দ্যা বোল্ড এন্ড বিউটিফুল!

দ্যা বোল্ড এন্ড বিউটিফুল!

গাজী আশরাফ হোসেন লিপু ভাই একদিন টিম কিভাবে সিলেকশন করা উচিত সেটা নিয়ে বলছিলেন কথা প্রসঙ্গে! উনি তখন বিসিবি'র বাইরে ছিলেন। বলছিলেন- প্রথমে একাদশ গড়লে কাজটা কিন্তু আর কঠিন থাকে না, বাকি চারজন নির্ধারণ করা সহজ হয়ে যায়! এখন নিশ্চয় আমরা বুঝতে পারছি লিপু ভাইয়ের ফর্মুলায় থাকলে দলে নিশ্চিতভাবেই চারজন ওপেনার কখনোই থাকে না! লিপু ভাইয়ের ক্রিকেট জ্ঞান, প্রজ্ঞা সবসময় আলোড়িত করে আমার মত ক্রিকেট না বোঝা অভাজনদের। সুন্দর ও সহজ করে খেলাটিকে বিশ্লেষণ ও বোঝানোর দারুণ এক ক্ষমতা আছে ওনার।

দেড় যুগ আগে এক সাংবাদিকের সঙ্গে সাংবাদিকতার তর্কে জিতেছিলেন উনি! আমি সেই অডিও রেকর্ড শুনেছিলাম! বিস্ময়ে অভিভূত হয়েছিলাম- উনি সাংবাদিক না হয়েও নিউজরুম বসের মত 'ডুজ এন্ড ডোন্ট' বিষয়ে বলছিলেন নিখুঁতভাবে! সেদিনই মেনে নিয়েছিলাম ক্রিকেটার না হয়ে সাংবাদিক হলেও নাম কামাতে পারতেন ভাই।

ক্যারিয়ারের শেষপ্রান্তেও ইনজুরি নিয়ে-রানার নিয়ে আবাহনীর হয়ে অনেক ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলেছেন লিপু ভাই। এরকম একটি ইনিংসের কমেন্ট্রি শুনেছিলাম ছোটবেলায়, যেখানে ধারাভাষ্যকাররা লিপু ভাইয়ের প্রশংসা করছিলেন- ম্যাচটা সম্ভবত ছিল মোহামেডানের বিপক্ষে। উনি দারুণ লড়াকু মেজাজ ও মনের মানুষ। লিডারশিপ ওনার সাথে যায়। জাতীয় দল ও আবাহনীর অধিনায়ক তো আর এমনিই হননি! ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দলের অধিনায়কও। লিপু ভাইয়ের কোচিংয়ে আবাহনী শিরোপাও জিতেছিল মনে হয়। মানে উনি দারুণ এক প্যাকেজ সে বিষয়ে কারোর কোন সন্দেহ নেই!

এই কথাগুলো পড়ার একটাই কারণ- শুধু দল দিয়েই কাজ শেষ হয়ে যায় না নির্বাচকদের। অ্যাকাউন্টেবিলিটি বাড়ানোর জন্য একাদশ নির্বাচনেও তাদের একটা ভূমিকা থাকা উচিত। যেটা অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধান নির্বাচক রডনি মার্শ করতেন! রডনি কোন এক সিরিজে উসমান খাজার জায়গায় অ্যারন ফিঞ্চকে সুযোগ দিয়ে সমালোচিত হয়েছিলেন, কিন্তু দিন শেষে সেটা আর কেউ মনে রাখেনি। কারণ অস্ট্রেলিয়া দলটির দূদর্মনীয় হয়ে ওঠার পেছনে বিশাল ভূমিকা ছিল তাঁর!

এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে- বাংলাদেশে তো প্রতিভার আকাল, এখানে তামিম ইকবাল-লিটন দাসদের বিকল্প কি আছে? সোজা বাংলায় উত্তর আসবে- 'নেই'! তাহলে কি নির্বাচকরা হ্যান্ডিক্যাপড হয়ে বসে থাকবেন? তাও তো সম্ভব না! আসলে বিড়ালের গলায় ঘণ্টাটা বাঁধতেই হবে, প্রসেস তো শুরু হলো? লিপু ভাই লিটনের বাদ পড়ার সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়েছেন, উনার কমিটির মিশন নিশ্চয়ই দলের বাকি ক্রিকেটারদের একটি বার্তা দিচ্ছে। দলের চেয়ে ব্যক্তি কখনো বড় হতে পারে না।

যোগরাজ সিং বুন্দেলকে মানুষ চেনে যুবরাজ সিং এর বাবা হিসেবে। অথচ এই যোগরাজ ছিলেন কপিল দেবের বন্ধু, তাঁর সময়ের অলরাউন্ডার। যাকে এক সময় বিবেচনা করা হতো কপিলের চেয়েও মেধাবী! অথচ কপিল সর্বকালের সেরাদের একজন, যোগরাজকে কেউ মনে রাখেনি! ক্রিকেটে কত মেধাবী ঝরে গেছে শৃঙ্খলার অভাবে, ফোকাসটা জরুরি। ক্রিকেটটা এখনো ভদ্রলোকের খেলা, রুচিকর শিক্ষা-দীক্ষার প্রভাব এর  আছে। লিপু ভাইরা এর ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর।

মোহাম্মদ মানজুর মোর্শেদ: সিনিয়র ক্রীড়া সাংবাদিক

সম্পর্কিত খবর