বার্নাব্যুতে ছয় গোলের রাতে কেউ হারেনি, ফুটবল জিতেছে!
ছয় গোলের ম্যাচ। ছয় গোলের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর কোনটা তা নিয়েও একটা প্রতিযোগিতা চলতে পারে! এমনই দুর্দান্ত সুন্দর সব গোল। একবার ম্যানচেষ্টার সিটি এগিয়ে তো খানিকবাদে ম্যাচে সমতা রিয়ালের লড়াকু গোলে। সেই আনন্দ শেষ না হতেই এবার রিয়াল লিড নিল। বিরতির পর পরিকল্পনা বদলে নামলো সিটি। অনিন্দ্য সুন্দর দুই গোলে ম্যাচে এবার এগিয়ে থাকার মর্যাদা নিল তারা।
রিয়ালের মাঠ থেকে জয় নিয়ে ফেরার আনন্দ উপলক্ষের অপেক্ষায় সিটির সমর্থকরা। ঠিক তখনই ম্যাচের শেষ অ্যাডভেঞ্চার দেখালো রিয়াল মাদ্রিদ। ভালভার্দের ভলিতে ম্যাচে সমতা। খেলা শেষের বাঁশি যখন বাজল, তখন স্কোরলাইন রিয়াল ৩, সিটি ৩।
এমন পাগলপারা ফুটবল আনন্দের অ্যাডভেঞ্চার্স রাত দেখল ফুটবল প্রেমিরা মঙ্গলবার। বার্নাব্যুর মাঠে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্রথম কোয়ার্টার ফাইনাল ড্র রাখার স্বস্তিদায়ক আনন্দ নিয়ে মাঠ ছাড়লো রিয়াল মাদ্রিদ। আর তিন গোল করেও প্রতিপক্ষের মাঠ থেকে জিততে না পারার ক্ষোভ নিয়ে ফিরল সিটি। তবে সামনের সপ্তাহে দ্বিতীয় পর্বের কোয়ার্টার ফাইনালে ম্যানচেষ্টার সিটি যে বিশাল চ্যালেঞ্জ- সেই চিন্তাও ঠিকই ছড়িয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ শিবিরে।
বার্নাব্যুতে প্রথম লেগের পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় মিনিটেই পেপ গার্দিওলার দল লিড নেয়। বার্নাদো সিলভা দারুণ দক্ষতায় ২৫ গজ দূর থেকে ফ্রি-কিক দেয়াল ঘেঁষে শট নিয়ে রিয়ালের গোলকিপার আন্দ্রি লুনিনকে পরাস্ত করেন।
আনন্দধারায় ফিরতে বেশি সময় নেয়নি রিয়াল। ১৪ বারের ইউরোপিয়ান কাপ জয়ী মাদ্রিদ সমতায় ফিরে ডিফ্লিক্টেড গোলে । এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গার দূরপাল্লার প্রচেষ্টা রুবেন দিয়াসের পায়ে লেগে দিকবদল করে সিটির জালে (১-১)। দুমিনিট পরে রদ্রিগোর গোলে ম্যাচে লিড পায় রিয়াল (২-১)। রদ্রিগোর শট ডিফেন্সে দাড়ানো ম্যানুয়েল আকানজির গোড়ালিতে লেগে বিপদ বাড়ায়। সিটির গোলকিপার স্টেফান ওর্তেগা অসহায়ভাবে দেখলেন বল জাল কাঁপাচ্ছে।
এগিয়ে থাকার এই আনন্দ নিয়ে বিরতিতে যায় রিয়াল। বিরতির পর আক্রমণের তেজ বাড়ায় সিটি। বল পেলেই শুরু হয় প্রতিপক্ষের ডিফেন্সে স্প্রিন্টের লড়াই। বল দখলের এই লড়াইয়ে রিয়ালও কম যায়নি। সিটিকে ম্যাচে সমতায় আনার আনন্দে ভাসান ফোডেন। পুরো ম্যাচে দুর্দান্ত পারফর্ম করা এই ফোডেন যে কোনাকুণি শট নিয়ে ম্যাচে সমতা আনেন সেই গোল সত্যিকার অর্থেই অনেক অনেকবার রিপ্লে করে দেখার মতো।
ম্যাচের বয়স তখন ৬৬ মিনিট। আকস্মিকক এই গোলের ধাক্কা সামলে নেওয়ার আগেই রিয়াল আরেকটি ধাক্কা খেল। ৭১ মিনিটের সময় লেফট-ব্যাক জোসকো গার্দিওল কাট ইন করে ডান পায়ের দারুণ এক শটে দূরের কর্নার খুঁজে নেন। দারুণ গোল (৩-২)! আরবি লাইপজিগ থেকে সিটিতে যোগ দেওয়ার পর এটি গার্দিওলের প্রথম গোল। যে অ্যাঙ্গেল থেকে ফোডেন ও গার্দিওল গোল দুটি করেন সেটা বিশে^র কোনো গোলকিপারের পক্ষে ঠেকানো সম্ভবপর হতো না। পাখির মতো এক কোনা থেকে আরেক কোনায় উড়ে গিয়েও বলে হাত লাগাতে পারেননি রিয়ালের গোলকিপার। এগিয়ে থাকার আনন্দে তখন গ্যালারিতে উড়ছে ম্যানচেস্টার সিটি।
ঠিক তখনই যাকে বলে রিগ্রুপ হওয়া- তাই করে দেখালো রিয়াল মাদ্রিদ। পিছিয়ে পড়ার ৮ মিনিটের মধ্যেই ম্যাচে শেষবারের মতো সমতায় ফিরে রিয়াল। ভালভার্দের ভলিশটে ম্যাচে হার বাঁচায় তারা (৩-৩)।
শেষের দশ মিনিট উভয় দল গোলের জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালায়। কিন্তু গোল আর হয়নি। ম্যাচে ৩-২ গোলে পিছিয়ে পড়ার পর মাঝমাঝে টনি ক্রুসের বদলি হিসেবে কোচ আনচেলত্তি লুকা মদ্রিচকে নামান। এই বদলিই মাঝমাঠ এবং ফাইনাল থার্ডে রিয়াল মাদ্রিদকে সত্যিকার অর্থেই বদলে দিল। বল দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে থাকা রিয়াল গোলেও ফিরলো।
পুরো ম্যাচে দুর্দান্ত পারফর্ম করা ফোডেন শেষের দিকে ইনজুরি নিয়ে মাঠ ছাড়েন। তবে সিটি জানিয়েছে তার ইনজুরি তেমন গুরুতর কিছু না। ডি ব্রুইন অসুস্থতার জন্য এই ম্যাচ খেলতে না পারায় মাঝমাঠে তার জায়গায় খেলেন ফোডেন।
আক্রমণ পাল্টা আক্রমণ। বিল্ডআপ। প্ল্যানিং। গতি। নিখুঁত পাসিং। সুন্দর সব গোল। পারফেক্ট সাবস্টিউট। বার্নাব্যুর এই ম্যাচ মঙ্গলবারের রাতকে সত্যিকার অর্থেই ফুটবল আনন্দে ভাসিয়েছে।
ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, জুড বেলিংহ্যাম ও রদ্রিগো ঠিকই জেনে গেছেন সামনের সপ্তাহে সিটির মাঠে দ্বিতীয় লেগের কোয়ার্টার থেকে হাসি নিয়ে ফিরতে হলে তাদের আরো নিঁখুত হতে হবে। ভিনিসিয়ুস জুনিয়র প্রথমার্ধে যে দুটি সহজ গোলের সুযোগ মিস করেছেন, বিগ ম্যাচে অমন মিস মানায় না।
নিজ মাঠে ম্যানচেস্টার সিটি সবসময় দুর্ধর্ষ। ১৭ এপ্রিল সিটির মাঠে দ্বিতীয় লেগের লড়াইয়ে নামার আগে নিশ্চয়ই গত মৌসুমের ম্যাচের কথা এবং ফল রিয়ালের মনে থাকার কথা।
ইত্তিহাদ স্টেডিয়ামে সেই ম্যাচে সিটি ৪-০ গোলে রিয়ালকে ধসিয়ে দিয়েছিল। সামনের বুধবারের রাতে সেই দুঃস্বপ্ন কাটিয়ে উঠতে মরিয়া রিয়াল।