তালিকার শুরুটা হয়েছিল মোহাম্মদ রফিককে দিয়ে। ২০০৬ সালে জিম্বাবুয়ে এবং কেনিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচে টানা তিন শূন্যের ‘রেকর্ড’ গড়া প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার। ২০০৭ সালে এই তালিকায় রফিকের সঙ্গী হন মুশফিকুর রহিম। সেই বছর আগস্টে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে দুই ম্যাচে এবং ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচ শূন্য রানে আউট হয়ে ‘হ্যাটট্রিক শূন্যের’ বাংলাদেশি ক্লাবের দ্বিতীয় সদস্য হন মুশফিক। ২০২১ সালে এসে মেহেদি মিরাজ এই ‘ক্লাবের’ তৃতীয় সদস্য হন। মিরাজ নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুই ম্যাচে শূন্য মারার পর মাসকয়েক পরে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সিরিজের প্রথম ম্যাচে শূন্য রান করে এই অযাচিত রেকর্ডের মালিক হন।
রফিক, মুশফিক ও মিরাজের সেই অনাকাঙ্খিত রেকর্ডের চতুর্থজন হওয়ার পথে এখন লিটন দাস। তবে স্বস্তির বিষয় হলো টানা তৃতীয় শূন্য তাকে এখন অন্তত এই সিরিজে তাড়িয়ে বেড়াবে না। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজে পর এই ফরমেটে বাংলাদেশ বছরের শেষভাগে ডিসেম্বরে খেলবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে। সেই সিরিজে লিটন দাস দলে জায়গা পেলে যে কোনো মুল্যে অন্তত ১ রান করতে চাইবেন; হ্যাটট্রিক শূন্যর রেকর্ড এড়াতে হবে যে!
টানা দুই শূন্যর পর লিটন দাসকে দল থেকে নির্বাচকরা বাদ দিয়ে একটা সত্য প্রতিষ্ঠিত করলেন যে ওয়ানডে সেটআপে এই ব্যাটসম্যান অটো চয়েজ নন। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের আগে ফর্মে ফেরার জন্য লিটন দাস ঘরোয়া ক্রিকেট খেলবেন। চলতি ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে লিটন দাস আবাহনী লিমিটেডের হয়ে খেলছেন। ফর্মে ফেরার জন্য এই লিগকেই লিটন এখন পাখির চোখ করছেন।
১৩ মার্চ সিরিজের প্রথম ওয়ানডে শূন্য রানে আউট হওয়ার পর লিটন দাস পরের ম্যাচের জন্য বেশ ভালো প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ১৫ মার্চ, শুক্রবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচ শুরুর আগে দুই থ্রোয়ারের সঙ্গে নেটে এক ঘণ্টা ব্যাট করেন লিটন।
তবে, আসল ম্যাচে তিনটির বেশি ডেলিভারি টিকতে পারেননি। পেসার দিলশান মাদুশঙ্কার ইন-সুইংয়ে পরাস্ত হয়ে ক্যাচ তুলে দেন।
শেষ ১৮ ওয়ানডে ইনিংসে লিটন দাস মাত্র দুটি হাফসেঞ্চুরি করেছেন। তবে তার সেই ইনিংসও দলের হার বাঁচাতে পারেনি। ২০১৫ সালে ভারতের বিপক্ষে অভিষেকের পর ৯০ ওয়ানডে ইনিংসে ১৪ বার খাতা খুলতে ব্যর্থ হন লিটন।
বাংলাদেশি ব্যাটারদের মধ্যে লিটনের চেয়ে বেশির ভাগ সময় শূন্য রানে আউট হয়েছেন কেবল তামিম ইকবাল (১৯), হাবিবুল বাশার (১৮), মাশরাফি বিন মুর্তজা (১৫) ও মোহাম্মদ রফিক (১৫)।
পরিসংখ্যান বিবেচনায় নিলে প্রতি সাত ইনিংসের মাঝে একবার করে শূন্য রানে আউট হয়েছেন তিনি। বড় একটা ইনিংস খেলার পর লম্বা সময় ধরে তার ব্যাট আবার লম্বা সময়ের জন্য নিস্প্রভ হয়ে যায়। বলা যায়, তিনি ধারাবাহিকভাবে অধারাবাহিক এক ব্যাটার!