লগান, চাক দে ইন্ডিয়া...

লগান, চাক দে ইন্ডিয়া...

রুপালি পর্দা আমাদের যাপিত জীবনকেই ধারণ করে! প্রতিদিনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার গল্পই বন্দি হয় সেলুলয়েডে! সেই গল্প বাছাই করতে গিয়ে নাটকীয়তা, রোমাঞ্চ, সংগ্রাম, প্রেম কিংবা বিরহকে বেছে নেন পরিচালকরা। এতসব কিছুর সমন্বয় বুঝি ক্রীড়াঙ্গনের তারকাদের জীবনেই থাকে! কী নেই তাদের জীবনে-দুঃখ, কষ্ট, প্রেম, ভালোবাসা, লড়াই, জয়ের গৌরব! সবশেষে জীবনের মানেটাও খুঁজে পাওয়া যায় তাদের জীবন সংগ্রামে। তাই তো বারবারই বলিউড আর হলিউডের নির্মাতারা তৈরি করেছেন ক্রীড়াবিদ কিংবা খেলার কাহিনি নিয়ে সিনেমা।

ভাগ মিলকা ভাগ...
এই তো কিছুদিন আগেই নির্মিত হল ভারতীয় অলিম্পিয়ান মিলকা সিংয়ের জীবন নিয়ে সিনেমা ‘ভাগ মিলকা ভাগ’। ফারহান আখতার দারুণ ফুটিয়ে তোলেন কিংবদন্তি মিলকা সিংয়ের জীবন। সেই ১৯৬০ সালে রোম অলিম্পিকে ৪০০ মিটার স্প্রিন্টে একটুর জন্য পদক হাতছাড়া করেছিলেন ভারতের সাবেক এ স্প্রিন্টার। তিনি সময় নিয়েছিলেন ৪৫.৬০ সেকেন্ড। প্রথম চারজনই ভেঙে দিয়েছিলেন অলিম্পিক রেকর্ড! দুর্ভাগ্য-সেকেন্ডের ভগ্নাংশে ব্রোঞ্জ মিস হয় মিলকার। সেই আফসোস এখনও রয়ে গেছে তার। অনেকেই বলেন, ফিনিশিং লাইন টাচ করার আগে মিলকা যদি পেছন ফিরে না তাকাতেন, তাহলে ব্রোঞ্জ অন্তত উঠত তার হাতে। পরিচালক রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহেরা এ কিংবদন্তি স্প্রিন্টারের জীবনের উত্থান-পতনের গল্প তুলে এনেছেন নিপুণভাবে। ভারত-পাকিস্তান ভাগের সময় দাঙ্গায় বাবা-মাকে হারান মিলকা। শুরু হয় তার সংগ্রাম। শুরু হয় দৌড়! ‘ভাগ মিলকা ভাগ’ মুভিটি শুধু শিক্ষামূলক ব্যাপারেই ঠাসা নয়, বিনোদনেও ভরপুর। তাই তো ভারতীয় বক্স অফিসেও বেশ আলোড়ন তোলে এ সিনেমাটি। মুক্তি পাওয়ার প্রথম ২৪ দিনে আয় করে ১০৪ মিলিয়ন রুপি!

আমির খানের লগান
ব্যবসা সফল ছিল ২০০১ সালে মুক্তি পাওয়া ‘লগান’ মুভিটিও। পরিচালক আশুতোষ গোয়াড়িকরের এ সিনেমা ভারতের স্বাধীনতার আগের পটভ‚মিতে নির্মিত। তখন এ অঞ্চলের শাসক ব্রিটিশরা। সেই সময়ের এক গ্রামের কাহিনির ওপর নির্মিত মুভিটি। ‘ক্রিকেট ম্যাচে ইংরেজদের হারাতে পারলে কর থেকে ছাড় পাওয়া যাবে। একই সঙ্গে ইংরেজরা গ্রাম ছেড়ে চলে যাবে’-এই ছিল শর্ত। সমস্যা হচ্ছে গ্রামের মানুষরা ক্রিকেট খেলতে জানত না। তখন এগিয়ে আসে ভুবন নামের এক যুবক। এ সিনেমাতে ভারতের ইতিহাস, ক্রিকেট এবং ক্রিকেট প্রেমকে সহজ-সরলভাবে তুলে ধরা হয়েছে! মুভির কাহিনি, কলাকুশলী, দৃশ্যায়ন, গান সবই ছিল অনন্য। নানা নাটকীয়তা আর রোমাঞ্চে ঠাসা লগান মুভির গল্প। বক্স অফিস সুপার হিটের পাশাপাশি এ সিনেমা অস্কার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়। যদিও একটুর জন্য সেরা হতে পারেনি। তবে বিখ্যাত ম্যাগাজিন ‘টাইম’-এর রায়ে সর্বকালের সেরা স্পোর্টস মুভির তালিকায় শীর্ষে আছে লগান। টাইম ম্যাগাজিন লিখেছে-‘যারা ক্রিকেট খেলাটি সম্পর্কে কিছুই বোঝে না তাদের কাছেও মুভিটি দারুণ উপভোগ্য হবে। সঙ্গে সব দেশের, সব বয়সের, সব পেশার মানুষের মনকে ছুঁয়ে যাবে বলেই আমাদের দৃষ্টিতে এটিই সেরা স্পোর্টস মুভি।’

চাক দে ইন্ডিয়া
বলিউডে আলোড়ন তুলেছিল ২০০৭ সালে মুক্তি পাওয়া ‘চাক দে ইন্ডিয়া’ মুভিটিও। পরিচালক সিমিত আমিনের সেই সিনেমায় দেখা গেছে এক ব্যর্থ হকি খেলোয়াড়ের কোচ হিসেবে ফিরে আসার গল্প। কবির খান নামের সেই হকি খেলোয়াড়ের ভূমিকায় দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন বলিউড কিং শাহরুখ খান। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে কবির খান পেনাল্টি মিস করেন। তাতেই সেই ম্যাচে হেরে যায় ভারত। এরপরই কবির খানকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে পুরো ভারতে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। বলা হয়-মুসলিম কবির খান ইচ্ছে করেই আরেক মুসলিম দেশ পাকিস্তানের বিপক্ষে পেনাল্টি মিস করেছেন। প্রতিবেশীরাও প্রতিনিয়ত অপমান করতে থাকে তাকে। এরপর ক্ষোভে-দুঃখে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হন কবির। খেলোয়াড় জীবনের ইতি টেনে কোচ বনে যান তিনি। এরপর ভারতীয় মহিলা হকি দলের কোচের দায়িত্ব কেউ নিতে রাজি না হওয়ায় প্রেক্ষাপটে আসেন সেই কবির। ওই সময়টাতে ভারতীয় মহিলা হকি দল মানেই ব্যর্থতা নিত্যসঙ্গী। প্রাদেশিক দলাদলি নিত্যসঙ্গী। ঠিক তখনই কবিরের কোচিংয়ে ঘুরে দাঁড়ায় মহিলা হকি দল। শেষ পর্যন্ত তার কোচিংয়ে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয় মহিলা হকি দল। ফের নায়ক বনে যান কবির। সত্য ঘটনার ছায়া অবলম্বনে নির্মিত হয় মুভিটি। সিনেমাটি ভারতের সাবেক হকি খেলোয়াড় মিহিররঞ্জন নেগির জীবন থেকে অনুপ্রাণিত।

বলিউডের আরও মুভি...
মুম্বাইয়ে প্রায় প্রতিবছরই মুক্তি পাচ্ছে ক্রীড়াব্যক্তিত্ব কিংবা খেলার কাহিনিকে ঘিরে সিনেমা। তবে প্রথম মুভির কথা বললে বিশ্লেষকরা ফিরে যান সেই ১৯৫৯ সালে। সুবোধ মুখার্জি নির্মাণ করেছিলেন ‘লাভ ম্যারেজ’ নামের এক সিনেমা। যেখানে দেব আনন্দ অভিনয় করেছিলেন উঠতি এক ক্রিকেটারের ভ‚মিকায়। ১৯৮৪ সালে আলোড়ন তোলে পরিচালক মোহন কুমারের মুভি ‘অলরাউন্ডার’। ভারতের ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ জয়ের রেশ তখন ছিল বলেই হয়তো দর্শকরা সে সময় হলগুলোতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। এর এক বছর পরই প্রকাশ জা নির্মাণ করেন ‘হিপ হিপ হুররে’ নামে এক মুভি।

দেব আনন্দের পরিচালনায় ১৯৯০ সালে ‘আউয়াল নাম্বার’ মুভিটিও আলোচিত হয়েছিল। যেখানে ক্রিকেটকে ঘিরেই ছিল সিনেমাটির গল্প। ২০০৩ সালের ‘স্টাম্পড’ ও ২০০৫ সালে মুক্তি পাওয়া ‘ইকবাল’ মুভিটিও ক্রিকেটভিত্তিক।

ইমরান হাশমির মুভি মানেই সুপার হিট! তুমুল জনপ্রিয় এ অভিনেতাকে ২০০৮ সালে ‘জান্নাত’ মুভিতে দেখা যায় ক্রিকেট জুয়াড়ির ভ‚মিকায়। আলোড়ন তোলে কুনাল দেশমুখের এ সিনেমাটিও। এক বছর পরই বলিউড অভিনেত্রী রানী মুখার্জি বনে যান ক্রিকেটার। অনুরাগ সিংয়ের মুভি ‘দিল বলে হারিপ্পা’তে অসাধারণ অভিনয় করেছেন রানী।
সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনায় আসে ‘পাতিয়ালা হাউস’, ‘ফেরারি কি সাওয়ারি’, ‘কোই পো চে’, ‘প্রাণ সিং তোমার’। ভারতের কিংবদন্তি অ্যাথলেট প্রাণ সিংকে নিয়ে নির্মিত মুভিটি জাতীয় পুরস্কার জিতে নেয়!

আগামী বছরই বলিউডে মুক্তি পেতে যাচ্ছে বক্সার মেরি কমের জীবনী নিয়ে নির্মিত সিনেমা। যেখানে নাম ভ‚মিকায় অভিনয় করবেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। চরিত্রের সঙ্গে মিশে যেতে এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে সাবেক এ মিস ওয়ার্ল্ডের। মুক্তি পাওয়ার আগে ধুন্ধুমার আলোচনায় এ সিনেমা!

সম্পর্কিত খবর