‘আশায় আছি পয়েন্ট নিয়ে ফিরবে বাংলাদেশ’
২১ মার্চ গভীর রাতে ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপ বাছাই ম্যাচে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। ম্যাচটি হবে কুয়েতে। এই ম্যাচের জন্য সপ্তাহ দুয়েক ধরে সৌদি আরবে অনুশীলনে ছিল বাংলাদেশ। সেখানে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলেছে সুদানের বিরুদ্ধে। ফিলিস্তিন ম্যাচের জন্য কেমন প্রস্তুত বাংলাদেশ দল? দলের শক্তি বা দুর্বলতা কোথায়? ঠিক কেমন ফল আশা করছে বাংলাদেশ এই ম্যাচ থেকে সেসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম এই লেখায়।-
ভালো একটা অবস্থায় রয়েছে এখন আমাদের পুরো দল। ঘরোয়া লিগের একটা পর্ব খেলোয়াড়রা শেষ করেছে। রিকভারিও হয়ে গেল। ট্রেনিং সেশনের জন্য দেশের বাইরে বেশ কিছুদিন ব্যস্ত রইলো তারা। আশা করছি ফিটনেস নিয়ে খেলোয়াড়দের কোনো সমস্যা থাকবে না। ভালো ঝরঝরে ফিটনেস নিয়ে তারা ফিলিস্তিনের মোকাবেলা করবে। এক অর্থে এই ম্যাচটা দু’দলের জন্যই অ্যাওয়ে ম্যাচ। ফিলিস্তিন তো নিজের মাটিতে খেলতে পারে না। তাই তারা এই ম্যাচ খেলছে কুয়েতে। বাংলাদেশের মতো ফিলিস্তিনের জন্যও এটি ‘বিদেশ’। সেই বিবেচনায় ভেন্যুর সুবিধা হিসেবে আনলে দু’দলের জন্য হিসেবটা সমান সমান। খেলোয়াড়দের ফিটনেস, আমাদের পর্যাপ্ত ট্রেনিং, এই ম্যাচের আগে যথাযথ প্রস্তুতি, আত্মবিশ্বাস-সবকিছু মিলিয়ে ২১ মার্চের রাতের এই ম্যাচের জন্য বাংলাদেশ দল বেশ ভালো অবস্থানে আছে বলে আমার বিশ্বাস। একটা ভালো ম্যাচ বাংলাদেশ আমাদের উপহার দিতে পারবে সেই অপেক্ষায় আছি।
মধ্যপ্রাচ্যের কন্ডিশনের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ দল দু’সপ্তাহ আগে থেকে এই আবহাওয়ায় অনুশীলন করেছে। প্রস্তুতি ম্যাচও খেলেছে। কোচ হাবিয়ের কাবরেরাও দলের সার্বিক প্রস্তুতিতে সন্তুষ্ট দেখলাম। এখন খেলোয়াড়দের কাজ হলো পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলা এবং নিজেদের সেরা পারফর্মেন্স প্রদর্শন করা। ফিলিস্তিন খুব ভালো দল। এশিয়া কাপের সেরা পারফর্মার তারা। আমাদের কোচিং স্টাফরা নিশ্চয়ই এই দলের খেলাগুলো ভালোভাবে বিশ্লেষণ করেছেন। নিজেদের শক্তিমত্তা ও দুর্বলতা কোথায়-সেটাও নির্দেশ করেছেন। নিজেদের শক্তিমত্তার সঙ্গে বাস্তবতার প্রয়োগ-এই সমীকরণের সূত্র মেনেই হয়তো তারা এই ম্যাচের জন্য কার্যকর পরিকল্পনা করছেন। খেলোয়াড়দের কাজ হলো সেই পরিকল্পনা যথাযথভাবে সফল করা।
এই ম্যাচের জন্য বাংলাদেশের কি পরিকল্পনা নেওয়া উচিত সেই প্রশ্নের উত্তরে আমি বলবো-আমাদের ডিফেন্ডিং জোনে ফিলিস্তিনকে বেশি সুযোগ দেওয়া যাবে না। তারা যেন আমাদের সীমানায় বল পায়ে জায়গা তৈরি করতে না পারে। সুযোগ বুঝে আমাদের পাল্টা আক্রমণ চালাতে হবে। রাকিব-ফাহিমের পারফরমেন্সের দিকে আমি তাকিয়ে রয়েছি। শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচে তারা দুজনেই ভুল করেছে। আমি দেখতে চাই কত দ্রুত তারা সেই ভুল থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। এই ম্যাচেই তারা সেই ভুল সমাধানের সুযোগ পাচ্ছে। ডিফেন্সে তারেক কাজীকে আমরা পাচ্ছি না এই ম্যাচে। মোরসালিনকেও আমরা মিস করছি ইনজুরি কারণে। গোলকিপার আনিসুর রহমান জিকো ভালো ফর্মে আছে। আপনি অনুশীলন বা প্রস্তুতি ম্যাচে কি করলেন সেটা আমলে আসবে না যদি আসল ম্যাচে মাঠের পারফরমেন্সে ব্যর্থ হন। এই ম্যাচে খেলোয়াড়রা আমাদের নিরাশ করবে না-আমি সেই প্রত্যাশা নিয়ে আছি। মাঠে যদি দলের সবাই নিজেদের শতভাগ পারফরমেন্স দিতে পারে তাহলে ফল আমাদের পক্ষেই থাকবে। জয় অথবা ড্র-এই দুটোর একটার অপেক্ষায় আছি আমি।
প্রথমবারের মতো জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছে এবার বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়। কাজিন, তাজ ও রুহুল এই নতুনদের কেউ যদি একাদশে জায়গা পায় তবে নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করার একটা ভালো সুযোগ রয়েছে তাদের সামনে।
প্রতিপক্ষ ফিলিস্তিন অনেক শক্তিশালী দল। সেই বাস্তবতাও আমাদের মানতে হবে। এশিয়ান কাপের শেষ ষোলতে খেলেছে তারা। কাতারের বিরুদ্ধে ২-১ গোলে হেরে তারা এশিয়ান কাপ থেকে বিদায় নিয়েছে। বাংলাদেশের তুলনায় দল হিসেবে শক্তির তুলনায় ফিলিস্তিন অনেক এগিয়ে। খেলার কৌশল, সাম্প্রতিক ফল, ফিটনেস, ফর্ম, র্যাঙ্কিং-সবদিক থেকেই ফিলিস্তিন এগিয়ে রয়েছে বেশ কয়েকধাপ। এমন দলের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের প্রাথমিক কৌশলটা হবে ডিফেন্ডিং কাম কাউন্টার অ্যাটাক মেজাজের ফুটবল। সুযোগ এলে সেটাকে কাজে লাগাতে হবে। তবে সবার আগে ডিফেন্সকে আঁটসাঁট রাখতে হবে। ফিলিস্তিন যেন আমাদের সীমানায় রাজত্ব করতে না পারে- সেদিকে নজর দিতে হবে। ফিলিস্তিনের এই দলটির বিরুদ্ধে আমরা আগেও খেলেছি। আমাদের সঙ্গে তাদের খুব বেশি বড় কোনো পার্থক্য যে রয়েছে সেটা মানতে আমি রাজি নই। আমরা যদি নিজেদের পরিকল্পনা অনুযায়ী নিজেদের খেলাটা খেলতে পারি তাহলে অবশ্যই এই ম্যাচ থেকে পয়েন্ট নিয়ে ফিরতে পারবো।
# মামুনুল ইসলাম, জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক