কোহলি বোঝালেন ক্রিকেট অংকও বটে, যার উত্তর মেলাতে পারে না বাংলাদেশ!

কোহলি বোঝালেন ক্রিকেট অংকও বটে, যার উত্তর মেলাতে পারে না বাংলাদেশ!

ম্যাচ শেষ হয়েছে অনেকক্ষণ হলো। সংবাদ সম্মেলনও শেষ। মিক্সড জোনে কথাবার্তা বলে ভারতের কেএল রাহুল এবং বাংলাদেশের তানজিদ হাসান তামিমও চলে গেছেন। ল্যাপটপ গুছিয়ে প্রেসবক্সের সিঁড়ি টপকে নামার সময় মোহাম্মদ আশরাফুলের সঙ্গে দেখা। এই বিশ্বকাপের রাইট হোল্ডার টি স্পোর্টসে বিশ্লেষকের কাজ করছেন আশরাফুল। প্রতিদিন মাঠ থেকে ম্যাচ শেষে বিশ্লেষণ দেন। ক্রিকেট মাঠে নতুন ভুমিকা বেশ ভালোই উপভোগ করছেন সাবেক অধিনায়ক।

-বিরাট কোহলির ইনিংসটা কেমন লাগলো?
পুরো অঙ্কের খেলা দেখলাম।
-অঙ্ক?

আশরাফুল তার ব্যাখ্যায় বললেন-যে কায়দায় শেষের দিকে এসে সেঞ্চুরি পুরো করলো সেটা তো পুরোই অঙ্ক। গুনে গুনে রান করে সেঞ্চুরি পুরো। সিঙ্গেলস এড়িয়ে ডাবলস নিয়ে এভাবে সুন্দর কায়দায় হিসেব মিলিয়ে সবাই সামনে বাড়তে পারে না। রান ও বলের সঠিক অঙ্ক কষতে হয় এখানে। কোহলি সেই হিসেবটা গনিতবিদের মতোই করেছেন।

কোহলির ইনিংসের শেষের অংশটা সত্যিকার অর্থেই তাই জানাচ্ছে। একেবারে ঐকিক নিয়মের ফর্মূলা মেনেই সেঞ্চুরিটা তুলে নিয়েছেন তিনি। ম্যাচ জেতার জন্য ভারতের টার্গেট ছিল ২৫৭ রান। ৩৮ ওভারের সময় স্কোরবোর্ড দেখালো ভারতের রান ৩ উইকেটে ২২৯। বিরাট কোহলির রান তখন ৭৩। সেঞ্চুরির জন্য তাকে করতে হবে আরো ২৭ রান। আর ম্যাচ জিততে তখন ভারতের প্রয়োজন মাত্র ২৮ রান। এই ২৮ রানের মধ্যে ২৭ রানই তাকে করতে হবে যদি সেঞ্চুরিসহ ম্যাচ জিততে হয়।

সমীকরণটা মেলাতে তাকে উৎসাহিত করেন তার ব্যাটিং সঙ্গী কেএল রাহুল। এই সময়টায় সিঙ্গেল রান নিলেই কোহলির সেঞ্চুরির সম্ভাবনা আরো কমে আসবে। তবে বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে সিঙ্গেল না নিয়ে নিজের ব্যক্তিগত মাইলস্টোনের জন্য দলের জয়কে দেরি করানোটাকে মন্দ দেখায়-এমনকিছুই বললেন কোহলি তার সঙ্গী কোহলিকে। সঙ্গী রাহুল যুক্তি দিলেন, কিছুটা দেরি করলে তেমন বড় কোনো সমস্যা হবে না। দল তো সহজ এবং বড় জয়ের পথেই আছে। এই সুযোগে যদি ব্যক্তিগত মাইলস্টোন অর্জন সম্ভবপর হয়, তাহলে কেন নয়?

রাহুলের যুক্তি মেনে বিরাট কোহলি অঙ্ক কষার ভঙ্গিতে সেখান থেকে তার সেঞ্চুরির ইনিংস সাজালেন। সেসময় অন্তত পাঁচটি নিশ্চিত সিঙ্গেল নেওয়ার সুযোগ ছিল তার সামনে কিন্তু তিনি সেটা এড়িয়ে গেলেন। বল বাউন্ডারি সীমানায় গেলেও এক রানের জন্য দৌড়ালেন না কোহলি।

৩৯ ওভার শেষে ম্যাচ জয়ের জন্য ভারতের প্রয়োজন ছিল আরো ২৬ রান। বিরাট কোহলির সেঞ্চুরির জন্যও ঠিক তখন প্রয়োজন ঐ ২৬ রানই। হাসান মাহমুদকে বিশাল ছক্কা হাঁকিয়ে কোহলির সেই অঙ্ক কষা ইনিংস শুরু। খানিকবাদে নাসুম আহমেদের বলে বাউন্ডারি ও ছক্কায় সেঞ্চুরির একেবারে কাছে। এর মধ্যে দারুণ দক্ষতার সঙ্গে ফাঁকা জায়গায় বল ঠেলে দৌড়ে দুটো ডাবলস রানও নিলেন। ৪২ ওভারের সময় ভারতের ম্যাচ জিততে প্রয়োজন ছিল ২ রানের। আর সেঞ্চুরি পুরো করার জন্য কোহলির চাই তখন আরো ৩ রান। ঠিক তখন নাসুম আহমেদ লেগসাইডে একটা বল দেন। ওয়াইড হতেই পারতো এটি। কিন্তু আম্পায়ার রিচার্ড কেটেলবোরো ওয়াইড কল করলেন না। বল করার আগে বিরাট কোহলি ইন এবং আউটের ভঙ্গিতে তার অবস্থান বদলান বলেই আম্পায়ার সেটা ওয়াইড কল করলেন না। দুই বল বাদে সামনে বেড়ে মিড উইকেটের ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে কোহলি ভারতকে এনে দিলেন বিশ্বকাপের চতুর্থ জয়। আর সেই সঙ্গে তার সেঞ্চুরি পুরো।

পুরোপুরি সরল অংকের সমাধান!

ভারত ম্যাচে এমন একটা অঙ্ক ছিল বাংলাদেশের সামনে। অঙ্কের শুরুটা বাংলাদেশ ভালোই করেছিল। ওপেনিং জুটিতে ১৫ ওভারে ৯৩ রানের ইনিংস সহজ সমাধানের ইঙ্গিত দিচ্ছিল। কিন্তু মাঝের ওভারে বাংলাদেশ খেই হারিয়ে বসে। ভুল অঙ্ক কষা সেখানেই শুরু। ১১ থেকে ৪০ ওভার-এই সময়টায় বাংলাদেশ এতো বেশি ডটবল খেললো যে খরচের খাতা বেশি ভারী হয়ে গেল।

৫০ ওভারের ম্যাচে বাংলাদেশ সবমিলিয়ে ২৬.৫ ওভার থেকে কোনো রানই করতে পারলে না! ১৫৯টি ডটবল খেললো! আর তাতেই তিনশ’র স্কোর ছাড়ানোর স্বপ্ন থেমে গেল ২৫৬ রানের মামুলি সঞ্চয়ে।

আর বোলিংয়ে তো শুরু থেকে শেষ পর্যন্তই সব অঙ্কে গরমিল। শর্টপিচ বল। কখনো জুসি ফুলটস। কখনো আবার ওভারপিচ। এমন বিশৃঙ্খল বোলিং যে দলের প্রিমিয়ার বোলার মুস্তাফিজুর রহমান তার কোটার মাত্র ৫ ওভার করার সুযোগ পেলেন!

ম্রিয়মান ব্যাটিং, নরম বোলিং, নতজানু দেহভঙ্গিমা। এক ম্যাচে এতো সমস্যা থাকলে সমাধান পাওয়া কঠিন।

ডেবিট- ক্রেডিট না মিললে অঙ্ক গলদ। পুনেতে ভারত ম্যাচে সেই ভুলই করল বাংলাদেশ।

মার্কশিটে তাই শূন্য!

সম্পর্কিত খবর