তীব্র গরমে রিকশাচালকদের কষ্ট ছুঁয়েছে ক্রিকেটার বিথীকে

তীব্র গরমে রিকশাচালকদের কষ্ট ছুঁয়েছে ক্রিকেটার বিথীকে

তীব্র দাবদাহে পুড়ছে পুরো দেশ। যার প্রভাব পড়ছে জনজীবনে। বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষরা পড়েছেন মহা বিপাকে। রুটিরুজির তাগিয়ে ভয়াবহ এই গরম উপেক্ষা করেও রোজগার করতে রাস্তায় বের হতে হচ্ছে তাদের। খেটে খাওয়া এমন মানুষদের, বিশেষ করে এই গরমে রিকশাচালকদের নিদারুণ কষ্ট ছুঁয়ে গেছে সাবেক নারী ক্রিকেটার আরিফা জাহান বিথীকে।

তাদের কষ্ট লাঘবে মাথার ওপর ছাতা হয়ে দাঁড়িয়েছেন তিনি। সোমবার রংপুর নগরীর শাপলা চত্বরে নিজের প্রতিষ্ঠিত উইমেন্স ড্রিমার ক্রিকেট একাডেমি অ্যান্ড হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ২ শতাধিক রিকশাচালকের মাঝে বিতরণ করেছেন গরম সহনীয় ক্যাপ ও ছাতা। পরিবেশ বাঁচাতে ভবিষ্যৎতে দেশের ৬৪ জেলায় রোপণ করতে চান গাছ। আর সেই মহতী উদ্যোগের কথা স্পোর্টস বাংলা-কে জানালেন আরিফা জাহান বিথী।

তীব্র এই গরমে নিজের গড়া একাডেমিতে মেয়েদের নিয়মিত ক্রিকেট ব্যাকরণের তালিম দেন বিথী। নিজেও বড় হয়েছেন খেটে খাওয়া মধ্যবিত্ত পরিবারে। আর সে কারণেই বুঝতে পারেন এই গরমে খেটে খাওয়া মানুষের কষ্ট। যেই কষ্ট লাঘবেই নিজ হাতে রিকশাচালকদের মাথায় ক্যাপ পরিয়ে দিয়েছেন। সঙ্গে রিকশার সামনের অংশে লাঠি বেঁধে তার সঙ্গে ছাতা বেঁধে দিয়েছেন; যাতে কিছুটা হলেও স্বস্তির ছায়া পান রিকশাচালকরা।

যা নিয়ে বিথী বলেন, ‘আমি আসলে নিজেও মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসেছি। তাই নিম্ন আয়ের বা অসচ্ছল মানুষের কষ্টটা বুঝতে পারি। আর আমরা তো আসলে দেখছি এই গরমে কি পরিস্থিতি বাংলাদেশে। যেটা আসলে আগে কখনোই দেখিনি যা গত দুই-তিন বছরে দেখছি। যেখানে আমরা সাধারণ মানুষরাই ২-৩ মিনিট বাইরে থাকতে পারছি না। সেখানে যারা পেটের দায়ে কাজ করছে, বিশেষ করে রিকশা চালানো ভ্যান চালানো তাদের অবস্থা আসলে কি? অনেকে আসলে পানি দিচ্ছে। তবে পানি আসলে কতটুকু কাজে দেয়, আর তাছাড়া তারা যেহেতু লম্বা সময় বাইরে কাজ করছেন, তাই আমার কাছে মনে হয়েছে ছাতা ও ক্যাপ দেওয়াটা ভালো হবে। আর এই কার্যক্রম আমরা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করব।’

গত কয়েকদিনের গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে চোখ রাখলেও নজরে আসছে গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা। অনেকে তো এই কাঠফাটা গরমের মধ্যেই গাছ লাগানোর আহ্বান জানাচ্ছেন। সেই ট্রেন্ডে গা ভাসাচ্ছেন অনেক সোশ্যাল মিডিয়া স্টাররা। তবে এমন ভাবনা নেই বিথীর। গাছ লাগানো নিয়েও সুন্দর পরিকল্পনা আছে তার। সময়ের কাজ সময়েই করতে চান তিনি।

গাছ লাগানোর পরিকল্পনা সম্পর্কে বলেন, ‘গাছ লাগানোর পরিকল্পনা আছে, তবে সেটা এখন না। যখন বর্ষা হবে বিশেষ করে জুন-জুলাই মাসে আমরা বাংলাদেশের ৬৪টি জেলায় গাছ লাগাব। কিন্তু এখন গাছ লাগাব না। কারণ এই সিজনে গাছ লাগালে কতটুকু গাছের পরিচর্যা করতে পারব সেই নিশ্চয়তা তো দিতে পারছি না। কারণ রোদে বের হওয়াটাই তো কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তাই গাছ লাগাবো সামনের কুরবানি ঈদের পরে, বর্ষা শুরু হলে।’

২০১০ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে নিয়মিত ক্রিকেট খেলেছেন আরিফা জাহান বিথী। ঢাকার ওরিয়েন্ট স্পোর্টিং ক্লাব, কলাবাগান ও রায়েরবাজার ক্রিকেট দলের হয়ে নিয়মিত ওপেন করেছেন। স্বপ্ন দেখতেন জাতীয় দলের হয়ে খেলারও। তবে তার সেই স্বপ্ন ভেঙে যায় ২০১৭ সালে। অসুস্থতার কারণে চিকিৎসকের পরামর্শে ক্রিকেট ক্যারিয়ারকে বিদায় বলতে হয় তার। তবে ঠিকই ভালোবাসার ক্রিকেটটাকে পরম মমতায় আগলে রেখেছেন বিথী। দীক্ষা দিচ্ছেন নিজের এলাকার পিছিয়ে পড়া মেয়েদের।

একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে হয়েও গড়ে তুলেছেন উইমেন্স ড্রিমার ক্রিকেট একাডেমি। আর সেটা পরিচালনা করতে গিয়ে নিজের সংগ্রামের কথাও তুলে ধরেছেন বিথী। বলেন, ‘একাডেমিতে নিজে কোচিং করাচ্ছি, ঢাকা ফাস্ট ও সেকেন্ড ডিভিশনে কোচিং করাচ্ছি। আর সেখান থেকে যেই টাকা পাচ্ছি সেই টাকা দিয়েই আপাতত একাডেমিটা চলছে। এর বাইরে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো সাপোর্ট পাইনি। তবে চেষ্টা করছি, জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের পুরাতন জার্সি, কিটস, ব্যাট ও খেলাধুলার সামগ্রী নিয়ে তাদের যতটা সম্ভব সাহায্য করার।’

বিথী আরও বলেন, ‘গরম থাকলেও অনুশীলন আগের মতোই চালাচ্ছি। সামনেই মেয়েদের প্রিমিয়ার লিগ তো। আর আমাদের একাডেমি থেকে অনেক মেয়েই ফাস্ট ডিভিশন, সেকেন্ড ডিভিশন ক্রিকেট খেলছে। প্রিমিয়ার লিগে খেলছে চারজন। তাই অনুশীলন কমানোর সুযোগ নেই। আর সে কারণে আমরা অনুশীলনে বেশি পানি পানের ওপর জুর দিয়েছি।’

তীব্র এই গরমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হলেও চলছে ডিপিএল। সেই লিগের সূচি নিয়ে তার ভাবনার কথা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘ঘরোয়া ক্রিকেটটা আসলে অনেক কমই হয়। যদিও ছেলেদের কিছুটা বেশি হয় মেয়েদের তুলনায়। তাই আমার কাছে মনে হয় না লিগ পেছানোর কোনো দরকার আছে। আর তাছাড়া যারা এই লিগগুলো খেলে তারা সারা বছর অপেক্ষা করে থাকে এই খেলাগুলোর জন্য। আর সে কারণে লিগ নিয়ে আমার বলার তেমন কিছু নেই। তবে এটুকুই বলব, যেন ক্রিকেটারদের সুস্থ রাখতে পানির পরিমাণটা বৃদ্ধি করা হয়।’

সম্পর্কিত খবর