আইপিএলের দুর্দান্ত মুস্তাফিজুর জাতীয় দলে নিস্প্রভ কেন?
বাংলাদেশের হয়ে শেষ কবে মুস্তাফিজুর ম্যাচ উইনিং পারফরমেন্স করেছেন? এটা জানতে হলে আপনাকে অনেকদুরের এবং অনেকগুলো স্কোরকার্ড ঘাঁটতে হবে। কিন্তু এবারের আইপিএলে তার পারফরমেন্স এমনই রঙিন যে বাকি সবাই এখানে তার আলোয় ঢাকা পড়ে যায়।
শুরু করেছিলেন ২৯ রানে ৪ উইকেট শিকারে। রয়েল চ্যালেঞ্জার বেঙ্গালুরুর হয়ে সেই ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় মুস্তাফিজুর। শুরুর ৪ ম্যাচে তার উইকেট ৯। চলতি আইপিএলে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত সর্বোচ্চ উইকেট শিকার করে পার্পেল ক্যাপটা তার মাথায়। ৫ ম্যাচে ৩ জয় এবং ২ হার নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে চেন্নাই। তবে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারে মুস্তাফিজুর এখন আইপিএলের নাম্বার ওয়ান বোলার। চেন্নাই সুপার কিংসের হয়েও সেরা টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত সেরা পারফর্মার। প্রথম ৫ ম্যাচের হিসেব জানাচ্ছে চেন্নাইয়ের সবচেয়ে ইমপ্যাক্টফুল প্লেয়ার হলেন মুস্তাফিজ। ২০৬.৬ পয়েন্ট নিয়ে মুস্তাফিজ সিএসকের সব প্লেয়ারদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছেন।
এই আসরে চেন্নাই ৫ ম্যাচের মধ্যে তিন ম্যাচ জিতেছে। এই ৩ ম্যাচে মুস্তাফিজ ৬.৭৫ ইকোনমিতে ৮ উইকেট নিয়েছেন।
এই তিন ম্যাচে মুস্তাফিজের শিকারের নামগুলো শুনুন- ফাফ ডু প্লেসিস, বিরাট কোহলি, গ্রীন, রজত পাতিদার, রাহুল তেওয়াতিয়া, রশিদ খান, শ্রেয়াস আয়ার ও মিচেল স্টার্ক। এই তালিকায় মিচেল স্টার্ক শুধুমাত্র বোলার। রাহুল এবং রশিদ খান হলেন অলরাউন্ডার। বাকি সবাই জেনুইন ব্যাটসম্যান। চেন্নাই যেই দুই ম্যাচ হেরেছে এই দুই ম্যাচের একটি ম্যাচ মুস্তাফিজ খেলেছেন। দিল্লি ক্যাপিটালের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচে শুধু ডেভিড ওয়ার্নারের উইকেটটা মুস্তাফিজ পেয়েছিলেন।
এই হিসেবই জানাচ্ছে বোলিংয়ে ম্যাচ জিততে চেন্নাইয়ের সবচেয়ে সেরা এবং কার্যকর অস্ত্রের নাম মুস্তাফিজ। বিসিবির উচিত হবে মুস্তাফিজকে জিম্বাবুয়ে সিরিজে না খেলিয়ে আইপিএলে তার এনওসির মেয়াদ বাড়ানো। মুস্তাফিজ যদি বাকি সবগুলো ম্যাচ খেলতে পারেন, পাশাপাশি সিএসকে ফাইনালে গেলে এই আসরে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি মুস্তাফিজের ই হবার সম্ভাবনা থাকবে। আর মুস্তাফিজ যদি সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হন তাহলে নিশ্চিতভাবে চেন্নাই তাকে সামনের মৌসুমের জন্যও রিটেইন করবে। তারচেয়ে বড় বিষয় টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ পাবে দারুণ আত্মবিশ্বাসী এক পারফর্মারকে।
বলের গতি কমিয়ে দারুণ কাটারে- বিভ্রান্ত ব্যাটার! কি সুন্দর লেংথ আর এংগেল- মোহবিষ্ট হওয়ার মত ডেলিভারি। কাটার- স্লোয়ারের জাদুতে আইপিএলের মঞ্চে দারুন কার্যকর মুস্তাফিজ। যদি চেন্নাইয়ের উইকেট গতিহীন নয়- ট্রু উইকেটের ধাঁচেই পড়ে। যদি তাই হয়, তবে বাংলাদেশের উইকেটগুলোতে আমাদের মুস্তাফিজের এমন ‘ফিউজ’ হবার কারণ কি? আহ আইপিএলের এই বোলিংটাই যদি মুস্তাফিজ শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজের একটি ম্যাচেও করতে পারতো তাহলে তো বাংলাদেশ সিরিজ হারে না! ১ম ম্যাচে ৪২, আর ৩য় ম্যাচে ৪৭ রান খরচা; ওই দুই ম্যাচে উইকেট মোটে একটা। আহা একটা ম্যাচেও চিপাকের এই বোলিং ফিগার যদি থাকতো, নিশ্চিত টাইগাররা সিরিজ জিততো শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে! জাতীয় দলের ছায়া মোস্তাফিজ কেন আবার উজ্জ্বল আইপিএলে, এই প্রশ্নটাই এখন ঘুরছে মাথার মধ্যে!
কি হতে পারে আইপিএলে ওর সাফল্যের কারণ? কেন সে ব্যর্থ হচ্ছে জাতীয় দলে? যদিও আইপিএলের পুরো মৌসুম এখনও বাকি, তবে ধরেই নেয়া যায় চিপাকের হোম ভেন্যুতে ও ছড়ি ঘোরাবেই- কারণ এখানে বল শুধু গ্রিপ নয়, স্কিডও করছে। বুঝলাম সিলেটে বল গ্রিপ করেনি, কিন্তু চিপাকের মত সুন্দর লাইন-লেংথ আর বডি ল্যাংগুয়েজও তো দেখিনি শ্রীলঙ্কা সিরিজে? তাহলে সমস্যাটা কোথায়? মোস্তাফিজ কি জাতীয় দলে তাঁর করণীয় নিয়ে দ্বিধায় থাকেন ইদানিং? কোন কারণে তারা এসাইনমেন্ট কি পরিস্কার থাকে না? অন্যদিকে আইপিএলে তাঁর প্রথম ম্যাচের ২৪টা বল কি পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসেব থেকে করা হয়, এমন কিছু? প্রতিপক্ষ বিবেচনায় কম্পিউটার এনালিস্টের নীল-নকশা মাথায় ঢুকিয়ে দেয়া হয় কি তাঁর?
চিপাকে গত ৮ এপ্রিল কলকাতার বিরুদ্ধে ম্যাচের কথাই বলি। পুরো টুর্নামেন্টে বিষ্ফোরক ব্যাটিং করা আন্দ্রে রাসেল ১৮ নম্বর ওভারে মুস্তাফিজের সামনে পড়লেন। একটা বাউন্ডারি পেলেন রাসেল। কিন্তু সেই ওভারে আড়াআড়ি অ্যাঙ্গেলে কার্টার আর স্লোয়ারে রাসেলকে একপ্রকার নাচিয়ে ছাড়লেন মুস্তাফিজুর রহমান। কোন ব্যাটারের বিরুদ্ধে কোন বোলিং কৌশল এবং সেই অনুযায়ী ফিল্ড সেটিং এটা টি- টোয়েন্টিতে খুবই কার্যকর বিষয়। চেন্নাইয়ের ডাগআউট থেকে ম্যাচের আগে এবং ম্যাচের সময় মাঠে ক্ষুরধার ক্রিকেট মস্তিস্ক মহেন্দ্র সিং ধোনির কাছ থেকে সেই পরামর্শটাই মুস্তাফিজকে আনপ্লেয়েবল করে তোলে।
ক্রিকেটের এক্সপার্ট ও টেকনিক্যাল লোকরা নিশ্চয়ই আরো ভালো ব্যাখ্যা দিতে পারবেন। সামনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, আইপিএলের প্রথম ম্যাচের এই মুস্তাফিজকে খুব দরকার বাংলাদেশের। বাংলাদেশ থিংক ট্যাংক, টিম ম্যানেজমেন্ট প্লিজ খুঁজে দেখেন না- কি এমন জাদু আছে চেন্নাইয়ের কাছে-ধোনিদের কাছে, যাতে বদলে যান মুস্তাফিজ?