আর্জেন্টিনাকে প্রথম বিশ্বকাপ জেতানো কোচ মেনোত্তি আর নেই
১৯৩০ সাল থেকে শুরু হয়ে এখন পর্যন্ত ২২ বার বসেছে ফুটবল বিশ্বকাপের আসর। শুরুর সেই ১৯৩০ আসরে স্বাগতিক দেশ উরুগুয়ের হাতেই উঠেছিল বিশ্বকাপের ট্রফি। রানার্স-আপ ছিল আর্জেন্টিনা। এরপরের দশ আসরে ১৯৭৪ পর্যন্ত ফাইনাল পর্যন্তই যেতে পারেনি আর্জেন্টিনা। ১৯৭৮ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ আয়োজন করে তারা। সেবার ফের পৌঁছায় ফাইনালে এবং প্রথমবারের মতো শিরোপা ওঠে আকাশী-সাদা দলটির হাতে। ড্যানিয়েল পাসারেলা, লুইস গালভান, মারিও কেমপেসরা প্রথমবারের মতো এই বিশ্ব শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছিলেন কোচ লুইস মেনোত্তির অধীনে। আর্জেন্টিনাকে প্রথম বিশ্বকাপ জেতানো এই কিংবদন্তি কোচ আর নেই। মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিল ৮৫ বছর।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’- এর এক পোস্টে আজ (সোমবার) মেনোত্তির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এএফএ)।
সেই পোস্টে তারা লিখেছে, ‘আর্জেন্টিনা ফুটবল ফেডারেশন অত্যন্ত শোকের সঙ্গে বর্তমান জাতীয় দলের পরিচালক ও আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী কোচ লুইস সিজার মেনোত্তির মৃত্যুর খবরটি জানাচ্ছে। প্রিয় ফ্লাকো বিদায়!’
বুয়েনস আইরেসের এস্তাদিও মনুমেন্টাল স্টেডিয়ামে ২৫ জুন ১৯৭৮ সালে ফাইনালে ডাচদের ৩-১ ব্যবধানে হারিয়েছিল আর্জেন্টিনা। পরের আসর ১৯৮২ সালের স্পেন বিশ্বকাপ আর্জেন্টিনা দলের দায়িত্বেও ছিলেন মেনোত্তি। তবে সেই আসরে দ্বিতীয় রাউন্ডে শক্তিশালী ইতালি, ব্রাজিলদের গ্রুপ-’সি’ এর বাঁধা পেরোতে পারেনি তারা।
আর্জেন্টিনাকে প্রথম বিশ্বকাপ জেতানো ছাড়াও পরের বছর ১৯৭৯ সালে অনূর্ধ্ব-২০ দলকেও প্রথমবারের মতো যুব বিশ্বকাপও জিতিয়েছেন মেনোত্তি। জাপানে অনুষ্ঠিত সেই টুর্নামেন্টের সেরা ফুটবলার হয়েছিলেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা। এতে বলাই যায়, ফুটবল বিশ্বের তৎকালের জাদুকর ম্যারাডোনার কিংবদন্তি বনে যাওয়ার হাতে-খড়ি এই মেনোত্তির হাতেই।
১৯৩৮ সালে রোজারিওতে জন্ম মেনোত্তির। এই রোজারিও একটি বাড়তিভাবেই আলোচিত। কারণ, এই সময়ের ফুটবল বিশ্বের আরেক মহাতারকা লিওনেল মেসির জন্মটাও যে এই রোজারিওতেই। ১৯৬০ সালে ফুটবল ক্যারিয়ারটা শুরু করলেও জাতীয় দলে ১৯৬৩ সালে অভিষেক মেনোত্তির। বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের সাবেক এই স্ট্রাইকার ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত খেলেছেন ১১টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ। দুটি গোলও করেছেন।
তবে ফুটবলার ছাপিয়ে মেনোত্তির কোচিং ক্যারিয়ার ছিল বেশি সমৃদ্ধ। ১৯৭৪ থেকে ১৯৮৩, প্রায় এক দশক ধরে ছিলেন আর্জেন্টিনা জাতিয় দলের দায়িত্ব। পরে ১৯৯১ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ছিলেন মেক্সিকো জাতীয় দলের কোচ হিসেবে।
মেনোত্তির মৃত্যুতে নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টের এক পোস্টে শোক প্রকাশ করেছেন লিওনেল মেসি। একই শহরে জন্মগ্রহণ ছাড়াও ফুটবল বিশ্ব মুকুট যার অধীনে তাকে যেন স্মরণ করতেই হতো এই তারকা ফুটবলারের। সেই পোস্টে মেসি লিখেন, ‘আর্জেন্টিনা ফুটবলের মহানদের অন্যতম একজন আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। তার পরিবার এবং প্রিয়জনদের প্রতি সমবেদনা।’
বয়সের শেষ দিকে এসে অসুস্থতায় ভুগছিলেন মেনোত্তি। আর্জেন্টিনার গণমাধ্যমের মতে, রক্তশূন্যতায় ভুগে মৃত্যুর আগে প্রায় মাসখানেক হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি।