রিশাদ ঝড়ে সিরিজ জয় বাংলাদেশের

রিশাদ ঝড়ে সিরিজ জয় বাংলাদেশের

জয় থেকে তখনও ৫৮ রান দূরে বাংলাদেশ। উইকেটে অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম থাকলেও শেষ স্বীকৃত ব্যাটার মিরাজকে ফিরিয়ে শ্রীলঙ্কা পেয়ে গেছে বাংলাদেশের লেজের দেখা। কি হয়; তাই নিয়ে ভেবে বাংলাদেশি সমর্থকদের কপালে চিন্তার ভাজ। উইকেটে আসলেন সিরিজ জুড়ে সুযোগের অপেক্ষায় থাকা রিশাদ হোসেন। টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটিংয়ে মুগ্ধতা ছাড়ানোয় রিশাদকে নিয়ে একটা আশা তো ছিলই।

সেই তিনি এবার দায়িত্ব নিলেন দলের সবচেয়ে কঠিন সময়ে। উইকেটে এসেই বিশাল ছক্কায় সীমানা ছাড়া করলেন লঙ্কানদের সেরা বোলার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে। ওই ওভারে আরও দুইবার হাসারাঙ্গাকে বাউন্ডারির বাইরে আছড়ে ফেললেন রিশাদ। এক ঝটকায় দূর হয়ে গেল শঙ্কার কালো মেঘ। পরের ওভারে মুশফিক কিছুটা সময় নিলেন। তবে রিশাদের যেন বড্ড তাড়া। পেয়ে গেলেন আরেকবার হাসারাঙ্গাকে। এক ওভারে ২ ছয় ও ৩ চারে তুললেন ২৪ রান।

বাংলাদেশ ম্যাচটা জিতে গেলে ৫৮ বল ও ৪ উইকেট হাতে রেখে। সঙ্গে সিরিজটাও ভাগিয়ে নিলো ২-১ ব্যবধানে। তাতে লঙ্কানদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি হারের শোধটাও নেওয়া হয়ে গেল বাংলাদেশের। এরপরও একটা আক্ষেপ তো রয়ে গেলই। কেননা, ওয়ানডেতে দ্রুততম ফিফটির পথেই যে ছিলেন রিশাদ। ১৮ বলে ৪৮ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। আর হয়তো ১টি বল খেলতে পারলেই মোহাম্মদ আশরাফুলের করা ২১ বলে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ডটিও নিজের করে ফেলতে পারতেন তিনি।

এদিন অবশ্য বাংলাদেশের জয়ের মঞ্চটা প্রস্তুত করে রেখে গিয়েছিল বোলাররাই। শুরুতে ব্যাট করতে নামা লঙ্কানদের আটকে দিয়েছিল মাত্র ১৩৫ রানে। যেই কৃতিত্বটা অবশ্য বোলারদের। নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে শুরু থেকেই লঙ্কান ব্যাটারদের চাপে ফেলেছে বাংলাদেশ। তাসকিন-শরিফুল-মুস্তাফিজের সঙ্গে লঙ্কানদের রানে লাগাম টানায় ভূমিকা রেখেছেন মেহেদী মিরাজ ও রিশাদ হোসেনরা।

মাঝে অবশ্য বেশ ভুগিয়েছে জানিথ লিয়ানাগে। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন তিনি। পেয়েছেন ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির দেখাও। তার ব্যাটিং নৈপুণ্যেই ২৩৫ রানের চ্যালেঞ্জিং পুঁজি পেয়েছিল লঙ্কানরা।

লঙ্কানদের জবাব দিতে আসে বাংলাদেশের নতুন ওপেনিং জুটি এনামুল হক বিজয় ও তানজিদ হাসান তামিম। তানজিদ অবশ্য সুযোগ পেয়েছেন সৌম্য সরকার ফিল্ডিংয়ের সময় ঘাড়ে আঘাত পাওয়ায়। সুযোগটা সৌভাগ্যক্রমে পেলেও কাজে লাগাতে ভুল করেননি তানজিদ। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনিই। খেলেছেন ৮১ বলে ৮৪ রানের ইনিংস।

লম্বা সময় বাংলাদেশকে লক্ষ্যে রেখেছিলেন তানজিদ। এই ব্যাটার ফিরলে তাই খানিকটা চাপেই পড়ে যায় বাংলাদেশ। এরপর মিরাজকে নিয়ে দলকে টানেন মুশফিক। দু’জনেই বাংলাদেশকে জয়ের পথে রাখছিলেন। তবে মিরাজ ২৫ রানে ফিরলে ফের বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। তবে সেই বিপদ বাড়তে দেননি রিশাদ। পাল্টা আক্রমণে দ্রুত দলকে জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছেন এই ব্যাটার। শেষ দিকে লঙ্কান বোলারদের বিশেষ করে হাসারাঙ্গার ওপর সুনামি বইয়ে দিয়েছেন রিশাদ। করেছেন ১৮ বলে ৪৮ রান। যেখানে ৪টি ছয় ও ৫টি চারের মার রয়েছে।

সংক্ষিপ্ত স্কোরকার্ড:
শ্রীলঙ্কা: ২৩৫; (আসালাঙ্কা ৩৭, লিয়ানাগে ১০১*; তাসকিন ৩/৪২, মুস্তাফিজ ২/৩৯, মিরাজ ২/৩৮)
বাংলাদেশ: ২৩৭/৬; (তানজিদ ৮৪, মুশফিক ৩৭*, রিশাদ ৪৮*; লাহিরু ৪/৪৮, হাসারাঙ্গা ২/৬৪)
ফল: বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: ২-১ ব্যবধানে বাংলাদেশ জয়ী।
প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ: রিশাদ হোসেন
প্লেয়ার অফ দ্য সিরিজ: নাজমুল হোসেন শান্ত (১৬৩ রান)

সম্পর্কিত খবর