সকালটাই শুধু বাংলাদেশের, বাকি দিন শ্রীলঙ্কার
সকালের শুরুতে ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। সেই ধাক্কা কিছুটা সামলে উঠে তারা। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৩৭ রান যোগ করলো সফরকারীরা। কিন্তু দলীয় ৪০ রানে দ্বিতীয় উইকেটের পতন হতেই আরেকবার ধস। মাত্র ১৭ রান যোগ করে হারায় আরো ৪ উইকেট। স্কোরবোর্ডে জমা তখন মাত্র ৫৭ রান। উইকেট নেই পাঁচটি। খেলা হয়েছে মাত্র ১৭ ওভারের। সকালের সূর্যের আলো তখনো নরম রোদ ছড়াচ্ছে। কিন্তু ৫৭ রানে শুরুর পাঁচ উইকেট হারিয়ে শ্রীলঙ্কার ইনিংস যে দিশেহারা। পেসার খালেদ আহমেদ তার ওপেনিং স্পেলে আগুন ঝরান। শিকার করেন ৩ উইকেট। চান্দিমালের উইকেট তুলে নেন আরেক পেসার শরিফুল ইসলাম। অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস ফিরলেন শান্তর ডাইরেক্ট থ্রোতে রান আউট হয়ে।
কিন্তু সকালের এই বিপদ দারুণ দক্ষতার সঙ্গে দিনের দ্বিতীয়ভাগে কাটিয়ে উঠলো শ্রীলঙ্কা। অধিনায়ক ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ও কামিন্দু মেন্ডিসের ব্যাট শ্রীলঙ্কার ড্রেসিংরুমকে স্বস্তি দিল। দুজনেই সেঞ্চুরি করলেন। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে তাদের যোগ করা ২০২ রান শ্রীলঙ্কাকে সকালের সেশনের চরম বিপদ থেকে উদ্ধার করলো। ইনিংস শেষ হলো তাদের ২৮০ রানে।
৫৭ রানে ৫ উইকেট হারানো দলের জন্য এরচেয়ে ভালো স্বস্তি আর কি হতে পারে? ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে শ্রীলঙ্কা যোগ করে ২০২ রান। দুই সেঞ্চুরিয়ানের জুটি ভাঙ্গার পরের ২১ রানের মধ্যে অলআউট শ্রীলঙ্কা! ব্যাটিং এর মত বোলিংয়ে ও দিনটা দুর্দান্ত কাটে শ্রীলংকার। ৩২ রানে বাংলাদেশের তিন উইকেট তুলে নেয় সফরকারীরা। শ্রীলঙ্কার ২৮০ রানকে এখন বাংলাদেশের অনেক দূরের পথ মনে হচ্ছে।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সবুজ উইকেটের ছবিটাই জানান দিচ্ছিল এখানে পেস বোলারদের জন্য ‘অনেককিছু’ আছে। সকালে টস জয়ী বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত তাই বোলিং বেছে নিতে ভুল করলেন না। শুরুর বোলিংয়ে পেসাররা অধিনায়কের এই সিদ্ধান্তকে যথার্থ বলে প্রমাণ করলেন। খালেদ আহমেদ পেস সহায়ক উইকেটের যথাযথ ব্যবহার করে সকালের সেশনে বোলিংয়ে সেরা পারফর্মার।
৯২ রানে ৫ উইকেট নিয়ে শ্রীলঙ্কা লাঞ্চে যায়। উইকেট পতনের এই সংখ্যাটা ছয়ও হতে পারতো। কিন্তু স্লিপে শরিফুলের বলে মাহমুদুল হাসান জয় নতুন ব্যাটার কামিন্দু মেন্ডিসের ক্যাচটা রাখতে পারলেন না যে! কামিন্দু মেন্ডিসের রান ছিল তখন শূন্য। সেই কামিন্দু যখন দিনের শেষ সেশনে আউট হলেন তখন তার রান ১০২। শূন্য রানে জীবন পেয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি হাঁকালেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। কোনো ধরনের ঠুকঠুক ব্যাটিংয়ের দিকে গেলেন না কামিন্দু। পাল্টা আক্রমণ চালালেন। পুরোদুস্তর ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাটিং করে দলকে বিপদের গর্ত থেকে উদ্ধার করলেন।
অন্যপ্রান্তে অধিনায়ক ধনঞ্জয়া ডি সিলভাও ক্রমশ সহজ হয়ে আসা উইকেটে যেন গেঁথে গেলেন। কামিন্দু ও ধনঞ্জয়ার ব্যাটিংয়ের সময়টা এই ইনিংসে শ্রীলঙ্কার সেরা সময়। দল বিপদে পড়লে কিভাবে উদ্ধারকাজ চালাতে হয়- তারই দৃষ্টান্ত তৈরি করলেন এই দুই ব্যাটার।
সকালের শুরুর দেড়ঘণ্টার মধ্যে উইকেট কিছুটা থিতু হয়ে পড়লে কামিন্দু ও ধনঞ্জয়ার জন্য ব্যাটিং করাটা আরো সহজ হয়ে যায়। অবশ্য এই সময়ে বাংলাদেশের পেসাররা ভুল লাইন লেন্থে বল করে শ্রীলঙ্কার এই দুই ব্যাটারের ব্যাটিং আরো সহজ করে দেন। বল খানিকটা নরম হয়ে এলে উইকেটে মুভমেন্টও আর পেলেন না পেসাররা। নিরাপদ কায়দায় ব্যাটিং করে শ্রীলঙ্কা সকালের কঠিন বিপদ কাটিয়ে ঝলমলে দুপুর উপহার দিলো।
লাঞ্চ থেকে চা বিরতি-এই সেশনে কোনো উইকেটই পড়লো না। এরই মধ্যে কামিন্দু মেন্ডিস ও ধনঞ্জয়া দুজনের ব্যাটেই সেঞ্চুরির স্বপ্ন ছড়ায়। দিনের শেষ সেশনে সেঞ্চুরির আনন্দে ভাসেন কামিন্দু মেন্ডিস। ৩ ছক্কা ও ১১ বাউন্ডারিতে ১২৭ বলে ১০২ রান করে আউট হন তিনি। তার আউটের খানিকবাদেই নিজের সেঞ্চুরিও পুরো করেন ধনঞ্জয়া। তবে বাংলাদেশ রিভিউ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে ৯৫ রানে ফিরতে হতে তাকে। তাইজুলের বলে এলবির আপিল উঠে তার বিরুদ্ধে। আম্পায়ার না বলেন। উইকেটকিপার লিটন দাস রিভিউ নিতে অধিনায়ককেও নিরুৎসাহিত করেন। অথচ রিপ্লেতে দেখা যায় থ্রি রেড। রিভিউ’র আবেদন করলেই ধনঞ্জয়ার সেঞ্চুরি মিস হতো। কামিন্দু মেন্ডিসের মতো ধনঞ্জয়াও ঠিক ১০২ রান করে ফিরেন। এবং শ্রীলঙ্কার এই দুই সেঞ্চুরিয়ানের উইকেট শিকারিও একজনই-নাহিদ রানা।
তিন উইকেট নিয়ে নিজের টেস্ট অভিষেক স্মরণীয় করে রাখলেন বাংলাদেশি এই পেসার। প্রথম স্পেলটা তার ভালো যায়নি। ৮ ওভারে খরচা করেন ৫৮ রান। কিন্তু দিনের শেষ সেশনে জ্বলে উঠেন।
এই টেস্টের উইকেটে ভালো রান আছে। সকাল বাদে শ্রীলঙ্কার বাকি দুই সেশনের ব্যাটিং সেই প্রমাণই রাখলো।
সংক্ষিপ্ত স্কোরকার্ড:
শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংস: ২৮০/১০ (৬৮ ওভারে, ধনঞ্জয়া ১০২, কামিন্দু ডি সিলভা ১০২, খালেদ ৩/৭২, নাহিদ রানা ৩/৮৭)।
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৩২/৩।