সব দিক থেকে ‘সমতায়’ বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা, ফয়সালা ফাইনালেই

সব দিক থেকে ‘সমতায়’ বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা, ফয়সালা ফাইনালেই

প্রথম ম্যাচ বাংলাদেশের, দ্বিতীয় ম্যাচে শেষ হাসি শ্রীলঙ্কার। সিরিজে এখন ১-১ সমতা। তাতেই শেষ ম্যাচটা হয়ে গেছে ‘ফাইনাল’। তবে এই সমতা অবশ্য শুধু জয়ের দিক থেকেই নয়। আরও অনেক দিক থেকেই। সিরিজে যে সমতা এখন বিরাজ করছে, ‘ফাইনালে’ তা ভাঙার চাবিকাঠি লুকিয়ে আছে জয় পরাজয়ের বাইরে বিরাজ করা ওই সমতা ভাঙাতেই।

দুই দল এমনিতেও এখন ক্রিকেট বিশ্বে সমান সমীহই আদায় করে। শ্রীলঙ্কা এখন আর প্রবল পরাক্রমশালী কেউ নয়, বাংলাদেশও এখন আর ওই অবজ্ঞার পাত্র নয়; বাংলাদেশের প্রমোশন আর শ্রীলঙ্কার ডিমোশন দুই দলকে এনে মিলিয়েছে এক বিন্দুতে। দুই দলের এই লড়াই আরও বহু কারণে পায় দক্ষিণ এশিয়ার নতুন ‘ডার্বি’র মর্যাদা।

এটা বহু পুরোনো আলাপ। তবে মাঠের ক্রিকেটেও তাদের আলাদা করে ফেলার সুযোগটা দুই দল দিয়েছে কোথায়? চলমান সিরিজেই দেখুন, কম করে হলেও তিনটা জায়গায় দুই দল মিলে গেছে হুবহু।

প্রথমটা ব্যাটিংয়ে। বিশেষ করে পাওয়ারপ্লের ব্যাটিং। ওপেনিং জুটিতে দুই দলই খাবি খেয়েছে বেশ। দুই ম্যাচে বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি ভেঙেছে রানের খাতা খোলার আগেই। শ্রীলঙ্কা অবশ্য এদিক থেকে এগিয়ে আছে বেশ। প্রথম ম্যাচে দলটার উদ্বোধনী জুটি ছিল ৭১ রানের। দ্বিতীয় ম্যাচে অবশ্য এক রান তুলতেই হাওয়া হয়ে যায় দলটার প্রথম উইকেট। বাংলাদেশে যেমন লিটন দাস ব্যর্থ ছিলেন, শ্রীলঙ্কার তেমন আভিষ্কা ফার্নান্দো।

বাংলাদেশ লিটনকে শেষ ওয়ানডের স্কোয়াড থেকে ছেঁটে ফেলে ওপেনিং ব্যর্থতার শেষ দেখার একটা পদক্ষেপ নিয়ে রেখেছে। শ্রীলঙ্কাও যে সে পথে হাঁটতে পিছপা হবে না, তার একটা নমুনা টি-টোয়েন্টি সিরিজেই দেখা গেছে। শেষ ম্যাচে আভিষ্কাকে ছাড়াই দল সাজিয়েছিল সফরকারীরা। সে সিদ্ধান্তের দেখা হয়তো শেষ ওয়ানডেতেও মিলতে পারে!

ইনিংসের শুরুর মতো ইনিংসের শেষটাও দুই দলের প্রায় এক! লেট অর্ডার প্রয়োজনের মুহূর্তে বড় রান এনে দিতে পারছে না, সেটা বাংলাদেশ হোক কিংবা শ্রীলঙ্কা, দুই দলকেই! প্রথম ম্যাচে লঙ্কান লোয়ার মিডল অর্ডার তা পারেনি, দ্বিতীয় ম্যাচে পারেননি বাংলাদেশের শেষের ব্যাটাররা।

বাংলাদেশ অবশ্য এক পরিবর্তনেই দুই সমস্যার সমাধান খুঁজতে চেয়েছে। লিটনের বদলে যাকে নেওয়া হয়েছে, সেই জাকের আলী অনিক টি-টোয়েন্টিতে ছিলেন সফল। এবার তাকে ওয়ানডে অভিষেক করিয়ে সেখানেও সাফল্যটা চায় ম্যানেজমেন্ট।

তবে ম্যাচে এই দুই জায়গায় দুই দল সফল নাকি ব্যর্থ হয়, তার ওপর নির্ভর করছে দলগুলোর নিয়তি। কারণ চট্টগ্রামের কালকের ম্যাচটা যে হবে পুরোপুরি দিনের আলোয়! শিশিরের সহায়তা থাকবে না, ব্যাটিংয়ের শক্তিটাই ভালোভাবে কাজে লাগাতে হবে দুই দলকে।

দুই ম্যাচে দুই দলের শক্তির জায়গা ছিল পেস বোলিং। প্রথম ম্যাচে লঙ্কানদের দারুণ শুরুর পর তানজিম হাসান সাকিবের দুর্দান্ত এক স্পেলে ম্যাচে ফিরে এসেছিল বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কা মূল বোলার দিলশান মাদুশঙ্কা প্রতি ম্যাচেই বাংলাদেশের টপ অর্ডারদের ফিরিয়ে কাজটা কঠিন করে তুলেছেন স্বাগতিকদের। শেষ ম্যাচের আগে নিজ নিজ দলকে আবারও এক বিন্দুতে এনে মিলিয়েছেন দুজনে। দুজনেই চোট নিয়ে বাদ পড়ে গেছেন সিরিজের শেষ ম্যাচ থেকে।

এক, দুই, তিন… দুই দলের মিল কম নেই ফাইনালের আগে। চার নম্বর, ও সবচেয়ে বড় মিলটা স্কোরলাইনে। যেখানে জ্বলজ্বল করছে ১-১ সমতা। এ সমতা যদি বাংলাদেশ ভাঙতে পারে, তাহলে আরও এক সমতা চলে আসবে দুই দলের মাঝে।

টি-টোয়েন্টি সিরিজে এমন পরিস্থিতি থেকে শেষ হাসিটা হেসেছিল শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশ যদি জিততে পারে তাহলে সিরিজ জয়ের আনন্দ তো থাকবেই, টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারের ওই ক্ষতে প্রলেপ পড়বে অনেকটা, তা হবে উপরি পাওনা। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তও নিশ্চিতভাবে তাই চাইবেন।

সম্পর্কিত খবর