শ্রীলঙ্কান পেসে বিধ্বস্ত বাংলাদেশ, সিলেটে বিশাল হার
চতুর্থদিন লাঞ্চ বিরতির ঘন্টাখানেক পরে। ১৮২ রানে গুটিয়ে গেল বাংলাদেশের ইনিংস। শ্রীলঙ্কা ম্যাচ জিতলো ৩২৮ রানের বিশাল ব্যবধানে। রানের হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে এটি শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবধানে বাংলাদেশের হার। এর আগেরটি ছিল ৪৬৫ রানে, ২০০৯ সালে চট্টগ্রামে।
প্রথম ইনিংসের মতো বাংলাদেশের এই ইনিংসেও সবকটি উইকেট শিকার করলেন শ্রীলঙ্কার পেসাররা। ম্যাচের পুরো ২০ উইকেটের সবগুলোই পেসারদের দখলে। নিজেদের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে এমন কৃতিত্ব তৃতীয়বারের মতো দেখালো শ্রীলঙ্কার ফাস্ট বোলাররা। সিলেটে বোলিং কৃতিত্বে সবচেয়ে বেশি নম্বর পাচ্ছেন শ্রীলঙ্কার পেসার কাসুন রাজিথা। দ্বিতীয় ইনিংসে পাঁচ উইকেটসহ ম্যাচে তার অর্জন ৮ উইকেট।
সিলেটে বিশাল ব্যবধানে এই ম্যাচ হেরে একটা শিক্ষা পাচ্ছে বাংলাদেশ, এখানে চাইলেই ব্যাটিংটা লম্বা করা যেত! কিন্তু সেই দায়িত্ব পালন করতে যে শুরুর দিকের সব ব্যাটার ব্যর্থ হলেন। ম্যাচ চতুর্থদিন লাঞ্চের পর গেল মুলত ছোট দুটি জুটির কৃতিত্বে। প্রথমে মুমিনুল হকের সঙ্গে মেহেদি মিরাজের জুটি। দ্বিতীয়ত মুমিনুল ও শরিফুলের অষ্টম উইকেটে ৪৭ রানের জুটির সুবাদে। লাঞ্চের পর শরিফুল শ্রীলঙ্কার পেসার রাজিথাকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফিরতেই বাংলাদেশের ইনিংসও ঝটপট শেষ।
চতুর্থদিন সকালে নিজের প্রথম বলেই তাইজুল ইসলাম আউট। মনে হচ্ছিল সকালের সেশনেই বোধকরি খেলা শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু মুমিনুলের সঙ্গে প্রথমে মেহেদি মিরাজ কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। সপ্তম উইকেট জুটিতে ১০৫ বল খেলে তারা যোগ করেন ৬৬ রান। সিলেট টেস্টে দ্বিতীয় ইনিংসে এটাই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি। মেহেদি মিরাজ উইকেটে সেট হয়ে আউট হন। ফুলার লেন্থে পাওয়ার বলে ড্রাইভ খেলার চেষ্টা করেন মিরাজ। কিন্তু বল তার ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে স্লিপে যায়। কোমর সমান উচ্চতায় আসা সেই ক্যাচ তালুবন্দি করেন অধিনায়ক ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা। ৫০ বলে ৩৩ রানে শেষ হয় মেহেদি মিরাজের ডিফেন্স।
শরিফুল ইসলামও ব্যাট হাতে প্রতিরোধের চেষ্টা চালান। তবে রান তোলার চেয়ে তিনি মুমিনুলকে সঙ্গ দেওয়ার পরিকল্পনাই বেছে নেন। সময়ের হিসেবে সেটাই ছিল সঠিক সিদ্ধান্ত। শ্রীলঙ্কান পেসারদের বাউন্সার শরীরে সয়ে খানিকটা লড়ে যান শরিফুল।
লাঞ্চে যায় বাংলাদেশ ৭ উইকেটে ১২৯ রান নিয়ে। তখনো নাকের সামনে ঝুলছে তিনশ’র বেশি রানে হারের শঙ্কা। লাঞ্চের পরপরই শরিফুল পেসার রাজিতার বলে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন। পরের বলেই খালেদ আহমেদও আউট।
শেষ উইকেটে নাহিদ রানাকে নিয়ে মুমিনুলের লড়াইটা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাড়ায়। একপাশ আঁকড়ে রেখে মুমিনুল বেশিরভাগ সময় স্ট্রাইক নিজের হাতে রেখে তবুও লড়ে যান। দলের ১৮২ রানের মধ্যে এই ইনিংসে তার একার যোগাড়ই অপরাজিত ৮৭। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে নাহিদ রানা বেশিক্ষণ প্রতিরোধ গড়তে পারেননি। ৮ বল খেলে লাহিরু কুমারার পেসে পরাস্ত হন তিনি। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের ৩২৮ রানে ম্যাচ হার নিশ্চিত হয়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ২৮০/১০ ( ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ১০২, কামিন্দু মেন্ডিস ১০২, নাহিদ রানা ৩/৮৭, খালেদ আহমেদ ৩/৭২)।
বাংলাদেশ ১ম ইনিংসঃ ১৮৮/১০ (তাইজুল ৪৭, ফার্নান্ডো ৪/৪৮, রাজিথা ৩/৫৬, লাহিরু কুমারা ৩/৩১)।
শ্রীলঙ্কা ২য় ইনিংস: ৪১৮/১০ ( ধনাঞ্জয়া ১০৮, কামিন্দু মেন্ডিস ১৬৪, মেহেদি মিরাজ ৪/৭৪)।
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ১৮২/১০ ( মুমিনুল হক ৮৭*, মেহেদি মিরাজ ৩৩, রাজিথা ৫/৫৬, ফার্নান্ডো ৩/৩৬, লাহিরু কুমারা ২/৩৯)।
ফল: শ্রীলঙ্কা ৩২৮ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরাঃ ধনঞ্জয়া ডি সিলভা