এমন লড়াইয়ের পরও সঙ্গী ৪ রানের হতাশা
‘ইটস জাস্ট আ বিটারসুইট সিম্ফনি, দ্যাটস লাইফ’ – দুই দল যখন হাত মেলাচ্ছিল ম্যাচটা শেষে, তখন নাসাউ কাউন্টি ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সাউন্ড সিস্টেম কাঁপছিল ৯০ দশকের ইংল্যান্ডভিত্তিক ব্যান্ড ভার্ভের এই গানে। আগে থেকেই ঠিক করা ছিল কি না কে জানে, বাংলাদেশের পরিস্থিতিটার সঙ্গে তা যেন মিলে গেল বেশ করে! জীবন ধারণের গ্লানির জায়গায় আপনি স্রেফ বাংলাদেশের ৪ রানে হারের গ্লানিটাকে বসিয়ে দেখুন, কী মিলে যাচ্ছে না?
অথচ পরিস্থিতিটা দক্ষিণ আফ্রিকার জন্যও তো হতে পারত! শেষ ওভারের পেনাল্টিমেট বলটায় মাহমুদউল্লাহ লং অনে জোরসে হাঁকালেন কেশভ মহারাজের লো ফুলটসটা, আর একটু জোর পেলেই হতো, আর একটা মিটার ওপর দিয়ে গেলে এইডেন মারক্রাম বলের টিকিটিরও নাগাল পেতেন না। সেটা হলে এক বল হাতে রেখে বাংলাদেশ পেত ৪ উইকেটের দুর্দান্ত এক জয়। কিন্তু হলো না, ডুবতে হলো ওই ৪ রানে হারের গ্লানিতে।
এ তো গেল ‘বিটার’ অংশটা। ‘সুইট’ অংশটা কী, তা জানবেন না? চলুন ফিরে যাওয়া যাক এক সপ্তাহ আগে। বাংলাদেশ যখন প্রথম ম্যাচটায় নামেনি আদৌ। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হার, ভারতের কাছে ওভাবে দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া… সব মিলিয়ে আপনি তখন দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচটার কথা মনে পড়লে কী ভাবছিলেন, একটু মনে করে দেখুন? সেই দলটাকে আরেকটু হলেই তো হারিয়ে দেওয়া যাচ্ছিল! তা কি বিশাল গ্লানিটার পাশাপাশি একটু হলেও সুখস্মৃতি এনে দেবে না আপনার মনে?
অম্লমধুর নয়, ম্যাচটা পুরোপুরি মধুরই হতে পারত। যদি টপ অর্ডারের ব্যাটাররা খেলতেন ‘তাদের’ মতো করে। স্ট্রাইক রেট নিয়ে টুর্নামেন্ট শুরুর আগে টীকাটিপ্পনী কম শুনতে হয়নি অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তকে। এই গেল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও শুনেছেন তিনি। তবে তখন ঠাণ্ডা মাথায় খেলে রান করছিলেন নিয়মিত। আজ শতরানের স্ট্রাইক রেট নিয়ে তিনি যদি ৩৫ বলও টিকে থাকতেন, তাহলেও বাংলাদেশের ধন্য ধন্য পড়ে যেত।
কিন্তু তা হয়নি। দলের যখন রান প্রয়োজন ওভারপ্রতি ছয়ের একটু বেশি করে, তখন তার মনে হলো খানিকটা শর্ট বলে বাউন্ডারি হাঁকানো দরকার। তার কিছুক্ষণ আগে সাকিব আল হাসানও একই কাজ করেছিলেন। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার তো দূর, দলের সেরা সাকিবও নন তিনি, এটা বুঝিয়ে দিতেই যেন হয়তো! শর্ট বলে হুক করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছিলেন শর্ট মিড উইকেটে। তা দেখেও শিক্ষা হলো না, তাই কিছুক্ষণ পর একই দশা হলো শান্তরও। তার আগে লিটন? পাওয়ারপ্লে শেষে সময়টা যখন ছিল ইনিংস গড়ার, তখন মহারাজকে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে ফিরেছিলেন তিনি। এটা হয়তো কারোই মনে ছিল না যে, প্রয়োজন ছিল স্রেফ ওভারপ্রতি ছয়টা করে রান, ছয়টা সিঙ্গেলই শুধু!!
শেষ কিছু দিন ধরেই এমন দৃশ্য দেখাচ্ছেন টপ অর্ডার ব্যাটাররা। হালটা ধরছেন মিডল অর্ডারে তাওহীদ হৃদয় আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। আজও ধরলেন, ৪৪ রানের ইনিংসে দুজন স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন জয়েরও। কিন্তু সব ভজকট পাকিয়ে গেল কাগিসো রাবাদার ১৮তম ওভারে। আম্পায়ারকেও চাইলে খানিকটা দোষ দেওয়া যায়, আউটটা হৃদয় হয়েছিলেন আম্পায়ার্স কলে। আম্পায়ার আউট না দিলে যে তাকে আউটই করতে পারত না প্রোটিয়ারা! আম্পায়ারকে আরও এক জায়গায় দোষ দেওয়া যায়। ১৭তম ওভারের দ্বিতীয় বলে এলবিডব্লিউর আবেদন ওঠে মাহমুদউল্লাহর বিপক্ষে। সেটায় আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। ওদিকে বল চলে যায় বাউন্ডারির বাইরে। রিভিউতে দেখা যায় মাহমুদউল্লাহ আউট নন, কিন্তু আম্পায়ার আউট দিয়ে দেওয়ায় ডেড হয়ে যায় বলটা। চার রান পায়নি বাংলাদেশ। ম্যাচটা শেষ হয় বাংলাদেশের ওই চার রানের হারে!
তাওহীদকে আউট করা রাবাদার সে ওভার থেকে এল আর মাত্র দুই রান। ১৮ বলে ২০ এর সমীকরণটা দুই ওভার আগে দাঁড়ায় ১৮ রানে। সে সমীকরণটা আর মেলাতে পারেনি বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহ চেষ্টা করেছিলেন, তবে তার চেষ্টাটাও আটকে গেল বাউন্ডারি লাইনের ওই এক মিটারে!
ম্যাচ জেতাতে না পারলেও ম্যাচে বাংলাদেশের প্রাপ্তির জায়গাটা ওই হৃদয়-রিয়াদই। তার আগে তানজিম সাকিবসহ পেসাররা, আর অতি অবশ্যই রিশাদ। তানজিম সাকিব শুরুতে ৩ উইকেট নিয়ে নাড়িয়ে দিয়েছিলেন প্রোটিয়াদের। এরপর তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান, মাহমুদউল্লাহরা চাপে রেখেছিলেন দলটাকে। সে চাপ সামলেও হাইনরিখ ক্লাসেনের ৪৬ আর ডেভিড মিলারের ২৯ বেরিয়ে এল। শেষে এসে তাদের আরও জেঁকে বসতে দেননি তাসকিন আর রিশাদ। লক্ষ্যটাকে ১১৩ রানে বেধে রাখেন সবাই মিলে। একটু এদিক ওদিক হলে, টপ অর্ডাররা একটু দেখলেই হয়তো তা তাড়া করা হয়ে যেত অনায়াসে। তা হলো না শেষমেশ। তাই দারুণ লড়াইয়ের পরও বাংলাদেশের সঙ্গী হলো ওই ম্যাচের শেষে বেজে ওঠা ‘বিটার সুইট সিম্ফনি’।