আফ্রিকার ক্ষুরধার ক্রিকেট ও মুম্বাইয়ের উত্তাপে ‘সেদ্ধ’ বাংলাদেশ
ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের প্রেসবক্স থেকে নেমে মাঠের পাশ ঘেঁষে একচক্কর দিতেই পুরো শরীর ঘামে চিটচিটে। পা থেকে মাথা পর্যন্ত যেন ক্লান্তি নুয়ে পড়েছে! তাও আবার এই সামান্যতেই। আর মাঠে পুরো ম্যাচ জুড়ে যখন খেলতে নামবেন ক্রিকেটাররা তখন কি হবে- সেই অনুমানের উত্তর মাঠের ঐ এক চক্করেই মিলে গেল। এই মাঠে খেলা মানে শুধু ব্যাটিং- বোলিং বা ফিল্ডিং সব নয়, আপনাকে অবশ্যই শারীরিক উৎকর্ষতায়ও টপকাতে হবে।
কোনো সন্দেহ নেই ২৪ অক্টোবর দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে এই মাঠের ম্যাচ বাংলাদেশ দলের বাড়তি একটা পরীক্ষাও নেবে। সেই ম্যাচের আগে ২২ অক্টোবর, শনিবার ভর দুপুরে বাংলাদেশ দল ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে পুরো মাত্রায় অনুশীলন করে। দলের সবাই ছিলেন। ছিলেন না শুধু হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। বিসিবির মিডিয়া ম্যানেজার জানান, শারীরিকভাবে খানিকটা অসুস্থ হওয়ার কারণে কোচ হোটেলে বিশ্রামে রয়েছেন।
নেট সেশনে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও বেশ ঘাম ঝরান। পাশাপাশি বসানো তিনটি নেটে ব্যাটিং অনুশীলন করেন সাকিব। তবে রানিংয়ে তেমন অংশ নেননি। বোলিংও করেননি। এখনো পুরোমাত্রায় ফিটনেস ফিরে পেয়েছেন কিনা অধিনায়ক, সেটা জানা যায়নি। তবে তার শ্লথগতি, নড়াচড়ার ভঙ্গি জানাচ্ছিল ফিটনেস সমস্যা থেকে পুরোপুরি মুক্তি মেলেনি।
অনুশীলনে পেসার তাসকিন আহমেদও ছিলেন। তবে গোটা সেশনে তিনি একটি বলও করেননি। বল হাতে শুধু রান আপের জন্য দৌড়ান। কিন্তু ফিনিংস লাইনে এসে বল ছোঁড়ার হালকাচালের অভিনয় করেন। তাতেই স্পষ্ট ইনজুরিতে পড়ার কাঁধকে বিশ্রাম দিচ্ছেন তাসকিন। পুরোসময় জুড়ে তাসকিনকে পর্যবেক্ষণ করেন ফিজিও। দৌড়ানো এবং রান আপের সময় তাসকিন যে পুরোমাত্রার শক্তি খরচ করছিলেন না। দুদিন পরে ম্যাচ এমন সময় এই নাজুক ভঙ্গিতে তাসকিনের অনুশীলন জানান দিচ্ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ম্যাচটা তাকে ড্রেসিংরুমে বসেই দেখতে হচ্ছে।
১৯ অক্টোবর পুনেতে ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচে সেরা একাদশে ছিলেন না তাসকিন। বলা হচ্ছিল ফর্ম নেই তাই তাকে একাদশে রাখা হয়নি। এখন ফর্মহীনতার সঙ্গে ইনজুরিও জেঁকে ধরেছে তাকে। তাসকিন অবশ্য কাঁধে চোট নিয়েই বিশ্বকাপে খেলতে এসেছিলেন। পেইন ম্যানেজমেন্ট করে বিশ্বকাপে তাকে খেলানোর পরিকল্পনা করেছিলেন টিম ম্যানেজমেন্ট। বিশ্বকাপে যে তিনটি ম্যাচে তাসকিন খেলেছেন তার কোনোটিতেই ১০ ওভারের বোলিং কোটা পুরো করতে পারেননি।
ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের ঠিক মাঝখানে অনুশীলন নেট খাটানো হয়েছিল। মাঠের সেই মাঝ বরাবর জায়গা থেকে ব্যাটসম্যানরা বেশ কয়েকবার বল উড়িয়ে গ্যালারিতে পাঠান। ২৪ অক্টোবরের ম্যাচের জন্য ছক্কার প্রস্তুতিটা তাহলে এখানে প্রথমদিনের অনুশীলনে সেরে ফেললো বাংলাদেশ।
দক্ষিণ আফ্রিকার এই দলকে হারাতে হলে ব্যাট হাতে বাংলাদেশকে যে বড় কিছু করতেই হবে। এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে সেই দক্ষতাই যে দেখাতে পারেনি দল। ওয়াংখেড়ের কন্ডিশন জানাচ্ছে এই মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং-বোলিং সামাল দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এখানকার চিটচিটে অসহনীয় গরমও বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এই স্টেডিয়াম থেকে পা হাঁটা দূরত্বে আরব সাগর। দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ থেকে বাংলাদেশ জয় নিয়ে ফিরতে পারলে পেছনের তিন হারের ব্যর্থতা ঐ আরব সাগরের নিস্তরঙ্গ জলে মিশে যাবে। পারবে বাংলাদেশ নিজেদের আনন্দিত করতে?