হায়দরাবাদকে উড়িয়ে আইপিএলের মুকুট কলকাতার

হায়দরাবাদকে উড়িয়ে আইপিএলের মুকুট কলকাতার

একে কি পর্বতের মূষিক প্রসব বলবেন?
কেন নয়? এবারের আইপিএলের সবচেয়ে বিধ্বংসী দুই ওপেনিং জুটি আর আগ্রাসী ব্যাটিং লাইন আপ নিয়ে দুই দল যখন মুখোমুখি শিরোপার লড়াইয়ে, তখন আপনি কী আশা করবেন? একটা হাই স্কোরিং ফাইনাল? নাকি আইপিএল ফাইনালের ইতিহাসের সর্বনিম্ন রানের রেকর্ড ভাঙবে এই আশা নিয়ে বসবেন?
আপনি যাই আশা করে থাকুন না কেন, হয়েছে পরের ঘটনাটাই। সান রাইজার্স হায়দরাবাদকে ১১৩ রানে গুঁড়িয়ে দিয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। এরপরের গল্পটা কি আর বলে দিতে হবে? ১১৪ রান তাড়া করতে কলকাতার বেগ পাওয়ার কথা নয় তেমন। শ্রেয়াস আইয়ারদের তা হয়ওনি। প্রায় অর্ধেক ওভার বাকি রেখে তুলে নিয়েছে ৮ উইকেটের বিশাল জয়। ২০১২ আর ২০১৪ এর পর আবারও আইপিএলের চ্যাম্পিয়ন বনে গেছে শাহরুখ খান-জুহি চাওলার কলকাতা।
পুরো মৌসুমে বোলারদের ওপর সানরাইজার্স হায়দরাবাদ রীতিমতো নির্মমই ছিল। ওপেনিংয়ে ট্র্যাভিস হেড-অভিষেক শর্মা থেকে শুরু করে মিডল অর্ডারে হাইনরিখ ক্লাসেন কিংবা এইডেন মার্করাম, যেই এসেছেন ক্রিজে, বোলারদের শাসন করেছেন সেই। সে দলটাকে বশে আনতে হলে নিখুঁত বোলিং পরিকল্পনার প্রয়োজন ছিল। কলকাতা আজ বাস্তবায়ন করেছে সেটাই। বোলিং আক্রমণে যেই এসেছেন, নিদেনপক্ষে একটা উইকেট নিয়েছেনই। সবচেয়ে সফল ছিলেন আন্দ্রে রাসেল, ১৯ রানে ৩ উইকেট নিয়ে তিনি বুঝিয়েছেন, কেন কলকাতা মৌসুমের পর মৌসুম ধরে তার ওপর ভরসা রেখেছে। 
তবে সবচেয়ে বেশি আলো কেড়েছেন কে? এই প্রশ্নের জবাবে আসবে মিচেল স্টার্কের নামই। ২৪ কোটিরও বেশি রূপি খরচায় তাকে দলে টেনেছিল কলকাতা। শুরুর দিকে দেদারসে রান বিলিয়ে হাসির খোরাকও জন্ম দিয়েছিলেন অজি এই বোলার। তবে ফাইনালের মঞ্চে তিনিই আলো কেড়ে নিয়েছেন।
কীভাবে?
হায়দরাবাদের বিধ্বংসী ওপেনিং জুটি প্রথম ওভারেই ভেঙে দিয়ে। অভিষেক শর্মাকে যে বলে বোল্ড করলেন, তা রাহুল দ্রাবিড়ও তার স্বর্ণসময়ে ঠেকাতে পারতেন কি না, প্রশ্ন থেকে যায়। মিডল স্টাম্পে করা তার লেন্থ বলটা শেষ মুহূর্তে একটু সরে গেল, আর তাতেই অভিষেকের রক্ষণ ভেঙে ছত্রখান, অফ স্টাম্পের মাথাটা ছুঁয়ে গেল বলটা। ইনিংসের পঞ্চম বলেই প্রথম উইকেট নেই হায়দরাবাদের। 
পরের ওভারে বৈভব পান্ডে যে বলটায় আউট করলেন ট্র্যাভিস হেডকে, সেটাও তো ওই সুইংয়েরই কারসাজি! লেগ স্টাম্পে বলটা পড়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল, যাওয়ার পথে ছুঁয়ে গেল হেডের ব্যাট। আর তাতেই হায়দরাবাদের স্কোরলাইন বনে গেল ৬-২। পাওয়ারপ্লেতে একের পর এক রেকর্ড ভেঙে-চুরে দেওয়া হায়দরাবাদ আজ ফাইনালের মঞ্চে তুলতে পারল মোটে ৪০ রান, তাও আরও একটা উইকেট খুইয়ে। 
পুরো মৌসুমে যে শুধু হেড আর অভিষেকই টেনেছেন হায়দরাবাদকে, বিষয়টা এমনও তো নয়! এইডেন মার্করাম, হাইনরিখ ক্লাসেন থেকে শুরু করে সবাইই ব্যাট হাতে কম-বেশি আলো ছড়িয়েছেন। তাই ২০১৬ এর চ্যাম্পিয়নদের একটা আশা ছিলো বৈকি! তবে স্টার্ক-বৈভবের দেখিয়ে দেওয়া পথটায় কলকাতার বাকি বোলাররা আর পা হড়কাননি। নিখুঁত বোলিংয়ে ডানা মেলতে দেননি হায়দরাবাদের ব্যাটারদের।
৭৭ রানে এক পর্যায়ে ৭ উইকেট খুইয়ে বসেছিল দলটা। আইপিএলের ফাইনালে সর্বনিম্ন রানে অলআউট হওয়ার রেকর্ড তো বটেই, দুই অঙ্কে শেষ হয়ে যাওয়ার শঙ্কাও ভালোভাবেই চোখ রাঙাচ্ছিল হায়দরাবাদকে। সেখান থেকে অধিনায়ক মিচেল স্টার্কের ২৪ রানের ইনিংসে ভর করে একশো পেরোয় তারা। তবে আইপিএলে ফাইনালে সবচেয়ে কম রানে গুটিয়ে যাওয়ার বিব্রতকর রেকর্ডটা থেকে রেহাই মেলেনি দলটার। ২০১৩ আইপিএলের ফাইনালে চেন্নাই সুপার কিংসের ১২৫ রানের রেকর্ডটাকে দুইয়ে ঠেলে হায়দরাবাদ অলআউট হয় ১১৩ রান তুলতেই। 
ম্যাচটা তো ওখানেই শেষ। কেন নয়? রান প্রসবা আইপিএলে যেখানে আড়াইশো ছাড়ানো রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড আছে, সেখানে ১১৩ তো বালির বাঁধ! প্যাট কামিন্স শুরুতেই সুনীল নারাইনকে তুলে নিয়ে অন্যথা ঠাহর করানোর একটা সুযোগ করে দিয়েছিলেন বটে। কিন্তু দ্বিতীয় উইকেটে ভেঙ্কটেশ আইয়ার আর রাহমানউল্লাহ গুরবাজের ৯১ রানের জুটি লো স্কোরিং থ্রিলার হওয়ার সব সম্ভাবনা উড়িয়েই দেয়। শেষ দিকে শ্রেয়াস আইয়ার স্রেফ শেষ তুলির আঁচড়টাই দিয়েছেন। 
ব্যাটে-বলে-ফিল্ডিংয়ে এমন নিখুঁত প্রদর্শনীর দিনে ৮ উইকেট আর ৫৭ বল হাতে রেখে ম্যাচটা জেতে কলকাতা। ১০ বছর পর আবারও আইপিএল শিরোপার গন্তব্য হয় বাংলা।

সম্পর্কিত খবর