ব্যাটিং দীনতায় বিবর্ণ বাংলাদেশ
'পুরনো চাল ভাতে বাড়ে' এই প্রবাটার সত্যতা যে কতটুকু তার প্রমাণ এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে সাকিব আল হাসান এবং মুশফিকুর রহিমের ব্যাটিং৷ বুধবার লাহোরে এই জুটির সামনে আহামরি বোলিং নৈপুণ্য দেখাতে পারেনি পাকিস্তানের পেস অ্যাটাক। তবে এই দুইজন ব্যতীত টপ অর্ডার থেকে লোয়ার অর্ডার, ব্যর্থ সবাই। মুশফিকের ব্যাট থেকে ইনিংসের সর্বোচ্চ ৮৭ বলে ৬৪ আর সাকিবের ৫৭ বলে ৫৩৷ ইনিংসে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান নাঈম শেখ, মাত্র ২০। আগের ম্যাচেই এই মাঠেই বাংলাদেশ করেছিলো ৩৩৪ আর স্বাগতিকদের বিপক্ষে দুই দিনের ব্যবধানে মাত্র ১৯৩-তে অলআউট।
শঙ্কা ছিলো ডানহাতি ব্যাটাররা শাহিন শাহ আফ্রিদিকে কিভাবে মোকাবেলা করবেন সেটা নিয়েই। সঙ্গে নাসিম শাহ এবং হারিস রউফ - এই পেসত্রয়ীকে সামলানো। তবে পাকিস্তানের বোলাররা যতটা না আক্রমণাত্মক বোলিং করেছেন, তার চেয়ে বেশি ভজকট পাকিয়েছে বাংলাদেশের ব্যাটিং৷ ব্যাটাররা ফিরেছেন উইকেট বিলিয়ে। শুরুতেই উইকেট হারানোর পর ক্রিজে থিতু হওয়ার পরিবর্তে রান তোলাটাই যেনো বড় ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিলো।
তবে এই ক্ষেত্রে একদমই ব্যতিক্রম ছিলেন সাকিব-মুশফিক। আর এজন্যই ব্যতিক্রম স্কোরবোর্ডে তাদের অবস্থাও। দলীয় রানের খাতা খোলার আগেই মেহেদী মিরাজ সাজঘরে, নাসিমের বল বুঝতেই পারেননি। সাবলীল শুরু করেও লিটন দাস সুবিচার করতে পারেননি নামের প্রতি। শাহিনের বলে উইকেটের পেছনে নিজের উইকেট বিলিয়েছেন। আর হারিস রউফ তার চার উইকেটের শুরুটা করেছিলেন নাঈমের ক্যাচ নিজে নিয়েই, হয়েছেন টপ এজড।
৩১ রানে এক উইকেট থেকে থেকে ৪৫ রানে নেই তিন উইকেট। আগের দুই ম্যাচে ২০ এবং ০ রানে ফেরা তাওহীদ হৃদয় এদিনও হতাশ করেছেন। হারিস রউফের বল বুঝতেই পারেননি এই তরুণ তুর্কি৷
ম্যাচে এরপরের অধ্যায়টা অবশ্য বাংলাদেশের৷ সাকিব-মুশফিকের ২০ ওভারে ১০০ রানের জুটি। ১০ ওভারের আগেই চার উইকেট হারানোর পর এই জুটি বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরায়। লাহোরের ব্যাটিং বান্ধব উইকেটে যেভাবে ব্যাট করতে হয় সেটাই করেছেন এই দুই সিনিয়র। বিপর্যয় সামাল দেওয়া, উইকেটে টিকে থেকে রান তোলা এবং ইনিংস মেরামতের কাজটা দুজনই বেশ ভালোই করেছেন। পাকিস্তানের বোলারদের যে সাবলীলভাবে মোকাবেলা করা যায় সেটাই দেখিয়েছেন।
সে সাকিব-মুশফিকের শেষটাও হয়েছে খেয়ালি শটেই। ৩০তম ওভারে সাকিব ফাহিম আশরাফকে উইকেট দিয়ে আসেন। এরপর মুশফিক ফিরেছেন হারিসের বলে, যখন রানের চেয়ে দলের ইনিংস বড় করাটাই ছিল বেশি জরুরি।
তাদের বিদায়ের পর শামীম-আফিফরাও হাঁটলেন মিরাজ-লিটন-হৃদয়দের দেখানো পথে। ইনিংসে যখন ২০ ওভার বাকি তখনও ইনিংস না গড়ে করে ব্যাটারদের তাড়া ছিলো রান তোলার। শামীম এবং আফিফ দুইজনই আউট হন উচ্চাভিলাষী শট খেলতে গিয়ে। দুইজনই উইকেট বিলিয়েছেন ক্যাচ দিয়েই।
তাসকিন-হাসান-শরীফুল তিন টেলএন্ডার বল মোকাবেলা করেছেন সর্বমোট ছয়টা, রান এনেছেন মাত্র দুই। হাসান অবশ্য দুই বলে এক রানে অপরাজিত ছিলেন। তাসকিন শট ঠিক খেললেও বলের নিচে পৌঁছাতে না পারায় উইকেটরক্ষকের তালুবন্দি হয়েছেন। যেটার জন্য বোলার যতটা না বাহবা পাবেন, তার চেয়ে বেশী প্রশ্ন উঠছে তাসকিনের এভাবে আউট হওয়া নিয়েই। শরীফুলও নাসিমের বলের গতির সাথেই তাল মেলাতে না পেরে সাজঘরে ফেরেন।
বাংলাদেশের খামখেয়ালী ব্যাটিং আর পাকিস্তানের বোলিং এই দুইয়ের তুলনা করলে স্পষ্ট যে নিজেরাই নিজেদের বিপদ ডেকেছেন৷ সাকিব-মুশফিকের দুটো পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংসের প্রকৃতি যেন তা দেখিয়ে দিয়েছে চোখে আঙুল দিয়ে।