নেভারকুসেন থেকে লেভারকুসেন
এলাম-দেখলাম-জয় করলাম। তিন শব্দে লেভারকুসেনের সাফল্যকে বর্ণনা করা যায় দলটির কোচ জাভি আলানসোক টানলে; তবে সেটা পূর্ণতা পায় না। গল্পের প্রয়োজনে ফিরে যেতে হয় বহু পেছনে-
১৯০৪ সালের ১ জুলাই ক্লাবটি বুন্দেসলিগায় নাম লেখালেও দীর্ঘ ১১৯ বছর বলার মতো তেমন কোনো সাফল্য ছিল না ক্লাবটির। বায়ার্ন মিউনিখ-বরুশিয়া ডর্টমুন্ড কিংবা লাইপজিগের মতো ক্লাবদের ভিড়ে দলটি ছিল পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মতো। রাজ্যের এক প্রান্তে একের পর এক শিরোপা উৎসব হলেও অপর প্রান্তে ফুটবল নিয়ে কোনো রং ছিল না। জার্মানির উত্তর রাইন নদীর ওয়েস্টফেলিয়া অঞ্চলের বাসিন্দাদের সঙ্গে ফুটবলের সম্পর্কটা ছিল কেবলই হারানোর, আক্ষেপের, না পাওয়ার। বেঅ্যারেনায় কতবার যে জয়ের খুব কাছে গিয়েও হতাশা সঙ্গী করে মাঠ ছাড়তে হয়েছে দলটির সমর্থকদের; সে কথা এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের থেকে কেই বা আর ভালো জানে।
দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা শুধিতে হইবে ঋণ-সেই ঋণের বোঝা মাথায় নিয়েই গত ২০২২ সালের অক্টোবরে প্রথমবারের মতো কোনো ক্লাবের কোচের দায়িত্ব নেন স্প্যানিশ কোচ জাভি আলানসো। আগে রিয়াল মাদ্রিদ ও রিয়াল সোসিয়েদাদকে কোচিং করার অভিজ্ঞতা থাকলেও সেটা ছিল বয়সভিত্তিক পর্যায়ে। সেই অভিজ্ঞতাটাও যে ফেলনা না সেটাই বুঝিয়ে দিলেন আলানসো। সবাইকে চমকে দিলেন তার প্রিয় ফরমেশন ৩-৪-২-১-এ।
বুন্দেসলিগায় লিখলেন নতুন ইতিহাস। নিজের প্রথম মেয়াদেই করলেন বাজিমাত। যেই লেভারকুসেন বুন্দেস লিগায় কার্যত পরিণত হয়েছিল নেভারকুসেনে। সেই দলটিকেই ১২০ বছর পর প্রথমবারের মতো জেতালেন লিগ শিরোপা। তাও পাঁচ ম্যাচ হাতে রেখে। ২৯ ম্যাচের কোনোটিতেই পরাজিত না হয়ে। বুন্দেসলিগার রাজা খ্যাত টানা ১১ আসরের চ্যাম্পিয়ন বায়ার্ন মিউনিখকে এক রকম পাত্তাই দিল না আলানসোর সৈন্যরা। টেবিলের দুইয়ে থাকা বায়ার্নের চেয়ে এখনও ১৬ পয়েন্টে এগিয়ে লেভারকুসেন। যেই ব্যবধান আর ঘোচানো সম্ভব নয়। তাই শিরোপা উদযাপনটাও সেরে ফেলেছে বেঅ্যারেনায় লেভারকুসেনের জয় দেখতে আসা সমর্থকরা।
এদিন শিরোপা জয়ের সকল প্রস্তুতি নিয়েই মাঠে হাজির হয়েছিল দলটির সমর্থকরা। আগেও পাঁচবার শিরোপার খুব কাছে গিয়ে শিরোপা না জেতার দুঃখ জানে এই সমর্থকরা। তবে এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। তাই প্রিয় দলের জার্সি, সঙ্গে পতাকা আর আতশবাজি নিয়ে এসেছিল সমর্থকরা। এমন দিনে হতাশ করেনি দলটির ফুটবলাররাও। ফ্লোরিয়ান উইর্টজ তো হ্যাটট্রিকেই রাঙিয়ে রাখলেন দলের এমন শিরোপা জয়ের মুহূর্তটি। তার হ্যাটট্রিকের দিনে ৫-০ গোলে উড়ে গেছে ভার্ডার ব্রেমন। এমন দিনে ফুটবলারদের সঙ্গে শিরোপা উদযাপনে সামিল হয়েছে দলটির সমর্থকরাও। নিরাপত্তা বেষ্টনী পেরিয়ে খেলা শেষ হওয়ার আগেই মাঠে নেমে এসেছিল দলটির সমর্থকরা। এরপর মাঠে বাহারি রং ছড়িয়ে, আতশবাজিতে শিরোপা উদযাপন সেরেছে লেভারকুসেন সমর্থকরা। ফুটবলারদের নিয়ে সেকি উন্মাদনা দলটির সমর্থকদের। যার মধ্যমণি ছিলেন দলটির কোচ আলানসো।
সব মিলিয়ে টানা ৪৩ ম্যাচ অপরাজিত এই দলটি। ছুঁয়ে ফেলেছে ২০১১-১২ মৌসুমে জুভেন্টাসের টানা ৪৩ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড। এই তালিকায় সবার ওপরে থাকা বেনফিকার অপরাজিত থাকার রেকর্ড ৪৮ ম্যাচের। যেই গতিতে এগুচ্ছে আলনসোর শিষ্যরা। তাতে সেই রেকর্ডটা টপকে গেলেও খুব বেশি অবাক হওয়ার থাকবে না। সেই প্রশ্নের উত্তর হয়তো মিলবে কদিন পরই। তবে গোনার বাইরে থেকে এসে বুন্দেসলিগার রাজমুকুট মাথায় জড়ানোও তো সহজ কিছু নয়।