বাংলাদেশের ১৫ নিয়ে যা বললেন কোচ হাথুরুসিংহে
বিশ্বকাপে অংশ নিতে বাংলাদেশ দল এখন আমেরিকায়। এবারের বিশ্বকাপের দল নির্বাচন প্রসঙ্গে কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে জানিয়েছেন, সবকিছুই ঠিক আছে। দল নির্বাচক প্রক্রিয়া ও পুরো দলের ভারসাম্য নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট। নিজের সেই ১৫ জনের মূল দল নিয়ে কোচ এবার অনেক আশাবাদী। দলের ১৫ জন ক্রিকেটার সম্পর্কে নিজের মতামত দিয়েছেন খুবই স্পষ্ট ভাষায়।
নাজমুল হোসেন শান্ত
শান্ত আমাদের অধিনায়ক। দলের নেতা। খুব ভালো নেতা। যে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়। ড্রেসিংরুমে সে সবার সঙ্গে দারুণভাবে মিশে যেতে পারে। মজা করে। কিন্তু যখন দল নিয়ে মাঠে নামে তখন পুরোমাত্রায় প্রতিযোগিতার মেজাজে থাকে সমসময়। আমার মনে হয় দলের অধিনায়ক হিসেবে এই বিশ্বকাপে তার কাঁধে অনেক বড় দায়িত্ব রয়েছে। বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে আনুষ্ঠানিকভাবে সে এই প্রথমবারের মতো অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়েছে। এই বিশ্বকাপ বিভিন্নভাবে তার জন্য বড় একটা চ্যালেঞ্জ হবে।
তাসকিন আহমেদ
তাসকিন অনেক বেশি আবেগী একজন মানুষ। যখন যে খুব ভালো মেজাজে থাকে তখন নিশ্চিতভাবে তার কাছ থেকে সেরাটা পাওয়া সম্ভব। দলের খেলোয়াড়দের মধ্যেও সে খুব জনপ্রিয়। কোচিং স্টাফরা তাকে অনেক পছন্দ করে। আমি দেখেছি সব সময় সে দলের ভালোর জন্য চেষ্টা চালায়। নিজের পারফর্ম্যান্সের উন্নতির জন্যও তার নিজস্ব প্রচেষ্টা দারুণ একটা উদাহরণ। সত্যিকার অর্থেই পুরো দলের দারুণ একটা চরিত্র সে!
লিটন দাস
আমাদের দলের সেরা ব্যাটারদের একজন লিটন দাস। এই বিশ্বকাপে আমি তার কাছ থেকে বড় কিছু আশা করছি। খুব ন্যাচারাল ট্যালেন্টেড ক্রিকেটার লিটন দাস। ব্যাটিং পারে। কিপিংও দক্ষতা দারুণ। মাঠে যে কোনো পজিশনে দলের অন্যতম সেরা ফিল্ডার সে। সত্যিকার অর্থেই সে বিশ্বমানের একজন। অফ দ্য ফিল্ডে সে খুবই চুপচাপ মেজাজের। কিন্তু দলের সাফল্যের জন্য নিজের খেলার ধার বাড়াতে এবং উন্নতিতে তার চেষ্টা সত্যিই প্রশংসা করার মতোই।
সাকিব আল হাসান
ক্রিকেটের লিজেন্ড সাকিব আল হাসান। আমরা জানি যে সাকিব এখন পর্যন্ত সবগুলো টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলেছে। আশা করছি সম্ভাব্য পারফরমেন্সের বিচারে এটা তার সবচেয়ে বড় বিশ্বকাপ আসর হবে। ব্যাটিং, বোলিং এবং ফিল্ডিং তিন বিভাগে সে তার সেরাটা উজাড় করে দেবে। মাঠে নেতা হিসেবেও ভালো সে। দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে তার সম্পর্ক এবং মিশুক মনোভাবটা দারুণ কাজে দেয়। দলের সবার কাছ থেকে শ্রদ্ধা আদায় করার গুণাবলী তার মধ্যে আছে। মাঠে খেলায় দলকে পরিচালিত করার দক্ষতা তাকে অনন্য ক্রিকেটারের মর্যাদা দিচ্ছে।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ
আমাদের দলের অন্যতম স্পিরিট হলো মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। শান্ত শিষ্ট এবং ধীর-স্থির একজন মানুষ। তার উপস্থিতি পুরো দলের মধ্যে একধরনের প্রশান্তির ছায়া বয়ে আনে যেন। ড্রেসিংরুমে যে যখন কথা বলে তখন সবাই মনোযোগী শ্রোতা। সমস্যা কিভাবে সমাধান করতে হয় সেটা সে ভালো জানে। তার সাম্প্রতিক ব্যাটিং ফর্ম তাকে অন্য স্তরে নিয়ে গেছে। নির্ভার এবং নিঃশঙ্ক চিত্তের তার ব্যাটিং দলের জন্য দারুণ কার্যকর। চাপ সামাল দিতে হয় কিভাবে সেটা সবার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে দেখে শেখা উচিত। আশা করছি দলের তরুণ খেলোয়াড়দের সে এই বিশ্বকাপে ভালোমতো গাইড করতে পারবে।
সৌম্য সরকার
প্রকৃতিগতভাবে গিফটেড একজন ক্রিকেটার হলো সৌম্য সরকার। তবে আমার মনে হয়ে সে এখনো আন্ডার পারফরর্মার। আমরা তার সেরা ব্যাটিংও দেখেছি। তিন ফরমেটের খেলায়ও সে দলের জন্য অবদান রাখতে পারে। ব্রিলিয়ান্ট ফিল্ডার। কার্যকর বোলার। ফিল্ডিংয়ে দক্ষ। আমার বিচারে সে দলের একজন ম্যাচ উইনার। আশায় আছি এই বিশ্বকাপে যে আমাদের জন্য অনেক রান করবে এবং দলকে কয়েকটি জয় এনে দেবে।
তানজিদ হাসান তামিম
খুবই এক্সাইটেড একজন তরুণ খেলোয়াড়। তার সামনে এখনো লম্বা সময় রয়েছে। আমার বিশ্বাস তার সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। তার ব্যাটিংয়ের খুব ভালো দিকটা হলে সে অনেক দেরিতে শট খেলে। বলকে কাছে আসতে দেয়। সিদ্ধান্ত যা নেয় সেটা খুবই স্পষ্টত। নিজের ব্যাটিং আরো ধারালো করার পরিকল্পনা করে থাকে সে। ফিল্ডিংয়েও বেশ দক্ষ। আমি আশা করছি এই তরুণ বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ হবে।
তাওহীদ হৃদয়
আরেকজন প্রতিভাবান ক্রিকেটার। তার ব্যাটিংয়ের নিজস্ব একটা স্টাইল আছে। তার ব্যাটিং দেখাটাও দারুণ উত্তেজনাপূর্ণ। সে ব্যাটিং, ফিল্ডিং, হাঁটাহাঁটি এমনকি কথা বলায়ও ভীষণ ফাস্ট। সবকিছু দ্রুতলয়ে করতে পছন্দ তার। টি- টোয়েন্টির জন্য ব্রিলিয়ান্ট খেলোয়াড়।
জাকের আলী অনিক
দলের নতুন খেলোয়াড়। এবার কোচের দায়িত্ব নেওয়ার পর তাকে এখন আমি দেখছি। তার ব্যাটিংয়ের ধরণ তাকে আলাদা করে চিনিয়েছে। চাপের পরিস্থিতি কিভাবে সামাল দিতে হয় সেটা সে ভালোই জানে। তরুণ একজন ব্যাটারের কাছ থেকে এমন ধীরমস্তিস্কের ব্যাটিং সত্যিই অনেক বড় পাওয়া। তার আত্মবিশ্বাস অনেক উচুঁতে। কখন কোথায় সে কি করতে পারে সেই বিশ্বাসবোধটা তার মধ্যে আছে। কিপিংয়ে পারদর্শী। আমি দেখেছি সে কঠোর পরিশ্রম উপভোগ করে। আমার মনে হয় সে আমাদের দলের সারপ্রাইজ প্যাকেজ হতে পারে এই বিশ্বকাপে।
তানভীর ইসলাম
নতুন বলে বোলিং করতে পারে স্পিনার তানভীর। তার বোলিং স্কিল খুবই বৈচিত্র্যময়। পাওয়ার প্লেতে বোলিং করতে পারে। আমরা দেখেছি বিপিএলে পাওয়ার প্লেতে তাকে বোলিংয়ে এনে তার দল বেশ ভালো সুবিধা পেয়েছে। ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত ভালো পারফরমেন্স তার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে অনেক। আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটেও ভালো করার, নিজেকে মেলে ধরার নতুন প্রত্যয় তাকে মানসিকভাবে আরো শক্তিশালী করেছে। আশায় আছি বিশ্বকাপেও পাওয়ার প্লেতে সে আমাদের বড় শক্তি হিসেবে কাজ করবে।
শেখ মেহেদি হাসান
অনেক গুনের অধিকারী শেখ মেহেদি। ভালো অলরাউন্ডার। যদিও তার প্রধান ভূমিকা হলো বোলিং করা। সেও নতুন বলে পাওয়ার প্লেতে বোলিং করতে পারে। চাপের মুখে ভালো পারফর্ম করার মতো খেলোয়াড় সে। দেখা গেছে সে যখন বোলিংয়ে আসে তখন দল সঙ্কটে থাকে। চাপ বেশি থাকে। কিন্তু সে খুবই স্মার্ট ক্রিকেটার। পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজের দক্ষতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারে সে। ব্যাটে-বলে সবসময়ে যে নিজের সেরাটা দেওয়ারই চেষ্টা চালায়।
রিশাদ হোসেন
আমি অনেক বড় আশা নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছি। বাংলাদেশের ক্রিকেটে তো লেগস্পিনারই ছিল না। এবার আমরা তাকে পেয়েছি। ক্রিকেট বিশ্বে আমরা যেসব ক্লাসিকাল লেগস্পিনার দেখে থাকি, রিশাদ অবশ্য তা নয়। অনেক লম্বা সে। সেই উচ্চতাকে বোলিংয়ে কাজে লাগায়। দারুণ অ্যাথলেট সে। ফিল্ডিংয়ে ব্রিলিয়ান্ট! আমি তো বলবো দলের অন্যতম সেরা ফিল্ডার সে। খুব দ্রুত শিখতে পারে। ভুল শুধরে উঠতে পারে। ব্যাটিংয়েও তার মারকুটে মনোভাব আমরা দেখেছি। আশায় আছি তার ব্যাটও যেন ধারাবাহিকভাবে পারফরমেন্স করে।
মুস্তাফিজুর রহমান
ফিজ সম্পর্কে আর নতুন করে আমি কি বলবো? বিশ্ব ক্রিকেটে এমন ক্রিকেটার সচারচর দেখা যায় না। আমাদের সৌভাগ্য যে তাকে আমরা পেয়েছি। দারুণ বৈচিত্র্যময় বোলিংয়ের অস্ত্র আছে তার কাছে। বল হাতে সে সত্যিকারের জাদু দেখাতে পারে। কব্জির মোচড়ে কার্টারের দক্ষতায় ঝানু ঝানু ব্যাটারকে বোকা বানাতে পারে। সে এখন খুব ভালো ফর্মে আছে। অনেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুস্তাফিজ। আইপিএলে ভালো খেলেছে। নিজের স্কিল নিয়ে যে এখন অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। সে যখন কথা বলে তখন আমি সেটা হয়তো ভালো করে বুঝতে পারি না। কিন্তু দেখেছি তার সঙ্গ দলের বাকিরা সবাই খুবই উপভোগ করে। মজা করে। মুস্তাফিজ যখনই কোনো কিছু বলে বাকিরা সবাই হেসে উঠে।
শরিফুল ইসলাম
ছয় ফিট চার ইঞ্চি লম্বা, বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম অনেক প্রতিভাবান একজন বোলার। দলের বোলিং আক্রমণের অন্যতম ভরসা সে। দলকে শক্ত অবস্থানে পৌঁছে দিয়ে সহায়তা করে। একটা কাজই জানে সে, উইকেট নেওয়া। খুব হাসিখুশি মেজাজের মানুষ। মাঠে বা ম্যাচের সময়টা সে খুব দ্রুত ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করে পরের ম্যাচের পরিকল্পনা নেমে পড়ে। ব্যাটিংয়ে বেশি সুযোগ সে পায় না। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি ব্যাটিংয়েও সে দলের জন্য অবদান রাখতে পারে।
তানজিম হাসান সাকিব
অনেক বেশি দৃঢ় মানসিকতা সম্পন্ন একজন ক্রিকেটার তানজিম হাসান সাকিব। এই দৃঢ়তা তাকে এতদূর নিয়ে এসেছে। প্যানিক হয় না। তার যে শক্তি ও স্কিল আছে সেটার সর্বোচ্চ প্রয়োগ সে মাঠে দেখাতে চায়। বিগ হার্টেড ক্রিকেটার সে। যখন খেলে না তখনো মাঠের বাইরে থেকে দলকে সমর্থন দেয় সে।