হ্যাটট্রিক হলো না ডাচদের, নায়ক মিলারে জিতল প্রোটিয়ারা
এবারের বিশ্বকাপ যেন কোনো ওয়েস্টার্ন থ্রিলার। একেকটা ম্যাচ, একেকটা অধ্যায়। প্রত্যেকটা অধ্যায় আপনাকে দিয়ে যাবে রোমাঞ্চের ছোঁয়া। এর আগে ঠিক কতগুলো ম্যাচে এমন হয়েছে, তা আপনি গুণতে গেলে হাতের আঙুল কম পড়ে যেতে পারে। সে তালিকায় আজ রাতে যোগ হলো নেদারল্যান্ডস-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচটা।
১২ রানে ৪ উইকেট খুইয়ে প্রোটিয়ারা রীতিমতো খাদের কিনারে ছিল। যা করছিল, সবই ভুল হচ্ছিল। কিন্তু তখনই যেন একজন ওয়েস্টার্ন গল্পের নায়ক বনে গেলেন ডেভিড মিলার। পরের গল্পটা আপনার জানা। ওয়েস্টার্ন গল্পের নায়করা যা করেন, ‘অ্যাগেন্সট অল অডস’ কচুকাটা করেন প্রতিপক্ষকে, মিলারও করলেন। স্রোতের বিপরীতে সাঁতরে দলকে তরিয়ে দিলেন, এনে দিলেন ৪ উইকেটের একটা রোমাঞ্চকর জয়।
ম্যাচের শুরুর অর্ধটা স্রেফ দক্ষিণ আফ্রিকারই ছিল। মার্কো ইয়ানসেনের তোপে পড়ে শুরুতেই নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিল। শুরুর দশ ওভারে তুলতে পেরেছিল মোটে ৩৫ রান, তাও আবার ৪ উইকেট খুইয়ে! এরপর আরও দুই উইকেট খুইয়ে সপ্তম উইকেট জুটিতে খানিকটা স্থিতি পায় দলটা। সাইব্র্যান্ড এঙ্গেলব্রেখট আর লোগান ফন বিকের ৫৪ রানের জুটিতে সে ধাক্কাটা সামলায় ডাচরা। দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া এঙ্গেলব্রেখট ৪০ করে বিদায় নেন শেষ ওভারে। দক্ষিণ আফ্রিকার ওটনেইল বার্টম্যান শেষ ওভারে তিন উইকেট নিয়ে ১১ রানে ৪ উইকেট ঝুলিতে পুরে প্যাভিলিয়নে ফেরেন, ইয়ানসেন আর আনরিখ নরকিয়ার দুজনেই নেন দুটো করে উইকেট।
ডাচদের আশার গল্পটা শুরু হলো এর ঠিক পর। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে এই গেল অক্টোবরেই নেদারল্যান্ডসের জয় আছে একটা, তাও সেটা শুরুতে ব্যাট করে। আজ তারই পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা জাগিয়েছিল ডাচরা। দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংসের প্রথম বলেই একটা ভুল বোঝাবুঝি হলো, কুইন্টন ডি কক রান আউট হলেন, ফিরলেন ডায়মন্ড ডাক নিয়ে, অর্থাৎ কোনো বলের মুখোমুখি না হয়েই!
এরপর রিজা হেন্ড্রিকস বোল্ড হলেন, এইডেন মার্করামও ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন যখন, তখন দক্ষিণ আফ্রিকার রানটাকে ক্রিকেটের স্কোরকার্ডের চেয়ে ফুটবলের স্কোরলাইনই বেশি মনে হচ্ছিল, ৩-৩ কি আর হরহামেশা ক্রিকেট মাঠে দেখা যায়? একটু পর এর চেহারাটা একটু ভদ্রস্থ হলো বটে, কিন্তু হাইনরিখ ক্লাসেনের বিদায়ের সময় প্রোটিয়াদের বিপদটা কমেনি, ১২-৪ উইকেট নেই তখন।
লক্ষ্য ছোট হলে এমন পরিস্থিতিতে মাথাটা ঠাণ্ডা রাখলেই কেল্লাফতে। মিলার এগিয়ে এসে করলেন তাই। শুরুতে ত্রিস্তান স্তাবসের সঙ্গে গড়লেন ৬৫ রানের জুটি। স্তাবস যখন ফিরছেন, তখনও দলটার ২৭ রান চাই, হাতে আর ওভার ছিল মোটে তিনটে; পরিস্থিতিটা তখনও কিছুটা অনুকূলেই ছিল ডাচদের। তবে সে লক্ষ্যটা শেষমেশ দক্ষিণ আফ্রিকা টপকে গেল ৭ বল বাকি থাকতেই। কারণটা ওই ডেভিড মিলার। তার ৫১ বলে ৫৯ রানই তো দলকে বাঁচিয়ে দিল ডাচদের কাছে বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক হারের গ্লানি থেকে!
বিশ্বকাপে নিজেদের পরের ম্যাচে দুই দলই মুখোমুখি হবে বাংলাদেশের। আগামী সোমবার প্রোটিয়ারা নামবে নাজমুল হোসেন শান্তদের সামনে, এরপর বৃহস্পতিবার ডাচরা। বাংলাদেশ নিশ্চয়ই এই ম্যাচটা দেখেছে বেশ মনোযোগ দিয়েই।