এক যুগ পরও সেই শেবাগ, সেই একই বাংলাদেশ

এক যুগ পরও সেই শেবাগ, সেই একই বাংলাদেশ

১৬ জানুয়ারি ২০১০। চট্টগ্রামে ভারত-বাংলাদেশ মুখোমুখি টেস্ট সিরিজে। শীতের সকালে মাঠের খেলা উত্তাপ ছড়ানোর আগেই সিরিজটায় রীতিমতো ‘আগুন’ই ধরিয়ে দিয়েছিলেন বীরেন্দর শেবাগ। বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের যা অর্ডিনারি বোলিং, তাতে মনে হয় না তারা আমাদের দশ উইকেট তুলে নিতে পারবে!’
খেলোয়াড়ি জীবনেই কোনো প্রকার বিনয়ের ধার ধারেননি। ঠোঁটকাটা শেবাগ এখন তা করবেন কেন? সময়ের সাথে সাথে তাঁর কথার ধার বেড়ে গেছে আরও। এই তো, ২০২৩ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ যখন মুখোমুখি হতে যাচ্ছে ভারতের, তাঁর ঠিক আগে তিনি করলেন আরেক বিস্ফোরক মন্তব্য, বললেন, ‘বাংলাদেশকে তো আমরা এমনিই হারিয়ে দিতে পারব, এ আর এমন কী!’ ম্যাচে হয়েছেও তাই, বাংলাদশ কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়তে পারেনি রোহিত শর্মাদের বিপক্ষে।
ম্যাচের আগেই যিনি বলতে পারেন অমন কথা, সেই শেবাগ ম্যাচের পরে চুপ থাকবেন কেন? থাকেননি। অকপটে বলে দিলেন, ‘বাংলাদেশ তো বাংলাদেশই, তাদের দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড না ভাবাই ভালো।’ প্রায় এক যুগ এদিক ওদিকে শেবাগের দুটো কথায় একটা জায়গা মিলে যাচ্ছে খুব। আর সেটা হচ্ছে, তাচ্ছিল্য। ২০১০ এ জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামের প্রেস কনফারেন্স রুমে যে তাচ্ছিল্যটা ছিল, সেটা ২০২৩ সালে এসে কমেনি বরং বেড়েছে বহুগুণে।
তবে তখনকার সঙ্গে এখনকার পার্থক্য আছে একটা। সেবার শেবাগের কথার জবাবটা মাঠেই দিয়েছিল বাংলাদেশ। অন্তত প্রথম ইনিংসে তো বটেই, ভারতকে অলআউট করেছিল ২৪৩ রানে। পরের ইনিংসেও ভারত ইনিংস ঘোষণা না করলে হয়তো তাঁদের অলআউটই করতেন সাকিব আল হাসান, শাহাদাত হোসেনরা। তবে সেবারের মতো এবার এবার জবাবটা দেওয়া হয়নি মাঠের খেলাতে। দারুণ শুরুর পর মিডল অর্ডারের হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়া, এরপর শেষের ব্যাটিংয়ে কোনোরকমে আড়াইশো পার। বল হাতে এরপর অসহায় আত্মসমর্পণ। বাংলাদেশ আরও বেশি সমালোচনার দুয়ারই খুলে দিয়েছে।
বাজে পারফর্ম্যান্সের পর সমালোচনা হবেই। তবে ১৩ বছরের এদিক ওদিকে ধেয়ে আসা সমালোচনা, তাচ্ছিল্যের ধরন জানান দিচ্ছে, শেষ এক যুগের পারফর্ম্যান্সে সম্মানটা আদায় করে নিতে পারেনি বাংলাদেশ। সে সম্মান আদায়ের বড় মঞ্চ হচ্ছে বিশ্বকাপ। এই বড় মঞ্চেই যে ব্যর্থ বাংলাদেশ!
‘৮৩ বিশ্বকাপের আগে ভারতের অবস্থাও ছিল প্রায় কাছাকাছিই। কিংবদন্তি ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রিথ তো বলেই বসেছিলেন, ভারত যদি বিশ্বকাপ জেতে, তাহলে আমি আমার কথাগুলোকে চিবিয়ে খাব। এরপর লর্ডসে ঢুকতে অনুমতি না দেওয়া, সংবাদ সম্মেলনে কপিল দেবের বিশ্বকাপ জিততে চাই শুনে হাসাহাসি, কী হয়নি তাঁদের নিয়ে? তবে কপিল জবাবটা দিয়েছিলেন মাঠের ক্রিকেট দিয়ে, অটুট বিশ্বাসের প্রতিফলনটা দেখিয়েছিলেন ২২ গজে; যার ফল? বিশ্ব ক্রিকেটে ভারতের মানচিত্রের চেহারাটাই বদলে গিয়েছিলে আমূলে।
দ্বিপাক্ষিক সিরিজে আপনি যতই দাপুটে জয় তুলে নিন, বিশ্ব ক্রিকেটে আপনাকে মাপা হবে ওই বিশ্বকাপের পারফর্ম্যান্স দিয়েই। বাংলাদেশের কথাটাই ধরুন, ওয়ানডে সুপার লিগের তৃতীয় দল হিসেবে বিশ্বকাপে, শেষ আট বছরে প্রায় সব দলকেই কোনো এক ফরম্যাটে সিরিজ হারানো… কী ছিল না দলের ঝুলিতে? তবু কেন এ অবজ্ঞা, তাচ্ছিল্য? ওই যে, বিশ্বকাপে বড় কোনো অর্জন নেই! তাই বাংলাদেশের ভাগ্যে মেলে স্রেফ তাচ্ছিল্যই, এক যুগের এদিক কিংবা ওদিকে।

সম্পর্কিত খবর