প্রোটিয়াদের স্তব্ধ করে ধর্মশালায় ‘কমলা বিপ্লব’

প্রোটিয়াদের স্তব্ধ করে ধর্মশালায় ‘কমলা বিপ্লব’

লুঙ্গি এনগিদি আর কেশভ মহারাজের ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিল, ম্যাচটা তাড়াতাড়ি শেষ করার কী ‘চেষ্টা’টাই না করছিলেন দু’জনে! ব্যাটের কোণায় কখনো, কখনোবা মাঝব্যাটে লেগে বল উঠে যাচ্ছিল আকাশে; কিন্তু বলগুলো ফিল্ডার পর্যন্ত যাওয়ার আগেই নেমে আসছিল মাটিতে। ধারাভাষ্যকার সঞ্জয় মাঞ্জরেকার তো একবার বলেই ফেললেন, ‘হচ্ছেটা কী এখানে!’
এনগিদি আর মহারাজকে শেষমেশ ‘হারানো’ গেল একেবারে শেষে এসে, মহারাজ ফিরলেন উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে। আর তাতেই ধর্মশালায় দেখা মিলল কমলা বিপ্লবের, ৩৮ রানের এই জয় যে নেদারল্যান্ডসের কাছে জয়ের চেয়েও বড় কিছু! বিশ্বকাপ ইতিহাসেই যে তাদের আর কোনো টেস্ট খেলুড়ে দলের বিপক্ষে জয় নেই!
অথচ ম্যাচ শুরুর আগে মনে হচ্ছিল, দক্ষিণ আফ্রিকা বুঝি ‘রুটিন’ জয়টা তুলে নিতেই নেমেছে আজ! মনে হবেই বা না কেন? শেষ পাঁচ জয় তাদের ১০০’র ও বেশি রানের ব্যবধানে। বিশ্বকাপেই তো প্রথম দুই ম্যাচে হারিয়েছে শ্রীলঙ্কা আর অস্ট্রেলিয়ার মতো দুই দলকে, তাও তিন অঙ্কের রানেই। সে দলটা যখন ডাচদের মুখোমুখি, সেটা মনে হওয়াই কি বেশি যৌক্তিক নয়?
আগে ব্যাট করে দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ের অভ্যাসটা বেশ। কিন্তু পরে ব্যাট করে? শেষ দশ ম্যাচের ৬টিতেই হার। সবশেষ জয়টা আবার এই ডাচদের বিপক্ষেই। সে অভ্যাসটা বাজিয়ে দেখার জন্য নেদারল্যান্ডস ম্যাচটার চেয়ে ভালো উপলক্ষ্য আর কীইবা হতে পারত? অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলেন, তার কারণ অবশ্য আরও একটা ছিল। দিনের শুরু থেকে বৃষ্টি, আষাঢ় মাস ঠাহর করানোর মতো মেঘ আকাশে, আর দলে একগাদা বিশ্বমানের পেসার থাকলে আপনি কী করতেন?
সে সিদ্ধান্তের যথার্থতা বোলাররা প্রমাণও করছিলেন। নেদারল্যান্ডস পাঁচ উইকেট খুইয়ে বসল ৮২ রান তুলতেই। এরপরই উইকেটে আগমন স্কট অ্যাডওয়ার্ডসের। এরপর তিনি যা করলেন, তার ধরনটা অনেকটাই ১৯৮৩ বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে কপিল দেবের ওই মহাকাব্যিক ১৭৫* এর মতো।
শুরুতে ধীরগতির ইনিংসে সামলালেন ধস, শেষে গিয়ে তুললেন ঝড়। কপিলের মতো রেকর্ডগড়া নয়, অ্যাডওয়ার্ডস যখন ফিরছেন, তখন নামের পাশে যোগ হয়েছে ৭৮ রান। সেটা তেমন ‘গুরুত্বপূর্ণ’ নয়, দলের স্বার্থটাই তো আগে! দল পেয়ে গেল ৪৩ ওভারে ২৪৫ রানের লড়াকু পুঁজি, শেষ দশ ওভারে ১০৪ রান তুলে!
তখনো ধর্মশালায় কমলা বিপ্লবের আভাস মিলছিল না। মিলবেই বা কী করে? উইকেট যেমনই হোক, বোলারদের নিয়ে ছেলেখেলাটা শেষ কিছু দিনে প্রোটিয়া ব্যাটারদের চেয়ে ভালো কেউ পেরেছেন? ওপেনার ডি ককই তো ছিলেন হ্যাটট্রিক সেঞ্চুরির দুয়ারে!
ধারণাটা ভুল প্রমাণ করতে শুরু করল ডাচরা অষ্টম ওভার থেকে। সেই ডি কক ফিরলেন কলিন অ্যাকারম্যানের বলে। এক ওভার পর টেম্বা বাভুমাও ফিরলেন। কার শিকার হয়ে জানেন? রোলফ ফন ডার মারভার শিকার হয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকার জার্সি গায়ে একটা বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতাও আছে যার!
শেষ কিছু দিনে রাসি ফন ডার ডাসেন, এইডেন মার্করাম, হাইনরিখ ক্লাসেন কী ফর্মেই না ছিলেন! তবে আজ কোনো কিছুতেই কিছু হলো না। এলেন, আর গেলেন কেবল। স্রোতের বিপরীতে কিছুক্ষণ লড়লেন ডেভিড মিলার। কিন্তু ওপাশের সমর্থন না পেলে বাড়তে থাকা আস্কিং রেটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাহাতক আর লড়াই করা যায়? মিলার পারলেনও না।
শেষে এসে মহারাজ আর এনগিদি মিলে কিছুক্ষণ লড়লেন; তবে তা কেবল ব্যবধানটাই কমিয়েছে। কপিল দেবের প্রদেশ হিমাচলে কমলা বিপ্লবের অপেক্ষাটা একটু বেড়েছে এই যা! তবে শেষমেশ তা হলোই, অবধারিতভাবে। ম্যাচ শেষে নায়ক কে হলেন জানেন? ওই ‘কপিলোচিত’ ইনিংস খেলা ডাচ অধিনায়ক স্কট অ্যাডওয়ার্ডস।

সম্পর্কিত খবর