হ্যাটট্রিক এবং হার; ফারিহার আনন্দ-বেদনার কাব্য
৪ ওভারে ১৯ রানে ৪ উইকেট, হ্যাটট্রিকসহ! নিশ্চয়ই এটা বাঁধিয়ে রাখার মতো পারফরমেন্স। কিন্তু দিনশেষ সেই আনন্দ করতে পারলেন কই ফারিহা তৃষ্ণা। দল যে হেরে গেছে বড় ব্যবধানে। সেই সঙ্গে এক ম্যাচ আগেই টি-টোয়েন্টি সিরিজেও হার। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে মিরপুরে ২ এপ্রিলের ম্যাচটা তাই বাংলাদেশের বাঁহাতি পেসার ফারিহা তৃষ্ণার জন্য আনন্দ-বেদনার কাব্য হয়েই রইলো।
ম্যাচ শেষে তাই জানাচ্ছিলেন এই পেসার-‘ আমি হ্যাটট্রিক করছি। কিন্তু ম্যাচে তো আমার দল হেরে গেছে। একটু আফসোস তো অবশ্যই আছে। নিজের অর্জনের চেয়ে দলের জয়ই আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ অবশ্যই। দল জিততে নিজের অবদানের কথা চিন্তা করে আনন্দটা আরেকটু বেশি হয়। কিন্তু এই ম্যাচে তো সেটা হলো না। আমার কাছে দলই সবার এবং সবকিছুর আগে।’
লম্বা ইনজুরির পর অনেকদিন পরে জাতীয় দলে ফিরেছেন ফারিহা। নিজের ফিরে আসা স্মরণীয় করে রাখার একটা দৃঢ় ইচ্ছা ছিল তার। নিজেকে ধীরে ধীরে তৈরি করছিলেন। সেই প্রসঙ্গে ফারিহা জানালেন, ‘আমার জন্য ফিরে আসাটা বেশ কঠিনই ছিল। কারণ ইনজুরিটা বেশ খারাপই ছিল। তবে আমি যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে রুটিন অনুযায়ী চলেছি। ফিরে আসতে হবে-এই দৃঢ়তা ছিল আমার। খানিকটা সময় লেগেছে। কিন্তু ফিরে আসতে পেরেছি এটাই তাতেই আমি আনন্দিত। নিজেকে নিয়ে আমার কখনোই কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছিল না। জানতাম আমি ফিরবোই। আশা ছিল যে ভালো কিছু করার চেষ্টা করবো। অনেকদিন পরে টি-টোয়েন্টিতে ফিরলাম। ম্যাচ খেলার সুযোগ পেলাম। তাই ইচ্ছে ছিল ভালো পারফরম্যান্স করে দলের জন্য বড় অবদান রাখার। শেষ ওভারে দুটো উইকেট নেওয়ার পর হ্যাটট্রিকের চিন্তাটা মাথায় আসে। মনে হলো আল্লাহ যদি সহায় হোন তাহলে হয়তো হ্যাটট্রিকটা হয়ে যেতে পারে। হয়েও গেল।’
অস্ট্রেলিয়ার ১৬৮ রানের জবাবে বাংলাদেশের শুরুর ব্যাটিংটা বেশ হয়েছিল। বিশেষ করে পাওয়ার প্লে দারুণ কাটে বাংলাদেশের। কিন্তু ব্যাটিংয়ের মাঝপথে সমস্যায় পড়ে দল। সেই সঙ্কট আর কাটিয়ে উঠতে পারেনি। ম্যাচের সেই দিক বদল নিয়ে ফারিহা বললেন, এই ম্যাচে আমাদের ব্যাটিংয়ের শুরুটা বেশ ভালো হয়েছিল। আমাদের আশা ছিল এই ম্যাচটা আমরা ভালোভাবে শেষ করতে পারবো। আমরা চেষ্টা করছি। কিন্তু ফলটা আমাদের দিকে আসেনি। ব্যাটিংয়ের মাঝপথে আমরা ধসে যাই। সেই অবস্থা থেকে আর ফিরতে পারিনি।’
বোলিংয়ে নিজের সতীর্থ মারুফা আক্তার সম্পর্কে ভূয়সী প্রশংসা করলেন ফারিহা তৃষ্ণা-‘ আসলে মারুফার সঙ্গে আমার প্রতিদ্বন্দ্বিতা বলতে কিছু নেই। মারুফা বিশ্বমানের বোলার। ও ওর জায়গায় সেরা। ওর বিকল্প কাউকে ভাবা এখন খুবই কঠিন। ওর সুইং, গতি, ভ্যারিয়েশন-সবকিছুই সেরা। আমার চিন্তা ছিল একটাই, যদি সুযোগ পাই তাহলে যেন ভালো কিছু করতে পারি।’
সেই ভালোটা অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টি- টোয়েন্টিতে ঠিকই করলেন ফারিহা। কিন্তু দল যে ব্যর্থ হলো। সেই দুঃখেই নিজের হ্যাটট্রিক করার আনন্দ যে বল্গাহারা আর হলো না!