প্রথম দিনেই ম্যাচ নিরাপদ করে ফেলল শ্রীলঙ্কা
প্রথম সেশনে বিনা উইকেটে ৮৮ রান। দ্বিতীয় সেশন ২ উইকেটে সংগ্রহ দাঁড়ালো ২১৪ রান। শেষ সেশন শেষে স্কোরবোর্ডে জমা ৪ উইকেটে ৩১৪ রান।
শ্রীলঙ্কার প্রথম তিন ব্যাটারের রান যথাক্রমে ৫৭, ৮৬ ও ৯৩। তিন জুটিতে রান ৯৬, ১১৪ ও ৫৩।
এই পরিসংখ্যান জানান দিচ্ছে চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথমদিন পুরোপুরিই হলো শ্রীলঙ্কার। সকালে টস পর্ব দিয়ে তাদের দিন জয়ের সেই শুরু। সহজ ব্যাটিং এবং স্পিন সহায়ক উইকেটে আগে ব্যাটিং সেরে রাখতে চেয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তও। কিন্তু টস জিতে সেই সুযোগটা কাজে লাগালো শ্রীলঙ্কা।
প্রথম সেশনে তাদের নিরাপদ ব্যাটিংটাই জানান দিলো এই ম্যাচের ব্যাটিংয়ের কাজটা তারা প্রথম ইনিংসেই সেরে ফেলতে চায়। বড় লক্ষ্যের সেই সুচনাটা পেয়েও গেল তারা প্রথম দিনের ব্যাটিংয়ে।
প্রথম সেশনে শ্রীলঙ্কা কোনো উইকেট হারায়নি, তার মানে এই নয় যে বোলিংটা যাচ্ছেতাই হয়েছে দলের। দুই পেসার খালেদ আহমেদ ও অভিষিক্ত হাসান মাহমুদ চেষ্টার কমতি রাখেননি। হাসানই ছিলেন প্রথম সেশনে দলের সেরা বোলার। তার বলে শ্রীলঙ্কার দুই ওপেনারই সুযোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু ফিল্ডাররা যদি সুযোগটা লুফে না নিতে পারেন তাহলে দায়টা কার!
দুর্ভাগ্যটা তো বাংলাদেশেরও! শুরুর সেশনটায় ২৭ ওভার করে উইকেট মেলেনি একটাও। দুটো সুযোগ লুফে নিতে পারলে হয়তো এখন স্কোরকার্ডটা থাকত ৮৮/২, কে জানে রান আরও কমও হতে পারত, উইকেটও আরও বেশি হতে পারত হয়ত! একটা রান আউটের সুযোগও যে মাঝে বেরিয়ে গেছে হাত ফসকে!
প্রথম সুযোগটা এসেছিল দিনের সপ্তম ওভারে। মাদুশকা আগে থেকেই ছিলেন নড়বড়ে, ব্যাটে খোঁচা লাগছিলো। ক্যাচের সুযোগ তৈরি হচ্ছিল। আগের বলটা ব্যাটে লাগলেও ফিল্ডার পর্যন্ত ক্যারি করেনি। কিন্তু সুযোগটা এলো খানিকবাদেই। হাসান মাহমুদের বলে তিনি ক্যাচ তুলে দিলেন স্লিপে। পেট সমান উচ্চতার বলটা তালুবন্দি করতে পারেননি মাহমুদুল হাসান জয়। সেই সময় মাদুশকার রান সিঙ্গেল ডিজিটে ৮। সেই তিনিই শেষপর্যন্ত হাফসেঞ্চুরি করে মাঠ ছাড়লেন।
পরের সুযোগটা এল ২২তম ওভারে। ব্যক্তিগত ২২ রানে এবার সুযোগটা দিলেন দিমুথ করুনারত্নে। হাসান মাহমুদের বলেই হুক করতে গিয়ে ক্যাচ তোলেন ডিপ ফাইন লেগে। সেখানে সাকিব আল হাসান ক্যাচটা ধরতে পারেননি। সেই করুনারত্নে শেষমেষ ফিরলেন ৮৬ রানে, দিনের দ্বিতীয় সেশনে। একটু দেরিতে হলেও হাসান মাহমুদ এবার হাসলেন। করুনারত্নের এই উইকেটই টেস্ট ক্রিকেটে তার প্রথম শিকার। বলের গতি কমিয়ে অফস্ট্যাম্পের ওপর ডেলিভারিটা রেখেছিলেন হাসান মাহমুদ। টাইমিংয়ে গন্ডগোল করে ফেলেন শ্রীলঙ্কান ওপেনার করুনারত্নে। বল তার ব্যাটের কানায় লেগে স্ট্যাম্পে আছড়ে পড়ে, বোল্ড!
দিনের শেষের দুই সেশনে বাংলাদেশ দুটি করে উইকেট পায়। কিন্তু প্রথমদিনে তিনশ প্লাস রান তুলে শ্রীলঙ্কা এই ম্যাচটা নিরাপদ প্রায় করেই ফেলেছে। উইকেটে শুরু থেকে স্পিনাররা টার্ন পাচ্ছিলেন। কিন্তু শ্রীলঙ্কার ব্যাটিংটা যে বেশি পাস মার্ক পাচ্ছে।
সিলেট টেস্টে শ্রীলঙ্কার টপঅর্ডার ব্যাটিং দুই ইনিংসেই ব্যর্থ হয়েছিল। চট্টগ্রাম টেস্ট শুরুর আগে লঙ্কান অধিনায়ক ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা তাই বলছিলেন, একটা ম্যাচ কারো খারাপ যেতেই পারে। আমি আশা করছি চট্টগ্রামে আমাদের টপঅর্ডার এতবেশি রান করুক যাতে বাকিদের ব্যাটিংয়ের প্রয়োজনই না পড়ুক। শ্রীলঙ্কান অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিয়েছে টপঅর্ডার ব্যাটাররা চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসেই। প্রথমদিন শেষে দলের ৩১৪ রানের মধ্যে টপঅর্ডার তিন ব্যাটারের সম্মিলিত যোগাড় ২৩৬ রান।
শেষ সেশনে নতুন বলে দুই উইকেট এবং কুশাল মেন্ডিসকে সেঞ্চুরি বঞ্চিত করা-আপাতত এই দুই সুখ নিয়েই দিনটা শেষ করলো বাংলাদেশ। সাকিবের বলে স্লিপে ঝাঁপিয়ে ক্যাচ নিয়ে দারুণ দক্ষতা দেখিয়ে কুশাল মেন্ডিসকে ৯৩ রানে ফিরিয়ে দিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। দিনের শেষ সেশনে নতুন বলে উইকেট শিকারের আনন্দে মাতলো বাংলাদেশ। অ্যাঞ্জোলো ম্যাথুসের প্রাইজ উইকেট তুলে নিলেন হাসান মাহমুদ। দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় স্লিপে ক্যাচটা নিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। ১৭ ওভারে ৬৪ রান খরচায় টেস্ট অভিষেকে নিজের প্রথম দিনটাকে কিছুটা আনন্দময় করে রাখলেন পেসার হাসান মাহমুদ।
তবে চট্টগ্রামে ধীরস্থির ব্যাটিংয়ে শ্রীলঙ্কা প্রথমদিনেই সম্ভবত ম্যাচটা নিরাপদ করে নিল এবং সেই সঙ্গে সিরিজের ট্রফিও!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: (প্রথমদিন শেষে) ৩১৪/৪ (৯০ ওভাওে, মাদুশকা ৫৭, করুনারত্নে ৮৬, কুশাল মেন্ডিজ ৯৩, ম্যাথুস ২৩, চান্দিমাল ৩৪*, ধনাঞ্জয়া ১৫*, হাসান মাহমুদ ২/৬৪)।