বাংলাদেশকে টলিয়ে মূল মঞ্চে যুক্তরাষ্ট্রের বড় চ্যালেঞ্জ
যুক্তরাষ্ট্র। এই এক মাস আগেও ওই দলটার একজন ক্রিকেটারের নাম বললে আপনি চিনতেন কি না, সন্দেহ আছে বেশ। কিন্তু সেই যুক্তরাষ্ট্রই এখন বাংলাদেশের কাছে খুব চেনা। বিশ্বকাপের আগে বিশ্বর্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ ১৫রও বাইরের দলটার কাছে যে সিরিজ হেরে গেছেন সাকিব আল হাসানরা!
বিষয়টা বাংলাদেশের জন্য বিব্রতকর, তাতে কোনো সন্দেহের অবকাশই নেই। কিন্তু মুদ্রার উল্টোপিঠটা ভাবুন একবার? বাংলাদেশকে যারা হারাল, সেই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এই সিরিজ জয়টা অমূল্য। ঘরের মাঠে বিশ্বকাপের আগে মনোবল আকাশে তুলে দেওয়ার টনিক।
সেই টনিক নিয়ে এবার যুক্তরাষ্ট্র নামবে বিশ্বকাপে। সেখানে আরও বড় চ্যালেঞ্জের সামনে পড়বে দলটা। ভারত ও পাকিস্তান তো আছেই, আয়ারল্যান্ড আর কানাডাও আছে তাদের গ্রুপ এ-তে। তবে সেসবকে থোড়াই পরোয়া করে দলটা। বাংলাদেশকে হারানোর পর আলী খানের হুঙ্কারটা মনে পড়ছে তো?
এবারের বিশ্বকাপ অবশ্য দলটার প্রথম আইসিসি ইভেন্ট নয়। ২০০৪ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলেছিল যুক্তরাষ্ট্র। তার ২৪ বছর পর আবারও ক্রিকেটের বড় মঞ্চে ফিরল তারা।
দলের বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই অবশ্য ভারতীয় কিংবা পাকিস্তানি, কিংবা নিউজিল্যান্ডার। অধিনায়ক মোনাঙ্ক পাটেল ভারতীয় বংশোদ্ভূত। তার সঙ্গে ব্যাটিং লাইন আপে মূল খেলোয়াড় হিসেবে থাকবেন অ্যারন জোন্স ও স্টিভেন টেলর।
সাবেক নিউজিল্যান্ড তারকা কোরি অ্যান্ডারসন এবারের বিশ্বকাপে ফিরছেন যুক্তরাষ্ট্রের জার্সি গায়ে। যা দলটাকে দেবে বাড়তি অভিজ্ঞতা ও গভীরতা। আলী খান আর সৌরভ নেত্রভালকরকে নিয়ে পেস আক্রমণটাও যে নেহায়েত মন্দ নয় তাদের, সেটা বাংলাদেশের চেয়ে ভালো আর কে জেনেছে?
যুক্তরাষ্ট্র নিদেনপক্ষে একটা জয় নিয়ে বিশ্বকাপটা শেষ করতে চাইবে নিশ্চয়ই। তার সুযোগটা দল পাচ্ছে শুরুর ম্যাচেই। ১ জুন প্রতিবেশী কানাডার বিপক্ষে খেলবে তারা। সে ম্যাচে জয় দিয়ে শুরু করতে পারলে দলের আরও বড় কিছুতে মনোযোগ দেওয়ার সাহসটা যেমন বাড়বে, তেমনি প্রথম দিনেই এমন ঘটনা বিশ্বকাপকে দেবে বাড়তি জৌলুসও।
মূল খেলোয়াড়– কোরি অ্যান্ডারসন
কোরি অ্যান্ডারসন গেল দশকে খেলেছেন নিউজিল্যান্ডের হয়ে। সেখানেই গড়েছিলেন একটা বিশ্বরেকর্ড।
ওয়ানডে ক্রিকেটের দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডটা প্রায় ১৮ বছর ধরে নিজের দখলে রেখেছিলেন শহীদ আফ্রিদি। তবে সেটাকে অমর হয়ে যেতে দেননি যিনি, তিনি এই কোরি অ্যান্ডারসন। ২০১৪ সালের ঠিক প্রথম দিন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিনি সেঞ্চুরি করেছিলেন ৩৬ বলে। রেকর্ডটা নিজের করে নিয়েছিলেন। পরে আবার অবশ্য তা হারিয়েও ফেলেছেন। পরের বছর জানুয়ারিতেই এবি ডি ভিলিয়ার্স ৩১ বলে সেঞ্চুরি করে তা নিজের করে নেন। বিশ্বরেকর্ড হারালেও নিউজিল্যান্ডের রেকর্ডটা এখনও কোরিরই দখলে।
তার এমন তোপের মুখে বাংলাদেশও পড়েছে। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে ৪১ বলে তিনি ৯৪ রানের বিধ্বংসী এক ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। এ ছাড়াও সব ফরম্যাট মিলিয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে মোট ৩ টেস্ট, ৬ ওয়ানডে আর ৫ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে তিনি করেছেন ১ টি করে সেঞ্চুরি আর ফিফটি। বল হাতেও তিনি সফলতা পেয়েছেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৪ উইকেট আছে তার নামের পাশে।
তার পোশাকের রঙটা যাচ্ছে বদলে এবার। গায়ে উঠছে যুক্তরাষ্ট্রের জার্সি। নিউজিল্যান্ড থেকে ব্রাত্য হয়ে এখন যুক্তরাষ্ট্রে এসেই থিতু হয়েছেন ৩৩ বছর বয়সী কোরি। এমন অভিজ্ঞতার বলে যুক্তরাষ্ট্র দলে তিনিই এখন হয়ে আছেন প্রতিপক্ষের জন্য সবচেয়ে বড় ত্রাস। যুক্তরাষ্ট্রকে হারাতে হলে কোরি অ্যান্ডারসনকে নিয়ে বাড়তি পরিকল্পনা রাখতে হবে যে কোনো দলকে।
যুক্তরাষ্ট্র স্কোয়াড
কোচ: স্টুয়ার্ট ল
স্কোয়াড: মোনাঙ্ক প্যাটেল (অধিনায়ক), অ্যারন জোনস, শায়ান জাহাঙ্গীর, আন্দ্রিস গউস, নীতিশ কুমার, স্টিভেন টেইলর, হারমিত সিং, কোরি অ্যান্ডারসন, মিলিন্দ কুমার, নিসর্গ প্যাটেল, শাডলি ফন শকউইক, আলী খান, জেসি সিং, সৌরভ নেত্রভালকার ও নশতুশ কেনজিগে।