সাকিব তামিম ঝগড়া শেষ, সুজন হাথুরুসিংহে পর্ব শুরু

সাকিব তামিম ঝগড়া শেষ, সুজন হাথুরুসিংহে পর্ব শুরু

বিশ্বকাপ দুয়ারে এলেই বিশ্বের সবাই যখন ব্যাট-বল নিয়ে ব্যস্ত থাকে, বাংলাদেশ তখন চলে অন্য নিয়মে! বাংলাদেশ মানে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল বা বোর্ড। বিশ্বকাপের ঠিক আগেভাগে প্রতিবারই একে অন্যের সঙ্গে ঝগড়াঝাঁটি, কথা চালাচালি, আস্তিন গোটানো ভঙ্গি দেখানোর ব্যাপারটা যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে।

গত বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপের ঠিক আগে এই ঝগড়া বিশ্ব দেখেছিল সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালের সাক্ষাৎকারে। অথচ দু’জনে কি ভালো বন্ধুই না ছিলেন এক সময়! এমনকি একজন দলের অধিনায়ক এবং আরেকজন সহ-অধিনায়ক এমন মধুমাখা সময়ও তারা কাটিয়েছেন ক্যারিয়ারের কোনো এক সময়। কিন্তু আজ তাদের সম্পর্কের আবহ সঙ্গীত, শত্রু তুমি বন্ধু তুমি..!

ঠিক একই ঘটনা ঘটিয়েছেন এবার আরেক সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ সুজন। ক্রিকেট ছেড়েছেন অনেক আগেই তিনি। এখন বিসিবির পরিচালক। বোর্ডে গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত। সেই তিনি গলা ফুলিয়ে সেদিন তার দলের কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে সমালোচনায় ছিলে ফেললেন।

কী বলেছেন খালেদ মাহমুদ সুজন? তার সংক্ষিপ্তসার শুনে নেই আগে।

‘এখন তিনি (চন্ডিকা হাথুরুসিংহে) যে ধরনের আচরণ করেন সেটা পুরোপুরি কর্তৃত্ব-পরায়ণ ও স্বেচ্ছাচারী। এটা তো মেনে নেওয়ার মতো না। তাকে তো তাহলে নিয়ন্ত্রণই করা যাবে না। এখন তিনি পুরোপুরি সবকিছুতেই কর্তৃত্ববাদী আচরণ করেন। যা কোনো মতেই ঠিক না। তার ম্যান ম্যানেজমেন্ট নিয়ে যথেষ্ট সমস্যা আছে। সর্বশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপে আমি দলের সঙ্গে ছিলাম তখনকার অভিজ্ঞতায় আমি তার এই সমস্যা ধরতে পেরেছি। দলের একজন হেড কোচের সঙ্গে বাকি সব কোচের লেগে (ঝগড়াঝাঁটি) যেতে পারে সেটা আসলে বিশ্বাসযোগ্য নয়।’

আরও পড়ুন–হাথুরু বদরাগী, স্বৈরাচারী– সুজনের অভিযোগ

গত কয়েকটি বিশ্বকাপ দলের সঙ্গে কখনো টিম ডিরেক্টর, কখনো ম্যানেজার হিসেবে খালেদ মাহমুদ সুজন ছিলেন। টিম ম্যানেজমেন্টের অংশ হিসেবে দলের সঙ্গে থাকতেন। বিভিন্ন ভাবে তখন কথায়, বক্তব্যে, আচরণে এমনকি বিসিবির কাছে দেওয়া রিপোর্টেও কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের প্রতি তার সুর ছিল সমর্থনের।

কিন্তু সম্প্রতি সেই সুজন বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলের কোনো কিছুতেই অংশ নন, এমন কিছু ঘটল শেষ কিছু দিনে প্রথমবারের মতো। বাইরে থেকে দেখছেন বিশ্বকাপ, আরও অনেক বাকি সাধারণের মতো। তবে তিনি এখনো ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক। টিম অপারেশন্স কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান। যে কমিটির অন্যতম কাজ কোচ নিয়োগ প্রক্রিয়া ঠিক করা।

সেই পদে থাকা অবস্থায় তিনি যখন দলের কোচকে নিয়ে সরাসরি মিডিয়ায় খোলামেলা সমালোচনা করবেন, তাও আবার দল বিশ্বকাপের মাঠে নামার সপ্তাহখানেক আগে; তখন বুঝতেই হবে ‘পুরোনো ভালোবাসা’ হারিয়ে গেছে!

কোন ভালোবাসা?

কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গে খালেদ মাহমুদ সুজন বিসিবির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তা হিসেবে একই ড্রেসিংরুমে অনেক সময় কাটিয়েছেন। কৌশল-পরিকল্পনা-দল গঠন-ম্যাচের হিসাব নিকাশ নিয়ে আলোচনায় ছিলেন। কখনোই তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। বরং ভাবা হচ্ছিল জুটিটা জমেছে।

কিন্তু সেই সম্পর্কে ছেদ ধরলো গেল বছর ভারতের মাটিতে ওয়ানডে বিশ্বকাপে। সেই বিশ্বকাপে টিম ডিরেক্টর হিসেবে দলের সঙ্গে ছিলেন সুজন। কিন্তু তাকে যে গ্রাহ্যই করেননি কোচ! সেই দুঃখ চেপে রাখেননি সুজন। বলেছিলেন, টিম ডিরেক্টর হিসেবে দলের অনেক সিদ্ধান্তমূলক বৈঠকে তাকে রাখা হয় না। তার সঙ্গে আলাপ না করেই অনেক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এমনটা হবে জানলে তিনি দলের সঙ্গে যোগই দিতেন না। শুধু সফরসঙ্গী হয়ে থাকার জন্য তিনি দলের সঙ্গে থাকতে রাজি নন।

তবে বিশ্বকাপের সেই পর্যায়ে এবং বিশ্বকাপ শেষেও টিম ডিরেক্টর সুজনের এসব অভিযোগ বিসিবির শীর্ষ কর্তারা কানে তোলেননি। বরং সুজনের এ অভিযোগে বিসিবির শীর্ষমহল বিরক্ত হয়েছিল, সেটাই স্পষ্ট হয়।

বিসিবির সাম্প্রতিক নীতি নির্ধারণী অনেক বিষয়ে খালেদ মাহমুদ সুজনের অনুপস্থিতি দেখা যায়। নতুন নির্বাচক পদে গাজী আশরাফ হোসেন লিপু যে নিয়োগ পাচ্ছেন সেটা তিনি জানতেনই না। এই নিয়োগ নিয়ে তিনি তার অসন্তোষ গোপনও রাখেননি! তবে বিসিবির শীর্ষমহল নির্বাচক নিয়োগ নিয়ে তার সেই ‘ব্যক্তিগত বিষয়’ কে গোণায়ও ধরে নি।

এখন হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের বিরুদ্ধে সুজনের নতুন অভিযোগ-অনুযোগের প্রেক্ষিতে বিসিবি কোনো মন্তব্য করে কি না- সেটাও দেখার বিষয়। তবে এটা স্পষ্ট যে বিশ্বকাপ শুরুর ঠিক আগেভাগে হেড কোচের বিরুদ্ধে সুজনের এমন ঢালাও মন্তব্যে বিসিবিও খুশি নয়।

যে কোচের বিরুদ্ধে সুজন এখন অভিযোগ করছেন সেই কোচের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কিন্তু বিসিবির পরিচালক হিসেবে সুজনেরও সায় ছিল। এখন সুজন নিজেকে বাংলাদেশের হেড কোচের চেয়ারে দেখতে চাইছেন বলেই কি হাথুরুসিংহে অনেক দূরের মানুষ হয়ে গেলেন?

টিভির সঙ্গে যে সাক্ষাৎকারে সুজন হেড কোচ হাথুরুসিংহের সমালোচনা করেছেন সেখানেই তিনি আবার নিজেকে বাংলাদেশের হেড কোচের দায়িত্বে দেখার আশা প্রকাশও করেছেন। এবার হঠাৎ এখন এই সমালোচনা কেন, সেই সমীকরণ আপনিও মেলাতে পারছেন নিশ্চয়ই!

সম্পর্কিত খবর