সুজনের বিশ্বকাপ দলে লিটন থাকছেন!

সুজনের বিশ্বকাপ দলে লিটন থাকছেন!

বাংলাদেশ ৩, জিম্বাবুয়ে ০।
পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম তিনটিতে জিতে সিরিজ আগেভাগেই জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ। তবে দল সিরিজ জিতলেও টিম ম্যানেজমেন্টের জন্য এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় চিন্তার নাম হয়ে দাঁড়িয়েছেন লিটন দাস। আরেকটু সুনির্দিষ্ট করে বললেন লিটন দাসের ব্যাটিং ফর্ম।

শেষ ছয়টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তার একটিও কার্যকরী কোনো ইনিংস নেই। রানই পাচ্ছেন না তিনি, দলের জন্য কার্যকর হবেন কিভাবে? শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে মার্চে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টিতে তার রান ছিল সাকুল্যে ৪৩। প্রথম ম্যাচে ০, দ্বিতীয় ম্যাচে ৩৬ তৃতীয় ম্যাচে ইনিংস শেষ তার ৭ রানে।

জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে সিরিজের প্রথম তিন ম্যাচেও তথৈবচ। ১, ২৩ ও ১২ রান তিন ম্যাচে। শেষ ইনিংসে যে কায়দায় তিনি বোল্ড হয়েছেন সেটা আরো দৃষ্টিকটু। দু’বার ব্যাটকে চামচের মতো বানিয়ে শট খেলতে ব্যর্থ হন তিনি। কোনো মতে বেঁচে যান। তৃতীয়বারও সেই একই চেষ্টা করলেন। এবার আর রক্ষা হলো না। ব্লেসিং মুজারাবানির বলে স্ট্যাম্প উড়ে গেল তার।

দেখে মনে হচ্ছে রানে ফেরার জন্য লিটন একটু বেশি তাড়াহুড়ো করছেন। দলের ওপেনার টানা ছয় ম্যাচে যখন এমনভাবে ব্যর্থ হবেন তখন টিম ম্যানেজমেন্টের কপালে তো দুশ্চিন্তার মেঘ থাকবেই। তবে লিটনের সৌভাগ্য যে তিনি এখনো পুরো দলের থিঙ্কট্যাঙ্কদের কাছ থেকে অকুণ্ঠ সমর্থন পাচ্ছেন।

এবারে ঘরোয়া ক্রিকেট প্রিমিয়ার লিগে লিটন খেলেন আবাহনী লিমিটেডের হয়ে। তবে জাতীয় দলের ব্যস্ততার জন্য সব ম্যাচ তিনি খেলতে পারেননি। তাতে আবাহনীর অবশ্য তেমন বড় কোনো ক্ষতি হয়নি। তাকে ছাড়াই আবাহনী অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়। আবাহনীর এই চ্যাম্পিয়ন দলের কোচ খালেদ মাহমুদ সুজনও জাতীয় দলের ওপেনার লিটনের ফর্ম নিয়ে কিছুটা চিন্তিত।

-এই ফর্মের সঙ্কট থেকে লিটনের বেরিয়ে আসার উপায়টা কি? এই প্রসঙ্গে নিজের ব্যাখ্যায় সুজন বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।
শুনি লিটনের সমস্যা সমাধানের জন্য সুজন কি প্রেসক্রিপশন দিলেন।

সুজন বলছিলেন- ‘আমার মনে হয় লিটনের খেলার যে ধাঁত বা চরিত্র, সে এখন সেটার বিরুদ্ধে ক্রিকেট খেলছে। তবে একটা বিষয় আমি একটু পরিষ্কার করতে চাই আমি যেহেতু এখন তাকে কোচিং করাই না তাই আসল কারণটা হয়তো বলতে পারবো না। তবে আমার বিশ্লেষণ যদি জানতে চান তাহলে আমি বলতে পারি, যে ছেলে কাভারের উপর দিয়ে ছক্কা মারতে পারে, স্কয়ার ড্রাইভে অনায়াস ভঙ্গিতে বাউন্ডারি মারতে পারে- সে কেন ইনিংসের শুরুতে এত ঝুঁকিপূর্ণ রাফ শট খেলবে? আমি ঠিক এটা বুঝে উঠতে পারি না। প্রি-ডিসাইডেড শট কেন খেলবে একজন ওপেনার? এত বাইরের বল ইনিংসের শুরুতে একবার না দুবার খেলতে ব্যর্থ হওয়ার পর তৃতীয় বার আবার কেন একই ঝুঁকিপূর্ণ শট চেষ্টা করবে?’

সুজন আরও বলেন, ‘ইনিংসের শুরুতে এ ধরনের শট লিটনের মত ব্যাটসম্যানদের খেলাটা মানায় না। কারণ লিটন তো সব ধরনের শট খেলতে পারে। যারা সব ধরনের শট খেলতে পারে না তারাই হয়তো ইনিংসের শুরুতে রান পাওয়ার জন্য এই ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ শট খেলে থাকে। কিন্তু লিটন তো সব পারে। লিটন একটা বলকে উইকেটের চারদিকে মারার যোগ্যতা রাখে সেই সক্ষমতা রয়েছে তার। এজন্যই সে ভালো খেলোয়াড়। সোজা শটস খেলা, কাভারের উপর দিয়ে বোলারস ব্যাক ড্রাইভ এমন সব শটস তো তার খেলা প্রয়োজন। তার উচিত বোল্ড ভঙ্গিতে ব্যাটিং করা। ব্যাটিং ও ফর্ম নিয়ে চারদিক থেকে তাকে নিয়ে এত কথাবার্তা যখন হচ্ছে তখন সব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে জাস্ট ফ্রি মেজাজে ব্যাটিং করা উচিত তার। কিন্তু এই মুহূর্তেও তার ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছে সে খুব কনজারভেটিভ ক্রিকেট খেলতে চাচ্ছে। যা তার সমস্যা আরো বাড়াচ্ছে। এই কনজারভেটিভ ক্রিকেট খেলে লিটন কখনোই সাকসেসফুল হতে পারবে না। আমি জানিনা লিটন প্রসঙ্গে আমি যে ব্যাখ্যা দিচ্ছি দিচ্ছি সেটা হয়তো ভুলও হতে পারে। তবে আমি যে লিটনকে চিনি সেই লিটন যদি তার স্বাভাবিক খেলাটা খেলে তাহলে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়।’

দুয়ারে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কড়া নাড়ছে। কদিনের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বকাপ জন্য চূড়ান্ত দল ঘোষণা করবে। এই দলে এমন ফর্মহীন লিটন দাসের থাকা উচিত কিনা সেই প্রশ্নের উত্তরে খালেদ মাহমুদ সুজনের ব্যাখ্যাটা পরিষ্কার-‘এটা পুরোপুরি নির্বাচকদের সিদ্ধান্তের বিষয়। তবে আমার মতে, অভিজ্ঞতা বিবেচনায় অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।’

অর্থাৎ সুজনের বিশ্বকাপ দলে লিটন দাস থাকছেন।

সম্পর্কিত খবর