জোন্সের সময়টা অবশেষে এসেই গেল

  • স্পোর্টস বাংলা রিপোর্ট
  • ১২:৫১ পিএম | ০২ জুন, ২০২৪

আর্সেনালের অনুশীলন মাঠে ফুটবলের ওপর বসে আছেন। দৃষ্টিটা শূন্য। দলের বেঞ্চে বসে থাকতে কেইবা যায়। আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি বনে যাওয়া এমিলিয়ানো মার্তিনেজের এই ছবিটা আপনি চেনেন। সে ছবিটা ফেসবুকে পোস্ট করে তিনি ক্যাপশনে লিখেছিলেন, ‘আমার সময় আসবে’। 

এমিলিয়ানো মার্তিনেজের এর পরের গল্পটা আপনি ভালো করেই জানেন। ক্লাব ফুটবলে তার সময় এল, দু হাতে লুফে নিলেন তা। এরপর আর্জেন্টাইন দলে অভিষেক হলো এসে ২৮ বছরে। তার দেড় বছরের মাথায় দলকে দক্ষিণ আমেরিকার, বিশ্বের চ্যাম্পিয়ন বানিয়ে দিলেন। 

ক্রিকেট মাঠও এবার যেন তেমন এক গল্পই দেখছে। গল্পটা অ্যারন জোন্সের। টিনেজ পেরোনোর পরের সময়টা বেশিরভাগের কাছে নিজেকে হারিয়ে খোঁজার সময়। সে সময়ে বসে তিনি টুইট করেছিলেন, ‘আমার রোশনাই ছড়ানোর সময়টা নিশ্চয়ই আসবে। আমি কখনো হাল ছাড়ব না’। 

আজ থেকে ঠিক ১১ বছর আগে ২০১৩ সালের ১ মে এ স্বগতোক্তির জন্ম। এমন উক্তি অবশ্য তার কম নেই। ‘সুযোগ পেলে কখনো ছেড়ো না, পুরোটা ব্যবহার কোরো’ – ২০১৪ সালে এ কথাটাও যে নিজেকে বলেছিলেন, তা আর বলতে।

এক্স ব্যবহারের স্বভাবটা এখনও কমেনি তার। সে প্রমাণটা মিলল গত রাতে। যুক্তরাষ্ট্র দলকে উদ্দেশ্য করে লিখেছিলেন, ‘তুমি আমাকে নতুন এক জীবন দিয়েছে। আমি তোমার জন্য আমার জীবনটাও দিয়ে দেব।’

প্রথম স্বগতোক্তিটার ঠিক ১১ বছর পর আজ তিনি আলো ছড়ালেন, অন্যদের চেয়ে বেশি ছড়ালেন। এতটাই যে, তার দল জিতল একগাদা রেকর্ড ভেঙে চুরে, দুমড়েমুচড়ে। অ্যারন জোন্স ‘প্রাণ বাজি রেখে’ খেললেন রীতিমতো, যে পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে ৪০ বলে ৯৪ রানের অপরাজিত ইনিংসটা খেললেন, তাতে তাই বলা যায় কেবল।

পরিস্থিতিটা কেমন ছিল তার একটা ধারণা নেওয়া যাক তাহলে। যুক্তরাষ্ট্র ১৯৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমেছিল, এর আগ পর্যন্ত দলটার সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড ছিল ১৬৯ রানের। তিনি যখন উইকেটে এলেন, তার আগেই পাওয়ারপ্লে শেষ। দুটো উইকেট খুইয়ে যুক্তরাষ্ট্র রান তুলেছিল মোটে ৪২। সামনে সমীকরণটা ছিল ৮১ বলে ১৫৩ রানের। পরের গল্পটা রোমাঞ্চের, সাহসের… আর অবশ্যই অ্যারন জোন্সের। 

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে তিনি খেলতে এসেছিলেন রংপুর রাইডার্সের হয়ে। তখন কম টীকাটিপ্পনী শুনতে হয়নি। এরপর যুক্তরাষ্ট্র দলে তার উপস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ সিরিজেও বেশ কথা শুনতে হয়েছে তাকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থকরা (যাও কিছু আছেন) তার ১২০ এর নিচে স্ট্রাইক রেটকে ধুয়ে দিচ্ছিলেন। সে সিরিজটাতেও তেমন ভালো করতে পারেননি তিনি। জবাবটা দেওয়ার জন্য তিনি বেছে নিলেন বিশ্বকাপের মঞ্চকে, নিজেদের অভিষেক ম্যাচকে।

আস্কিং রেটটা অষ্টম ওভার শেষে ১২ পেরিয়ে গিয়েছিল। এরপরই প্রতি আক্রমণ জোন্সের। ওপাশে আন্দ্রিস গাউস একটু রয়েসয়েই খেলছিলেন, ২৫ বলে তুলেছিলেন ২৫ রান। তবে জোন্স শুরু থেকেই ছিলেন রূদ্ররূপে। একের পর এক সীমানাছাড়া করা বলগুলো একটু একটু করে লক্ষ্যটাকে খুব কাছে নিয়ে এসেছিল দলের। শেষে গাউসও হাত খুলেছিলেন। লক্ষ্য থেকে ২২ রানের দূরত্বে এসে সে সঙ্গী গাউস ফিরলেন। অনভিজ্ঞ দল, বড় মঞ্চের চাপে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে যেতেই পারত। তবে যুক্তরাষ্ট্র আজ তা হতে দেয়নি, জোন্স ফিরেছেন একেবারে ম্যাচ শেষ করেই। 

পথে তিনি ভেঙেছেন একগাদা রেকর্ড। গাউসের সঙ্গে তার তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৫৮ বলে আনা ১৩১ রান যুক্তরাষ্ট্রের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের সর্বোচ্চ। হাঁকালেন একে একে দশটা ছক্কা, এটাও এক ইনিংসে দলটার সর্বোচ্চ। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তিন অঙ্কের কোনো জুটিতে দ্রুততম রান তোলার রেকর্ড, সহযোগী দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয় উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটির রেকর্ড। সবশেষে গড়লেন সহযোগী দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ দলীয় রানের রেকর্ডও, যা ঘণ্টাদুয়েক আগে গড়েছিল কানাডা। 

এত্তো এতো রেকর্ড গড়ে জোন্স অনুচ্চারে জানান দিয়েই দিলেন, তার সময়টা এসে গেছে।

খেলার দুনিয়া | ফলো করুন :