বোলারদের দিন শেষে সিলেটে এগিয়ে শ্রীলঙ্কাই
সিলেট টেস্টে কৃতিত্ব দেখাচ্ছেন বোলাররা। শ্রীলঙ্কার ২৮০ রানের জবাবে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস থেমে যায় ১৮৮ রানে। ৯২ রানে এগিয়ে থাকা শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয়দিন শেষে তুলেছে ৫ উইকেটে ১১৯ রান। ম্যাচে লিড তাদের এখন ২১১ রানের।
দু’দিনের খেলায় সবমিলিয়ে সেঞ্চুরি হয়েছে দুটি। কিন্তু দুই দলের উইকেট পতনের যোগফল বোলারদের কৃতিত্বের কথাই বেশি জানাচ্ছে। এখন পর্যন্ত এই টেস্টে উইকেট পড়েছে ২৫টি। দ্বিতীয় ইনিংসে শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং লাইন আপে শুরুতে ভয় ধরিয়ে দেন পেসার নাহিদ রানা। শ্রীলঙ্কার ৫ উইকেটের মধ্যে দুটিই শিকার তিনি। প্রথম ইনিংসের তিন উইকেট মিলিয়ে এই টেস্টে এখন পর্যন্ত তার শিকার সংখ্যা ৫টি।
ম্যাচের দুদিন না যেতেই তৃতীয় ইনিংস শুরু হয়ে গেছে। নিশ্চিতভাবে এই টেস্ট যে পঞ্চম দিনে গড়াচ্ছে না- সেই বাজিটা আপনি লাগিয়ে ফেলতেই পারেন! তবে জিতবে কে-সেজন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে আরো কয়েকটা সেশন।
শ্রীলঙ্কা ২১১ রানের লিড পেলেও এখনো এই ম্যাচ থেকে বাংলাদেশ হারিয়ে যায়নি। লিড যাতে তিনশ’র ওপর না যায়- সেই পরিকল্পনা কষতে জোরদার চেষ্টা চালাচ্ছে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসের মতো শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় ইনিংসেও বাংলাদেশের বোলাররাই দাপট দেখিয়েছেন। দ্বিতীয় ইনিংসের ২০ ওভারের মধ্যে শ্রীলঙ্কা ৬৪ রান তুলতেই শুরুর ৪ উইকেট হারিয়ে বসে। শ্রীলঙ্কার এই ইনিংস এখন কোথায় এবং কতদূরে গিয়ে থামে, তারই ওপর নির্ভর করছে সিলেট টেস্টে বাংলাদেশের ভাগ্য।
দ্বিতীয় দিনের সকালের প্রথম সেশনে বাংলাদেশের ব্যাটিং সুখকর কিছু ছিল না। সকালের সেশনে আরো তিন উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ ৮৩ রানে ৫ উইকেট হারানো দলে পরিণত হয়।
তা সত্ত্বেও শেষমেশ দলের সঞ্চয় ১৮৮ রান। শুরুর সঙ্গে শেষের হিসেব মেলালে সিলেট টেস্টে নিজেদের প্রথম ইনিংসের ব্যাটিং নিয়ে কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতেই পারে বাংলাদেশ। ব্যাটিং করাই মূলত যাদের মূল কাজ- সেই ব্যাটাররা প্রথম ইনিংসে ব্যর্থ। রান যা করার তা করেছেন দলের বোলাররা। বোলারদের কৃতিত্বেই প্রথম ইনিংসে রানের ব্যবধানে অনেক কমিয়েছে বাংলাদেশ। তারপরও শ্রীলঙ্কার চেয়ে ৯২ রানে পিছিয়ে থেকে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস শেষ করে।
দ্বিতীয় দিনের সকালেই তিন উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ম্যাচের নিজের প্রথম বলেই শ্রীলঙ্কার পেসার লাহিরু কুমার উইকেট শিকার করেন। আগেরদিনের অপরাজিত ব্যাটার মাহমুদুল হাসান জয় স্লিপে ক্যাচ তুলে ফিরেন। শাহাদাত হোসেন দিপুও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। তিনিও স্লিপ কর্ডনে ক্যাচ দিয়ে এলেন। লিটন দাস অনেকদিন পরে টেস্ট খেলতে নেমে শুরুটা ভালোই করেছিলেন। কিন্তু দলের প্রয়োজনের সময় ইনিংসটা লম্বা করতে পারলেন না। কুমারার সুইংয়ের কাছে হার মানেন লিটন। ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে বল তার স্টাম্প উপড়ে দেয়। একপ্রান্ত আঁকড়ে রেখে নাইট ওয়াচম্যান তাইজুল লড়াই চালিয়ে যান বলেই প্রথম ইনিংসে ব্যবধান কিছুটা কমিয়ে আনে বাংলাদেশ। মেহেদি মিরাজও দলের বাকি ব্যাটারদের মতো প্রথম ইনিংসে ব্যর্থ।
বাংলাদেশের স্কোর ১৮৮ রানে পৌছায় সেজন্য ধন্যবাদটা শেষের দিকে দুই বোলার খালেদ আহমেদ ও শরিফুল ইসলামের পাওনা। দুজনে নবম উইকেট জুটিতে ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাট চালান। যোগ করেন ৪০ রান। তাও আবার মাত্র ৫.৩ ওভারে, ৭ এর ওপরে রানরেটে। স্পিনার প্রবাথ জয়সুরিয়ার ওপর তারা একটু বেশি ক্ষ্যাপা ছিলেন মনে হলো। জয়সুরিয়ার এক ওভার থেকে তারা তিন ছক্কায় আদায় করেন ১৯ রান।
শরিফুল ফিরেন ২১ বলে ১৫ রান তুলে। খালেদ আহমেদের ব্যাট থেকে বাংলাদেশ পায় ২৮ বলে ২২ রান। তাইজুল ইসলামের ৪৭ রান এই ইনিংসে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর। শুধু রানই নয়, সবচেয়ে বেশি ৮০ বলও খেলেন তাইজুল।
-কি বুঝলেন?
ব্যাটারদের কাজ করেছেন মূলত দলের বোলাররা!
শ্রীলঙ্কার ২৮০ রানের জবাব দিতে নেমে বাংলাদেশ প্রথমদিনের শেষ বিকালে ৩২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বসে। দ্বিতীয়দিনের সকালের শুরুতেও আরো দুই উইকেট হারায়। একশ রানের মধ্যে পাঁচ উইকেট হারানো বাংলাদেশ এখন কাঁধে চেপে বসা বিপদ কাটিয়ে কতদুর যেতে পারে সেটাই দেখার বিষয় ছিল। তাইজুল ও লিটন দাসের ব্যাটিং ভরসা দিচ্ছিল। কিন্তু লাঞ্চ ব্রেকের আগেভাগে লিটন দাস ২৫ রান করে বোল্ড হলেন। দলের জেনুইন ব্যাটারদের কেউ টিকতে পারেননি। অথচ এমন বিপদে পড়ে শ্রীলঙ্কা ঠিকই মাত্র একটা জুটি গড়েই প্রথম ইনিংসে ২৮০ রান করে।
উইকেটে গেঁথে থাকলে সিলেটের এই উইকেটে যে রান করা যায়-তার প্রমাণ দিয়েছেন তাইজুল ইসলাম। ব্যাটিং দক্ষতার ভালো একটা উদাহরণ রেখেছেন তিনি। মূলত বোলার হিসেবে খেলেন। কিন্তু যখনই ব্যাটিংয়ের দায়িত্ব কাঁধে চাপে, পরিপূর্ণভাবে তা পালনের চেষ্টা করেন। সিলেট টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে সেরা ব্যাটার তাইজুল ইসলামই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: (দ্বিতীয় দিন)
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ২৮০ ও ১১৯/৫, ৩৬ ওভার (করুনারত্নে ৫২; নাহিদ ২/৪২)
বাংলাদেশ ১ম ইনি: ১৮৮, ৫১.৩ ওভার (তাইজুল ৪৭; বিশ্ব ৪/৪৮)