ব্যাটিং লাইনআপে গর্ত আছে, সারাতে হবে: লিপু
টি- টোয়েন্টি সিরিজ হেরেছে বাংলাদেশ। ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে। এই দুই সিরিজে ব্যবধান সেই সমান ২-১। হিসেবটা জানাচ্ছে লড়াই জমেছিল বেশ। কিন্তু দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হিসেবটা উল্টো গেল পুরোই। শ্রীলঙ্কা ২, বাংলাদেশ ০। পুরোদুস্তর হোয়াইটওয়াশড। দুই টেস্টে হারের বিশাল ব্যবধান জানাচ্ছে ম্যাচ একতরফা হয়েছে। দুই টেস্টেই বাংলাদেশের ব্যাটিং ভয়াবহভাবে ব্যর্থ। বোলাররা হয়তো কিছুটা পাসমার্ক পাচ্ছেন। কিন্তু ব্যাটিং এবং ফিল্ডিং ক্যাচিংয়ে পুরো দল ফেল! সিরিজ শেষে সেই সমীকরণ নিয়ে প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু কথা বলেছিলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে।
টি- টোয়েন্টি এবং ওয়ানডে সিরিজের পারফর্ম্যান্স নিয়ে সন্তোষ জানান লিপু। তিনি বলেন, ‘টি- টোয়েন্টি এবং ওয়ানডে সিরিজে ভালো একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সিরিজ হয়েছে। ওই দুই ফরম্যাটে সিরিজে কখনো সমতা এনেছি আমরা। আবার সমতায় থেকেও পিছিয়ে গেছি। কখনো এগিয়ে এসেছি। বেশ ভালো একটা চ্যালেঞ্জের মধ্যে থেকেই আমরা সেই দুটো সিরিজে খেলেছি। লড়েছি। সেই দুই সিরিজে দল আমাদের অসন্তুষ্ট করেনি।’
তবে বছরের প্রথম টেস্ট সিরিজের ইতিবৃত্ত নিয়ে নিজের হতাশা মোটেও গোপন রাখলেন না প্রধান নির্বাচক। নিজ কন্ডিশনে, স্পোর্টিং উইকেটে খেলার একটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছিল বাংলাদেশ। সাধারণত আগে দেশের মাটিতে টেস্ট ম্যাচের জন্য স্পিন উইকেটই তৈরি করতো বাংলাদেশ। কিন্তু এবার ভিন্ন ধাঁচের উইকেটে টেস্ট সিরিজ খেলে দল। সেই পরীক্ষণেও ব্যর্থ দল। সেই প্রসঙ্গে লিপু ব্যাখ্যাটা এমন- ‘টেস্ট সিরিজে আমাদের ফলাফলই বলে দিচ্ছে আমরা হতাশ। দলের পারফরর্ম্যান্স নিয়ে আমরা স্পষ্টত হতাশ। আশা ছিল টেস্ট সিরিজে দল আরো ভালো ফল করবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। ফলাফল যে আমাদের পক্ষেই আসতে হবে- এমন কিছু ছিল না। আমরা আগেই বলেছি যে যথেস্ট ভালো একটা স্পোর্টিং উইকেটে আমরা টেস্ট ম্যাচ খেলার চেষ্টা করেছি। আমরা তো শুধু দেশেই টেস্ট ম্যাচ খেলবো না। দেশের বাইরে গিয়েও আমাদের অনেক টেস্ট ম্যাচ খেলতে হবে। সেটার জন্য নিজেদের সক্ষমতা এবং দুর্বলতা বিচার করার জন্যই এমন উইকেটে খেলার আয়োজনের জন্য বিসিবিকে বলেছিলাম আমরা। বিসিবি সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা করেছে। এমন উইকেটে খেলে এখন আমরা ফল নিয়ে হয়তো এই মূহূর্তে আশাহত কিন্তু এতে আমাদের দুর্বলতার জায়গাগুলো আমরা স্পষ্ট করতে পেরেছি। এই দুর্বলতা কিভাবে কাটিয়ে উঠতে হবে সেগুলো নিয়ে নিশ্চয়ই আমাদের টিম ম্যানেজমেন্ট কাজ করবে।’
টেস্ট সিরিজে বাজে ফলাফলের অন্যতম কারণ হিসেবে বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণীর দুর্বল ক্রিকেট কাঠামোকে দায়ী করা হয়। শ্রীলঙ্কার কাছে ২-০ তে টেস্ট সিরিজ হেরে এবার দলের ক্রিকেটাররাও সেই অভিযোগ করেছেন। মুমিনুল হক সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, দেশের প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটের সঙ্গে আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটের তফাৎ আকাশ পাতাল। আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে ভালো পারফর্ম করার জন্য প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটকে প্রস্তুতির মঞ্চ মানা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের সেই প্রস্তুতির মঞ্চই যে ভীষণ দুর্বল। বাজে উইকেট এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে খেলে আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে আসা বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা ঠিক মানিয়ে নিতেই পারছেন না। এই অভিযোগ প্রসঙ্গে লিপু বলেন, ‘বিসিবির তরফ থেকে যেসব জায়গায় উন্নয়নের সুযোগ আছে; যেমন প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট, সেই সঙ্গে টেস্ট সিরিজে খেলার আগে প্রস্তুতির বিষয়াবলি আমাদের এজেন্ডায় আছে। তবে সারাবছর জুড়েই খেলা। তাই একেকটা ফরম্যাটের জন্য আগেভাগে তেমন প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ থাকে না। তারপরও ক্রিকেটারা যে সব জায়গায় সমস্যায় পড়ছে সেগুলো নিয়ে কোচ এবং টিম ম্যানেজমেন্ট সময় বের করে কাজ করবেন।’
ক্রিকেটারদের বাজে সময় যেতেই পারে। বাজে ফর্ম থাকতেই পারে। কিন্তু শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশের কয়েকজন ক্রিকেটারের চরম বাজে ভঙ্গিতে আউট অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। টেস্ট খেলার জন্য যথেষ্ট নিবেদন এই ক্রিকেটারদের আছে কি না- এমন অভিযোগও উঠেছে। লিপু সেই অভিযোগ নিয়ে নিজের মতামতে জানালেন, ‘টেস্ট সিরিজে আমাদের আউট হওয়ার ধরনগুলো ভালো ছিল না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিষয়টা খুব দৃষ্টিকটু লেগেছে। সেটার আবার দুটো প্রেক্ষাপট আছে। উইকেটে এসে সেটেল হওয়ার আগেই অনেকেই আউট হয়ে গেছেন। যে বলে তারা আউট হয়েছেন সেই বলগুলো ছেড়ে দিলেই পারতো তারা। অফস্টাম্প কোথায় আছে সেই বিবেচনা মাথায় রাখতে পারলে এমনভাবে কেউ আউট হতো না। পরিস্থিতি না বুঝে প্রথম বলেই অনেকে চালিয়ে দিয়েছেন- যা মোটেও সঠিক কিছু ছিল না। টেস্ট ম্যাচে ব্যাটারদের প্রপার টেস্ট মেজাজে ব্যাটিং করতে হবে। যেভাবে এবং যে ভঙ্গিতে আমাদের ব্যাটাররা পরাস্ত হচ্ছেন সেটা যে শুধু এই সিরিজেই হয়েছে তা নয়। এভাবে আউট হওয়ার কুঅভ্যাস বন্ধ করতে হবে। এভাবে আউট হওয়ায় পুরো দলের ব্যাটিং লাইনআপে একটা গর্ত তৈরি হয়েছে। সেই গর্তটা সারাতে হবে। আর এই বিষয়টি সমাধানের দায়িত্ব যাদের তারা নিশ্চয়ই সেটা করবেন। দলের অ্যানালিস্ট নিশ্চয়ই এই ব্যাটারদের দুর্বলতা কোথায় কোথায় ছিল সেটা পৌঁছে দিতে পারবেন।’