কত দ্রুত হারা যায়, সেটাই করে দেখাচ্ছে বাংলাদেশ!
সিলেট টেস্টে এখন একটাই প্রশ্ন, একটাই খোঁজ-এই ম্যাচ কত রানে হারছে বাংলাদেশ এবং কবে?
ম্যাচের দুদিন বাকি আছে। ‘জয়ের’ জন্য বাংলাদেশের চাই আরো ৪৬৪ রান। জয় শব্দটা কেন কোট আনকোটের মধ্যে রাখা হয়েছে সেটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। কারণ ম্যাচ পরিস্থিতি জানাচ্ছে এখানে এখন একটা দলই জিততে পারে। দলটা শ্রীলঙ্কা। নিজ উঠানো পরিচিতি আঙ্গিনায় বাংলাদেশ তৃতীয় দিন পর্যন্ত ব্যাটে-বলে যে সস্তামানের ক্রিকেট খেললো, ও দিয়ে টেস্ট জেতা তো দূরের কথা; ম্যাচ বাঁচানো বা ড্র করাও যায় না।
এই টেস্টে বাংলাদেশের সঙ্গে পার্থক্যটা কোথায় সেটা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন শ্রীলঙ্কার দুজন ব্যাটার- ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ও কামিন্দু মেন্ডিস। দুজনেই যা করলেন সেটা অনন্য কীর্তি। দুজনেই উভয় ইনিংসে দলকে বিপদ থেকে উদ্ধার করে এমন জায়গায় পৌঁছে দিয়েছেন যেখান থেকে জয় এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। দুজনেই দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করেছেন।
শ্রীলঙ্কার হয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে টেস্ট ম্যাচে এমন কীর্তি এর আগে ছিল মাত্র দুজনের। কুমার সাঙ্গাকারা ও দিলশান তিলকরত্নের সেই কীর্তির পাশে এখন বসে গেলেন ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ও কামিন্দু মেন্ডিস। টেস্ট ইতিহাসে তৃতীয়বারের মতো নির্দিষ্ট দুই ব্যাটার কোনো এক ম্যাচের উভয় ইনিংসে সেঞ্চুরির নজির গড়লেন।
এই ম্যাচের নাম বদলে এখন বাংলাদেশ বনাম ধনাঞ্জয়া-মেন্ডিস আপনি রাখতেই পারেন! প্রথম ইনিংসে দল যখন ৫৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল তখন হাল ধরেন এই দুজন। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে তারা যোগ করেন ২০২ রান। শ্রীলঙ্কা থামে ২৮০ রানে। দুজনেই সেঞ্চুরি করেন। তাও আবার একেবারের সমান সমান সংখ্যায়, ১০২ করে!
দ্বিতীয় ইনিংসে ১২৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে আরেকবার বিপদে পড়ে সফরকারিরা। ফের উদ্ধারকর্তা সেই দুজনই। সপ্তম উইকেট জুটিতে এবার তারা গড়লেন ১৭৩ রান। দুজনেই যথারীতি এবারো সেঞ্চুরি। ধনঞ্জয়া করলেন ১০৮ রান। আর দলের শেষ ব্যাটার হিসেবে কামিন্দু মেন্ডিস যখন ফিরলেন তখন তার নামের পাশে জ্বলজ্বল করছে ২৩৭ বলে ১৬৪ রানের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস।
এই দুজনের সেঞ্চুরির সুবাদে শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় ইনিংস শেষ হয় ৪১৮ রানে। ম্যাচ জিততে বাংলাদেশের সামনে টার্গেট দাড়ায় ৫১১ রানের। শেষ ইনিংসে এত রান তাড়া করে ম্যাচ জেতার কোনো রেকর্ড কারো নেই। তৃতীয়দিনের শেষ বিকেলে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসের যে ছিন্নভিন্ন চেহারা দাড়ায় তাতে একটা বিষয় নিশ্চিত সিলেট টেস্ট আজই শেষ হচ্ছে। এবং বাংলাদেশ হারতে চলেছে বড় ব্যবধানে। কেবল আনুষ্ঠানিকতা বাকি। সেই হার চতুর্থ দিনের সকালের সেশনেই সম্পন্ন হয়ে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। শেষ বিকালে মাত্র ১৩ ওভারে ৪৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেললে বাকি ৫ উইকেটের জন্য একটা সকাল বেশি সময় হচ্ছে যাচ্ছে না!
দুদিন সময়। টার্গেট ৫১১ রান। উইকেটে ব্যাটিং করাটা সহজ হয়ে উঠছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ তৃতীয়দিন শেষ বিকালে ভুলে ভরা, হাস্যকর কায়দায় ব্যাটিং করে যেভাবে উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে এলো তাতে প্রশ্নটা আরেকবার সামনে এলো-এই দলের অনেকে এখনো তাহলে টেস্ট ক্রিকেটের মর্যাদায়ই বুঝেন না!
অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত, ওপেনার জাকির হাসান, মিডলঅর্ডার ব্যাটার শাহাদাত হোসেন দীপু এবং লিটন দাস-সবাই নিজেদের উইকেটকে সস্তা দরে বিকিয়ে এলেন যেন!
আর এই তীর্যক প্রশ্নটা লিটন দাসের আউটের ভঙ্গির দিকেই আঙ্গুল তুলেছে সবচেয়ে বেশি। আগের বলেই স্লিপে ক্যাচ তুলে আউট হয়েছেন শাহাদাত হোসেন দীপু। পরের বলেই লিটন ডাউন দ্য উইকেটে এসে বোলারকে ছক্কা মারতে চাইলেন। ভাবখানা এমন যে ওটা ম্যাচের শেষ বল। আর বাংলাদেশের একটা ছক্কা প্রয়োজন ম্যাচ জিততে! যে শট খেলে লিটন উইকেট সস্তায় উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এলেন তাতে পরের টেস্টে তিনি বাদ পড়লে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
টেস্ট ক্রিকেট এবং নিজের উইকেটের মূল্য কেউ বুঝতে না পারলে তার এই পর্যায়ের ক্রিকেটে খেলাই উচিত নয়!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা ২৮০ ও ৪১৮, ১১০.৪ ওভার (ধনাঞ্জয়া ১০৮, করুনারত্নে ৫২, কামিন্দু ১৬৪; নাহিদ ২/১২৮, মিরাজ ৪/৭৪)।
বাংলাদেশ ১৮৮ ও ৪৭/৫