অভিজ্ঞতা বনাম তারুণ্যের লড়াই; শেষ হাসি কার?
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হার। এরপর একই ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ জয় বাংলাদেশের। দুটি সিরিজ শেষে দু’দলের অবস্থানটা তাই সমতার। সেই সমতা পেছনে ঠেলে দু’দলের সামনেই এবার এগিয়ে যাওয়ার লড়াই। সেই লড়াইয়ে আগামীকাল সিলেটে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথমটিতে মাঠে নামবে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা। যেখানে দু’দলই মুখিয়ে একে অন্যকে হারিয়ে লঙ্কা-বাংলার দ্বৈরথে এগিয়ে যেতে।
টেস্টে অবশ্য শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দীর্ঘদিন জয় নেই বাংলাদেশের। সবশেষ ২০১৭ সালে কলম্বো টেস্টে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর থেকে দু’বার ড্র করলেও জয় মেলেনি বাংলাদেশের। বিপরীতে হারতে হয়েছে তিনটি টেস্টে। দু’দলের সবশেষ দেখায়ও মিরপুরে ১০ উইকেটে লঙ্কানদের বিপক্ষে হারতে হয়েছে বাংলাদেশকে।
এরপরও লঙ্কানদের চেয়ে এ দফায় এগিয়ে থেকেই মাঠে নামবে বাংলাদেশ। কেননা, ২০২৩-২৫ বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্রের পয়েন্ট টেবিলের খাতা এরইমধ্যে খুলে ফেলেছে বাংলাদেশ। এই মাঠেই নিউজিল্যান্ডের মতো শক্তিশালী দলকে কদিন আগেই নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। অন্যদিকে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্রে এখনও পয়েন্টের খাতা খুলতে পারেনি লঙ্কানরা। তাই লঙ্কানদের চেয়ে কিছুটা হলেও এগিয়ে থেকেই মাঠে নামার কথা বাংলাদেশের।
তবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার কারণ। লঙ্কানদের বিপক্ষে সবচেয়ে সফল অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমকে না পাওয়া। আঙুলে চিড় ধরায় এই সিরিজে মুশফিককে পাচ্ছে না বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে এই সিরিজেই প্রথমবারের মতো সাকিব, তামিম, মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকের মতো অভিজ্ঞ তারকা ক্রিকেটারকে ছাড়ায় মাঠে নামবে বাংলাদেশ। এছাড়াও তাসকিন থাকছেন না টেস্টে। তাই এই দুই জায়গায় দেখা যেতে পারে দুই নতুন মুখ। অভিষেক হতে পারে তাওহিদ হৃদয় ও তরুণ পেসার নাহিদ রানার।
চোট সমস্যা আছে লঙ্কান শিবিরেও। দলটি এই সিরিজে পাচ্ছে না বাংলাদেশের বিপক্ষে অন্যতম সফল বোলার আসিথা ফার্নান্দোকে। দেশটির হয়ে ২০২২ সালে ১৩ উইকেট শিকার করেছিলেন ফার্নান্দো। তবে ফার্নান্দো না থাকলেও লঙ্কানদের স্কোয়াড অভিজ্ঞতায় পূর্ণ। অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস, দিনেশ চান্দিমাল এবং দিমুথ করুনারত্নের সমান টেস্টই এখন পর্যন্ত খেলেনি বাংলাদেশ। বাংলাদেশ দলের ২৭১টি টেস্ট ম্যাচের বিপরীতে এই তিন ক্রিকেটার মিলেই খেলে ফেলেছেন ২৭৩ টি টেস্ট।
বাংলাদেশকে আশাবাদী করছে অধিনায়ক শান্তর দুর্দান্ত ফর্ম। সবশেষ খেলা ৬ টেস্ট ইনিংসে তিনটি শতক তার। এছাড়াও লঙ্কানদের বিপক্ষে সবশেষ ওয়ানডে সিরিজেও সিরিজসেরার পুরস্কার জিতেছেন তিনি। এছাড়াও ৫০টি টেস্ট খেলা মুমিনুল মিডল অর্ডারে বাড়তি দায়িত্ব রাখতে পারে। অন্যদিকে অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা নাহিদ রানা গতির ঝড় তুলে বিপদে ফেলতে পারে লঙ্কানদের।
শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং অর্ডার অবশ্য কমবেশি স্থির। বোলিং নিয়ে কিছুটা সমস্যা আছে বটে। তবে নিজের দিনে সব ছাপিয়ে নজরটা নিজের দিকে টানতে পারেন বাঁহাতি স্পিনার প্রবাথ জয়সুরিয়া। সবশেষ আট টেস্টে ৬৩ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। বাংলাদেশ দলের জন্যও যা ভাবনার কারণ হতে চলেছে। এছাড়াও লঙ্কান পেসাররা হুমকি হয়ে উঠতে পারেন বাংলাদেশি ব্যাটারদের জন্য।
তবে একাদশ সাজানোর আগে দু’দলকেই ভাবতে হচ্ছে সিলেটের আবহাওয়া নিয়ে। কেননা, সিলেটের উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য আদর্শ হলেও এবার উইকেটে কিছুটা সবুজ আভা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এছাড়াও ম্যাচে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তাই দু’দলের জন্যই টস হতে পারে ম্যাচে এগিয়ে থাকার অন্যতম হাতিয়ার।
বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ: জাকির হাসান, মাহমুদুল হাসান জয়, নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), মমিনুল হক, তৌহিদ হৃদয়, লিটন দাস (উইকেটরক্ষক), শাহাদাত হোসেন দিপু, মেহেদি হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম, নাহিদ রানা।
শ্রীলঙ্কার সম্ভাব্য একাদশ: দিমুথ করুনারত্নে, নিশান মাদুশকা, কুশল মেন্ডিস, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস, দিনেশ চান্দিমাল, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা (অধিনায়ক), সাদিরা সামারাবিক্রমা (উইকেটরক্ষক), রমেশ মেন্ডিস, প্রবাথ জয়সুরিয়া, কাসুন রাজিথা, বিশ্ব ফার্নান্দো।