১৯ বলে ৭ উইকেটের ম্যাচে ‘উনো রিভার্স’ ঠেকাল মুম্বাই

১৯ বলে ৭ উইকেটের ম্যাচে ‘উনো রিভার্স’ ঠেকাল মুম্বাই

‘উনো রিভার্স’। উনো খেলায় কার্ডটা খেলার গতি আর দিক দুটোই বদলে দেয়। তবে মিম সংস্কৃতিতে এই কার্ডটাকে ব্যবহার করা হয় ‘কামব্যাকের’ প্রতীক হিসেবে, কারো স্ক্রিপ্ট ফিরিয়ে দেওয়া হয় তাকেই। 

ম্যাচ রিপোর্টে মিম বুঝানোর কারণটা মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। আইপিএল ইতিহাসের সবচেয়ে সফল দলটার এবারকার মৌসুমের পরিস্থিতি উনো রিভার্সকেই মনে করিয়ে দিচ্ছে, পয়েন্ট তালিকার তলানিতে পড়ে আছে হার্দিক পান্ডিয়ার দল। ম্যাচটা হেরে গেলে ৭ ম্যাচে ৫ হার নিয়ে আরও তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা ছিল তাদের সামনে।

সেটা ঠেকানোর সম্ভাবনা ম্যাচের মাঝপথ পেরোনোর পরই দেখিয়ে ফেলেছিল দলটা। ১৯২ রানের পুঁজি নিয়ে বোলিংয়ে নেমে ১৪ রানেই ৪ উইকেট তুলে নিয়েছিল মুম্বাই। তখনই তাদের চোখরাঙানি দিতে শুরু করল আরেকটা ‘উনো রিভার্স’, অখ্যাত আশুতোষ শর্মা প্রায় ২০০ ছুঁইছুঁই স্ট্রাইক রেটে ফিফটিটা যখন করলেন, তখন মুম্বাই ম্যাচ থেকে ছিটকেই যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছিল। মুম্বাই সে উনো রিভার্সও ঠেকাল শেষমেশ। শ্বাসরুদ্ধকর এক ম্যাচে শেষমেশ পেল ৯ রানে। তুলে নিল ৭ম ম্যাচে নিজেদের তৃতীয় জয়। 

ম্যাচটা অনেক দিক থেকে ঐতিহাসিক। মুম্বাইয়ের সাবেক অধিনায়ক রোহিত শর্মা নিজের ২৫০তম আইপিএল ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন এদিন। এর চেয়েও বড় ইতিহাসের উপলক্ষ আছে! ম্যাচটা ছিল ১৮ এপ্রিলে। ১৬ বছর পেরিয়ে আইপিএল এদিন পা দিয়েছে ১৭তে। 

আইপিএলের জন্মদিনে, রোহিতের মাইলফলক ছোঁয়ার ম্যাচে সব মনোযোগ কেড়ে নিল মাঝের ১৯টা বল। মোহালির মুল্লানপুরে মুম্বাই ইনিংসের শেষ আর পাঞ্জাব ইনিংসের শুরুর ওই ১৯ বলে উইকেট গেল একে একে সাতটা! রান বন্যার আইপিএলে এমন কিছু খানিকটা চমকে দেওয়ার মতো বিষয়ই। 

মুম্বাই ইনিংসের শেষ ওভার চলছে তখন। ১৯০ এর আশেপাশে থাকা দলটা চোখ রাখছে ২০০ পেরোনো স্কোরে। ঠিক তখনই পাঞ্জাব পেসার হার্শাল পাটেল এলেন দৃশ্যপটে। প্রথমে টিম ডেভিডকে, এরপর রোমারিও শেফার্ডকে দেখালেন সাজঘরের পথ। শেষ বলে মোহাম্মদ নবীকেও করলেন রান আউট। শেষ ওভার থেকে এল মোটে ৭ রান, উইকেট গেল তিনটে। মুম্বাই আটকে গেল ১৯২তে।

এরপর মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের কালবোশেখির পালা। শুরুর ওভারে জেরাল্ড কোটজিয়া প্রথম দুই বলে ১০ রান দিয়ে বসলেন বটে, তবে তৃতীয় বলেই তুলে নিলেন উইকেট। এরপর আক্রমণে আসা যশপ্রীত বুমরাহ তিন বলের ব্যবধানে ফেরালেন বিপদজনক স্যাম কারান আর রাইলি রুশোকে। পরের ওভারের শুরুর বলে লিয়াম লিভিংস্টোন বিদায় নিলেন কোটজিয়াকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে। ১৯ বলে ৭ উইকেট চলে গেল দুই দলের। মুম্বাইয়ের শেষ ওভারে তিন উইকেট গেছে, তবে তাতে খুব একটা ক্ষতি হয়নি। এর আগে সূর্যকুমার যাদবের ৫৩ বোলে ৭৮ আর বাকিদের ছোট খাট ক্যামিওতে ভর করে লড়াইয়ের পুঁজিটা চলেই এসেছিল।

আসল ক্ষতিটা হয়েছে পাঞ্জাবের, ১৯৩ রান তাড়া করতে নেমে ১৪ রানে ৪ উইকেট খুইয়ে বসলে, বিশেষ করে বিদেশী ব্যাটারদের সবাই যখন সাজঘরে, তখন আর কীইবা বাকি থাকে ম্যাচের? তাই মুম্বাই নিজেদের তৃতীয় জয়টা সহজেই পেয়ে যাচ্ছে, এমন কিছুর গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল বেশ করে। ছোট ছোট প্রতিরোধগুলো গড়ে হারপ্রিত সিং, জিতেশ শর্মা আর শশাঙ্ক সিংরা যখন ফিরে যাচ্ছেন সাজঘরে, তখনও ভাবনাটা বদলে দেওয়ার মতো কিছু ঘটে যায়নি। 

ঘটল এরপর। আশুতোষ শর্মার এক ইনিংসে। শশাঙ্ক যখন ফিরছেন, ১৩তম ওভারে পাঞ্জাবের স্কোরবোর্ডে রান ১১১, উইকেট নেই ৭টা। সেই থেকে আশুতোষ লড়লেন একেবারে শেষ পর্যন্ত। যশপ্রীত বুমরাহকে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে ছক্কা মেরে শুরু, এরপর এক এক করে হাঁকালেন আরও ৬টা ছক্কা। ২০০র বেশি স্ট্রাইক রেটে যখন ৫০ ছুঁলেন, তখন মনে হচ্ছিল মুম্বাইয়ের উনো রিভার্স ঠেকানোর ম্যাচে আরও একটা উনো রিভার্স কার্ড বুঝি খেলেই দিল পাঞ্জাব!

হবেই বা না কেন? মুম্বাইয়ের ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার আকাশ মাধওয়ালের করা ১৬তম ওভার থেকে যখন ২৪ রান তুলে বসলেন আশুতোষ, তখন পাঞ্জাবের প্রয়োজন ছিল আর ২৪ বলে ২৮ রান। ক্রিকইনফো জানাচ্ছিল, স্বাগতিকদের জয়ের সম্ভাবনাটা ওই এক ওভারেই এক লাফে বেড়ে গেছে প্রায় ৭০ শতাংশ!

মুম্বাই শেষমেশ সে উনো রিভার্সটা ঠেকাল। যশপ্রীত বুমরাহ ১৭তম ওভার থেকে দিলেন তিন রান। তবে এরপরও ১৮ বলে ২৫ রান তো সহজই, বিশেষ করে উইকেটে যখন থিতু দুই ব্যাটার থাকবেন তখন।

মুম্বাই তখন ম্যাচে ফিরল কোটজিয়ার হাত ধরে। মিড উইকেটের ওপর দিয়ে তাকে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ দিলেন আশুতোষ। পরিস্থিতিটা ভোজবাজির মতো বদলে গেল তখনই। বুমরাহর ৩ রানের ওভারের পর কোটজিয়া দিয়ে গেলেন ২ রান। সমীকরণটা এসে ঠেকল ১২ বলে ২৩ এ।

পরের ওভারে আরেক থিতু ব্যাটার হারপ্রিত ব্রার গেলেন মুম্বাই অধিনায়ক পান্ডিয়ার ঝুলিতে। শেষ ব্যাটার কাগিসো রাবাদা এসে ছক্কা হাঁকিয়ে পাঞ্জাবকে খানিকটা আশা দেখিয়েছিলেন। তবে সেটা উবে গেল একটু পরই। ৩ বলে ৮ রান নিয়ে শেষ ব্যাটার হিসেবে রান আউট হলেন রাবাদা।

শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে ৯ রানের জয় নিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন অধিনায়ক পান্ডিয়া। ৭ম ম্যাচে তৃতীয় জয় তুলে নিয়ে তার দল যে চলে এসেছে পয়েন্ট তালিকার ৭-এ; তা না হলে তাদের পরিস্থিতি হতো পাঞ্জাবের মতো। সমান ম্যাচে পঞ্চম ম্যাচ হেরে তারা চলে গেছে পয়েন্ট টেবিলের ৯ নম্বরে। উনো রিভার্স ঠেকিয়ে তেমন পরিণতি ঠেকাল মুম্বাই, এখন এমন শ্বাসরুদ্ধকর জয় তাদের আইপিএল পরিস্থিতিটাকে ‘উনো রিভার্স’ দিতে পারে কি না, দেখার বিষয় সেটাই।

সম্পর্কিত খবর