রোহিতের হাত ধরে ভারতে ফিরবে বিশ্বকাপ?
ইটস হোমকামিং। ঘরে প্রত্যাবর্তনই বটে! বিশ্বকাপ আবার ফিরছে ঘরে। তার গর্ভগৃহে। ইতিহাস বলে ব্যাট-বলের যুদ্ধ, পোশাকি ভাষায় যাকে ক্রিকেট বলে, তার জন্ম হয়েছিল সাগরপাড়ের বিলেতে। তবে আবেগ, উন্মাদনা এবং পাগলামির ডেসিবেল বিচার্য হলে ক্রিকেটের জন্মভ‚মি অন্য কোথাও নয়। এই ভারতই জন্মভ‚মি।
বছর বারো আগে দেশের মাটিতে ইতিহাস গড়েছিল ভারত। মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে। ওয়াংখেড়েতে তেরঙা উড়িয়ে দেশের ক্রিকেট-বুভুক্ষু জনগণকে স্বপ্নরাজ্যের বাসিন্দা হওয়ার স্বাদ দিয়েছিলেন নীল জার্সিধারীরা। বিশ্বকাপের ইতিহাসে আয়োজক দেশ হিসেবে সেই প্রথমবার কোনো দল ট্রফি ছোঁয়ার কীর্তি স্থাপন করেছিল। সেবারই শেষ।
তারপর মহার্ঘ্য এই ট্রফি আর স্পর্শ করতে পারেননি ভারতীয়রা।
ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ায় গত দুই বিশ্বকাপে ভারতীয় দল হতাশ করেছিল। এবার চেনা মঞ্চে ফের বিজয়কেতন ওড়ানোর প্ল্যাটফর্ম তৈরি। অভিজ্ঞতা এবং তারুণ্যের মিশেলে ভারত বিশ্ব ক্রিকেটের পরাশক্তি। আর ঘরের মাঠে ভারত বরাবর বাঘ। ক্রিকেটের যেকোনো ফরম্যাটে ভারত সব সময়ই ‘দ্য লাস্ট ফ্রন্টিয়ার’।
২০১৪ সালে শেষবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়। ধোনি যুগের অবসানের সঙ্গেই আইসিসি টুর্নামেন্টে ভারতীয়দের জন্য হতাশাই এতদিন অপেক্ষা করে এসেছে।
২০১৬ দেশের মাটিতে টি-টোয়েন্টি ওয়ার্ল্ড কাপে ভারত সেমিফাইনালের বেশি এগোতে পারেনি। একের পর এক আইসিসি টুর্নামেন্ট এসেছে এবং গিয়েছে। তবে সাফল্যের সিংহাসন ফাঁকাই থেকে গিয়েছে।
কোহলি-জমানা পেরিয়ে ভারতের নেতৃত্বের রাজমুকুট আপাতত রোহিত শর্মার মাথায়। আর হিটম্যানের চ্যাম্পিয়ন্স লাক-এ ভরসা করে টুর্নামেন্টে নামতে চাইছে ভারত। মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেই সূচি ঘোষণা করা হয়েছিল। তারপর থেকেই আগ্রহের রকেট গগনচুম্বী।
টিকিট বিক্রি এখনও শুরু হয়নি। তবে এখন থেকেই তুঙ্গে হুল্লোড়। মধ্য অক্টোবরের ভারত-পাক ম্যাচেই যাবতীয় ফোকাস। দ্বিপক্ষীয় সিরিজে মুখোমুখি হয়নি দুই দল। দেড় দশক হতে চলল। আইসিসি টুর্নামেন্টেই একমাত্র চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী দুই দল মোকাবিলা করতে নামে। তাই প্রত্যাশা এখন থেকেই বাঁধ ভেঙেছে। হোটেলের জন্য সর্বগ্রাসী হাহাকার। অক্টোবর মাসে কার্যত কোনো হোটেলই ফাঁকা নেই। সামান্য কয়েক হাজারে যে রুমে রাত কাটানো যেত, অক্টোবরেই সেই রুমের ভাড়া লাখ ছুঁয়েছে। উপায়ন্তর না দেখে প্রবাসী ভারতীয়রাও নতুন স্ট্র্যাটেজি কষেছেন। সরাসরি হাসপাতালের রুম বুক করে নিচ্ছেন। শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং একই সঙ্গে রাত্রিবাসÑ সব বন্দোবস্তই পাকা।
ঘটনা হলো, ভারত-পাক ম্যাচের সময়ই আবার নবরাত্রি। পুরো ভারতে, গুজরাটে তো বটেই, যে উদযাপন হয় বেশ সাড়ম্বরে। এমন অবস্থায় ধুন্ধুমার যুদ্ধের সূচি বদলাতেই পারে। যদিও বিসিসিআই সেক্রেটারি জয় শাহ সদর্পে ঘোষণা করেছেন, সূচি বদলাবে। তবে ভেন্যু, নৈব নৈব চ!
জিম্বাবুয়ে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দল এবার বিশ্বকাপে নেই। অন্যদিকে নেদারল্যান্ডস আশা জাগিয়ে কোয়ালিফায়ার থেকে যোগ্যতা অর্জন করেছে। শ্রীলঙ্কাকেও যোগ্যতা অর্জন পর্বের বাধা টপকাতে হয়েছে।
দশ ভেন্যুতে এবার ওয়ার্ল্ড কাপ আয়োজন করা হচ্ছেÑ হায়দরাবাদ, আহমেদাবাদ, কলকাতা, লক্ষেèৗ, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, দিল্লি, মুম্বাই, পুনে ও ধর্মশালা। ওয়ার্মআপ ম্যাচ হবে গুয়াহাটি ও তিরুঅনন্তপুরমে।
বিশ্বকাপের ইতিহাসে এই প্রথমবার ভারত এককভাবে বিশ্বকাপের আয়োজন করতে চলেছে। সেই ঘটনা স্মরণ করে রাখতে ‘হোমকামিং’ ইতিহাসের খাতায় লাল কালিতে লিখে রাখতে পারবেন রোহিতরা? সময়ই এর উত্তর দিয়ে যাবে।