বাবার চোখরাঙানি এড়িয়ে, মায়ের কথা মেনেই আজকের তামিম
‘পড়াশোনা ঠিক রেখে যত দুষ্টুমি আছে, করুক; কোনো ঝামেলা না বাধালেই হলো’ পুরু গোঁফের নিচে মুচকি হাসি লুকিয়ে কথাটা বলেছিলেন রাশেদ পাশা, তিন গোয়েন্দার প্রধান কিশোর পাশার চাচা। কথাটা অবশ্য একান্তই রাশেদ পাশার, বিষয়টা এমনও নয়; কথাটা তো প্রত্যেক বাঙালী মা-বাবারই!
তানজিদ তামিমের ‘দ্য গ্রিন রেড স্টোরি’তেও দেখা মিলল তেমন কিছুরই। জানালেন, মা চাইতেন পড়া শেষ করে তবেই খেলতে যেতে হবে; সে শর্ত মেনেই ক্রিকেটার হওয়ার পথে হেঁটেছেন তিনি। সে গল্পটা আজ বিসিবির ভিডিওবার্তায় বললেন তামিম। বললেন, ‘সব মা–বাবাই চান তাঁর ছেলে পড়াশোনা করে অনেক ভালো কিছু হবে, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হবে। আমার মা–বাবাও সেই স্বপ্নই দেখেছিল। গ্রাম থেকে শহরে নিয়ে এসেছিলেন পড়াশোনা করার জন্য। জিলা স্কুলে পড়াশোনা করি। খেলার ওপর অনেক ঝোঁক ছিল। যখনই ছুটি পেতাম কিংবা পড়াশোনার ফাঁকে যেটুকু সময় পেতাম, খেলাধুলা করেছি।’
তবে পড়াশোনার বাইরে যেন সন্তানের মনোযোগটা চলে না যায়, তার প্রাণান্তকর চেষ্টা সব মা-বাবাই করেন। তাতে অবশ্য তামিমদের মতো হবু ক্রিকেটারদের কাজটা কঠিনই হয়ে যায়। তবে তাতে অবশ্য চূড়ান্ত নিয়তিতে কোনো হেরফের হয় না, যার লক্ষ্য ক্রিকেটই, তাকে বাধা দেয় এমন কিছু কি আর আছে?
তামিম সেসব দিনের কথা বললেন, ‘স্কুল শেষে বাসায় টিচার (গৃহশিক্ষক) আসতেন। রাতেও টিচার আসতেন। সময় পাওয়া খুব কঠিন ছিল। আম্মু আমাকে বলতেন, স্কুল থেকে আসার পর যদি আমি টিচারদের পড়াটা শেষ করতে পারি, তাহলে আমাকে খেলতে দেবেন। আম্মু আমাকে আরেকটা কথা বলতেন, যদি আমি লেখাপড়ায় ভালো করতে পারি, তাহলে আমাকে একাডেমিতে ভর্তি করিয়ে দেবেন, ব্যাট-বল কিনে দেবেন। আমিও পড়াশোনায় মোটামুটি ভালোই ছিলাম। রেজাল্ট ভালো করতাম। এসব শর্ত পূরণ করলে আম্মু আমাকে খেলতে দিতেন।’
বাবা সরকারী চাকুরীজীবী ছিলেন। ছেলেও একই পথের পথিক হোক, চেয়েছিলেন তিনি। তার স্বপ্নটা যখন ক্রিকেট, তা জানতে পেরে চড়াও হয়েছেন তার ওপর। তামিম বলেন, ‘আব্বু অফিস থেকে ফিরে হয়তো দেখতেন, আমি বাসায় নেই। টিচার এসে বসে আছেন। আমি মাঠে খেলতে গিয়েছি। বাবা এ জন্য অনেক রাগ করতেন। বাবা যে কঠোর হতেন, এটা নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। এখন আমার মা–বাবা অনেক সমর্থন দেন। ভালো ও খারাপ দুই সময়েই সমর্থন দেন।’
সেই কঠোর বাবা মায়ের সমর্থন মিলছে, এখন তো বন্ধু-বান্ধবও গর্ব করেন তামিমকে নিয়ে! তামিমের ভাষায়, ‘আমার বন্ধুবান্ধব, যারা ছোটবেলায় আমার সঙ্গে ক্রিকেট খেলত, তারাও এখন আমার জন্য গর্ব অনুভব করে। গ্রামে কিংবা শহরে তাদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া হয়। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ের পর সবাই এ ব্যাপার নিয়ে গর্ব অনুভব করে।’
তামিমের নামের সঙ্গে বাংলাদেশ ক্রিকেটের কিংবদন্তি তামিম ইকবালের নাম মিলে যায়। তবে তানজিদ জানালেন, এই নামের পেছনে বড় তামিমের কোনো হাত নেই। নেহায়েতই কাকতালীয় বিষয়টা। বললেন, ‘দাদি আর দাদা মিলে আমার এই নামটা দিয়েছেন। আসলে তখন তাঁরা এই জিনিসটা ভেবে দেননি।’
তামিমের অভিষেক গেল আগস্টে। কিন্তু নিজের আলাদা একটা পরিচিতি তার আগেই বানিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। সেটা ২০২০ অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ দিয়ে। সে স্মৃতি রোমন্থন করে তামিম বলেন, ‘আমি অনেক সৌভাগ্যবান যে বিশ্বকাপে খেলতে পেরেছি। একটি ব্যাপার বিশ্বাস করি যে, হয়তো নিজে তেমন ভালো করতে পারিনি। কিন্তু যে বিষয়গুলো আমি দুই বছর পর শিখতাম, সেগুলো আমি হয়তো বিশ্বকাপে খেলার মাধ্যমে শিখেছি। বড় বড় খেলোয়াড়ের পরিণত মানসিকতা দেখেছি, যেটা আমাকে পরবর্তী সময়ে অনেক সাহায্য করবে।’
দুয়ারে আরও একটা বিশ্বকাপ। এই বিশ্বকাপে তার চাওয়া, নিজের সবটুকু উজাড় করে দলকে সাহায্য করা। তিনি বলেন, ‘আগেও বলেছি, বিশ্বকাপে খেলাটা ভাগ্যের ব্যাপার। সেদিক থেকে আমি অবশ্যই সৌভাগ্যবান। চেষ্টা করব নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে দলকে কিছু দেওয়ার।’