ওয়ার্নকে দেখে ভাবতাম, আমাকে ওর মতোই হতে হবে

ওয়ার্নকে দেখে ভাবতাম, আমাকে ওর মতোই হতে হবে

নাম জনাথন ক্যাম্পবেল। সিরিজ শুরুর আগে থেকেই তিনি ছিলেন আলোচনায়। নামটা কি পরিচিত লাগছে? তিনি অপরিচিত থাকলেও তার বাবা অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেল জিম্বাবুয়ে এবং বাংলাদেশের ক্রিকেটে অনেক পরিচিত এক নাম।
অ্যালিস্টার অবশ্য শুধু তার বাবাই নন, তার অনুপ্রেরণা, তার কোচও বটে। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে জনাথন কথা বললেন তার বাবা, তার ক্যারিয়ার, অন্যান্য খেলায় তার ঝোঁক ও জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট সম্পর্কে তার ভাবনা নিয়ে। তার পুরো সাক্ষাৎকারটা দেখে নেওয়া যাক চলুন-  

ওই ম্যাচের পরে বাবার সঙ্গে কথা হয়েছিল?
হ্যাঁ, অবশ্যই। আমাদের সবসময়ই কথা হয়। প্রতি ম্যাচের পরই আমাদের কথা হয়। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম আমার খেলা কেমন লেগেছে, আমি ভালো করেছিলাম, তারও খেলাটা দেখে ভালো লেগেছে।

আপনার বাবা একজন জিম্বাবুইয়ান গ্রেট। বিষয়টা তো চাপেরও, কারণ আপনার ওপর প্রত্যাশার চাপ বেশ এখন…
হ্যাঁ, চাপ তো আছেই। কারণ তার ইতিহাস বেশ ভালো, যেখানেই খেলেছেন, রান করেছেন। তো আমাকে চেষ্টা করতে হবে, অনেক বেশি রান করতে হবে।

তো, হ্যাঁ, প্রত্যাশাটা অনেক বেশি। তবে বিষয়টা ভালো, কারণ আপনি জানেন আপনার সামনে লক্ষ্যটা কী। কী করলে আমি সফল হব, সেটা এখন জানি আমি।

ব্যক্তিগত দিক থেকে দেখলে, আমি এসব প্রত্যাশা একপাশে রেখে খেলার চেষ্টা করি। যা হয় হবে। তবে আমি ক্রিকেটটাকে উপভোগের চেষ্টা করি, দিনশেষে আমি মাঠে নামিই ক্রিকেটটাকে ভালোবাসি বলে। সেটাই নিজেকে মনে করিয়ে দিতে চাই সবসময়। 

যখন আপনি বড় হয়ে উঠছেন, তখন তাকে দেখাটা কতটা অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে?
অবশ্যই অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। সত্যি বলতে, তিনিই আমাকে ক্রিকেটে আসার পেছনে নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছেন। আমি এখনও আমার বাবার ভিডিওগুলো দেখি। বাংলাদেশ, পাকিস্তানের বিপক্ষে, কিংবদন্তি সব খেলোয়াড়ের বিপক্ষে তাকে খেলতে দেখি, তাদের বিপক্ষেও তিনি সফল ছিলেন। তো হ্যাঁ, তিনি আমার একটা বড় অনুপ্রেরণা, এখনও আমার খেলা দেখে অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছেন।

কিন্তু গলফের প্রতি আপনার আগ্রহটাও তো ছিল আকাশছোঁয়া!
হ্যাঁ, আমি গলফ ভালোবাসি। কিন্তু ক্রিকেট আমার জন্য এক নম্বর খেলা। গলফ মূলত একটা শখের মতো। ক্রিকেট তৃপ্তি দেয়, গলফ আনন্দ দেয়। তবে বিষয়টা বেশ ভালো।

গলফ মনে হয় আপনার ব্যাটের সুইংয়ের জন্য আপনাকে সাহায্য করেছে!
হ্যাঁ অবশ্যই। ফ্রি ফ্লোইং সুইংটা সবসময়ই সাহায্য করে। গলফে আপনি যত বেশি সম্ভব স্যিং করাতে পারবেন, একই রকম হওাতে ক্রিকেটেও খানিকটা সাহায্য পাচ্ছি।

ক্রিকেট কবে থেকে শুরু করলেন, কীভাবে শুরু করলেন?
একেবারে ছোট বয়স থেকে শুরু করেছি। কারণ আমি আমার বাবাকে দেখেছি তখন। ছোট ছিলাম, তখন শক্তি কম ছিল, ক্রিকেটের জন্য যা যথেষ্ট ছিল না। অনেক খেলাই খেলতাম তখন, স্রেফ ক্রিকেটে আবদ্ধ হয়ে যাইনি। হকি খেলেছি, বেশ ভালো টেনিস খেলতাম। আরও অনেক খেলা খেলেছি। ১৮ বছর বয়সে সিদ্ধান্ত নিলাম, যে ক্রিকেটই খেলব। ইংল্যান্ডে গেলাম, স্কুলে এক বছরের বিরতি নিলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া কিংবা ক্রিকেট খেলা দুটোর একটা বেছে নিতে হতো, আমি ক্রিকেটকেই বেছে নিয়েছিলাম।

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেকের পর ৫ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে আন্তর্জাতিক ম্যাচের জন্য…
আমি ধৈর্য্য ধরে গেছি। আমি আশা করছিলাম। আরও আগে অভিষেক হলে খুশি হতাম। কিন্তু এখন মনে হয় ঠিক সময়ে এটা এসেছে। এখন আমি খেলোয়াড় হিসেবে অনেক পরিণত। আন্তর্জাতিক অভিষেকের দিন আমার নিজেকে অচ্ছ্যুত মনে হয়নি, মনে হয়েছে এখানে থাকতেই আমি জন্মেছি, এখানেই আমার থাকা চাই।

বাবা বাদে আর কে আপনার কোচ?
বাবা বাদে গ্যারি ব্রেন্ট আমার অন্যতম কোচ ছিলেন। স্টিভ কিরবিও, তিনি জাতীয় দলের বোলিং কোচ ছিলেন। এই বছর তিনি আমাকে বলেছেন ফ্র্যাঞ্চাইজি বদলাতে। আমি তার ফ্র্যাঞ্চাইজিতে (সাউদার্ন রক) যোগ দিয়েছি। তিনি বলেছিলেন, শোনো আমি বিশ্বাস করি যদি আমরা একটা মৌসুম তোমাকে এখানে পাই, তুমি জাতীয় দলে জায়গা করে নিতে পারবে, যদি তুমি ঠিকঠাক খেল।’

লেগ স্পিনটা কীভাবে এল?
সাত বছর বয়সে আমি আর সব বাচ্চাদের মতো দৌড়ে এসে গায়ের জোরে বল করার চেষ্টা করতাম। এরপর আমার দাদা আমাকে বললেন, না তুমি অনেক ছোট, তুমি পেস বল করতে পারবে না। তিনিই আমাকে লেগ স্পিনার বানিয়ে দিলেন, বললেন, এই ধরনের বোলাররা উইকেট পায় অনেক।

সেটাই আপনার জীবনের সত্য হয়ে গেল!
তখন লেগ স্পিনার হিসেবে ছিলেন শেন ওয়ার্ন। তখন তাকে উইকেট নিতে দেখতাম, আর নিজেকে বলতাম তোমাকে তার মতোই হতে হবে। 

জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট এখান থেকে কোথায় যেতে পারে? টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে না খেলতে পারাটা কতটা দুঃখ দেয় আপনাকে?
খুবই হতাশার। মানে যদি আপনি বিশ্বকাপের দলগুলো দেখেন, তাহলে আপনি বলতে পারবেন না জিম্বাবুয়ে ওখানে জায়গা করে নেওয়ার যোগ্য ছিল না। বিষয়টা লজ্জার।

তবে এটা এখন অতীত। এ নিয়ে আমরা কিছুই করতে পারব না। সেখান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশের বিপক্ষে দুই ম্যাচের পর ভারতের বিপক্ষে সিরিজ আছে। এখানে আমরা একাধিক ম্যাচ জেতার আশা করেছিলাম। তবে আমরা আমাদের সেরা ক্রিকেটটা খেলিনি। তবে কিছু কিছু মুহূর্তে ভালো খেলেছি। আমি মনে করি ভারত সিরিজটা আমাদের জন্য অনেক বড় মঞ্চ হতে যাচ্ছে। এরপর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচও আছে। আগামী কয়েক মাসে জিম্বাবুয়ের অনেক ম্যাচ আছে।

২০২৭ বিশ্বকাপের দিকে চেয়েও মুখিয়ে আছি। সেখানে অনেক বেশি ক্রিকেট খেলার নিশ্চয়তা আছে আমাদের। সেটার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা। আমি মনে করি বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়েকে অন্যরকম একটা দল হিসেবেই দেখবেন। আর বিশ্বকাপটাও দেখার মতো একটা বিশ্বকাপ হবে। 

সম্পর্কিত খবর