সাকিব শুধু সমাধান নয়, সমস্যাও!
বিশ্বকাপে ১০ নম্বর অবস্থান থেকে বাংলাদেশের উন্নীতি হয়েছে। পয়েন্ট টেবিলে বাংলাদেশ এখন আট নম্বরে। ইংল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসের ওপরেও বাংলাদেশ। অবশ্য আকস্মিক এই অবনতি থেকে উন্নীত হওয়ার মাঝে বাংলাদেশ কোনো ম্যাচ খেলেনি। ইংল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডস বাজেভাবে তাদের ম্যাচ হেরেছে বলেই বাংলাদেশের উন্নতি!
তবে বিশ্বকাপের মাঠে বাংলাদেশের এই উন্নতির চেয়েও বড় খবর এখন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। এবং যথারীতি মাঠের বাইরের ঘটনার জন্য সাকিব এই আলোচনা, বৃহৎ অর্থে সমালোচনার তল্লাটে।
মুম্বাইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে বড় ব্যবধানে ম্যাচ হারের পরদিন দুপুরে দল এলো কলকাতায়। আর সাকিব আল হাসান সেদিন সকালেই এলেন ঢাকায়! কোচ ও ম্যানেজারের কাছ থেকে ‘ছুটি’ নিয়েই সাকিব আকম্মিক ঢাকায় এলেন।
-কেন এসেছিলেন ঢাকায় সাকিব?
ঢাকা থেকে বিসিবি জানাল, বিশ্বকাপে ব্যাটিংয়ে রান মিলছে না। তাই মেন্টর ও কোচ নাজমুল আবেদিন ফাহিমের কাছে পরামর্শ নিতে এসেছেন সাকিব। ঢাকায় সাকিব দুদিন কোচের সঙ্গে তালিম নিলেন। মিরপুরের ইনডোরে হাতে কলমে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা চালালেন। কলকাতায় দলের সঙ্গে তার যোগ দেওয়ার সম্ভাব্য সূচি ছিল শুক্রবার সকালে। কিন্তু সেই সূচি এগিয়ে আনার নির্দেশনা দিল বিসিবি, বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর)। বলল, আরো আগে যেতে হবে। বিসিবির সেই নতুন নির্দেশনা পেয়ে সাকিব বৃহস্পতিবার রাতের ফ্লাইট ধরে কলকাতায় উড়ে এলেন।
সাকিবের এই দুদিনের ‘ঢাকা সফর’ এবং ব্যাটিং সমস্যার সমাধানের এমন উপায় হয়ে গেল চলতি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমালোচিত অংশ। এমনকি পেছনের চার ম্যাচে বড় হারের চেয়েও বেশি কাঁটাছেড়া শুরু হলো সাকিবের এই মুম্বাই-ঢাকা-কলকাতা সফরকে নিয়ে।
প্রশ্ন উঠলো এন্তার।
১) সাকিবের এই ব্যাটিং সমস্যার সমাধান করার মতো কোচ কি তার বিশ্বকাপ দলে নেই?
২) অধিনায়ক যদি তার নিজের ফর্ম নিয়ে এমন হতাশ হন, তাহলে পুরো দলের কি হবে?
৩) এখন যারা বিশ^কাপের মাঠে ফর্মে নেই, তারাও যদি এমন ‘ছুটি’ চান; সেটা কি গ্রান্ট হবে?
৪) সাকিবের এই সফর কি শুধু ক্রিকেটীয় নাকি তিনি এই ফাঁকে নতুন কোনো শোরুম উদ্বোধন করে গেলেন?
৫) অধিনায়কের এভাবে অন্য কোচের কাছে ছুটে যাওয়া কি পুরো কোচিং প্যানেলের ওপর অনাস্থা কিনা?
এবার উত্তরগুলো খুঁজি।
বাংলাদেশের ১৫ সদস্যের দলের জন্য সব মিলিয়ে কোচিং প্যানেলের কলোবর ৮। এই দলের সঙ্গে বিশেষজ্ঞ ব্যাটিং কোচও রয়েছেন। সাকিব কেন রান পাচ্ছেন না। কি করলে রান পাবেন। তার সমস্যাটা কি টেকনিকে? নাকি মানসিকতায়? এমনসব সমস্যার সমাধান করার জন্যই তো বেসুমার ডলার খরচ করে বিশাল কোচিং প্যানেল গঠন করা হয়েছে। তারা দলের সঙ্গেই আছেন। সাকিবের ব্যাটিং সমস্যা এই প্যানেলের কেউ যদি সমাধান করতে না পারেন তাহলে তো বুঝতেই হবে তারা যথেস্ট দক্ষ নন। বিশ্বকাপের মাঝপথে এভাবে অন্য কোচের কাছে সাকিবের ছুটে যাওয়া এই কোচিং প্যানেলের ওপর তার আস্থাহীনতা প্রমাণ করছে যে!
অধিনায়ক নিজের সমস্যার সমাধানের জন্য অন্যত্র ছুটে গিয়ে জানান দিলেন তিনি সত্যিই বড় সমস্যায় রয়েছেন। বিশ্বকাপের মাঝপথে অধিনায়কের এভাবে দলছুট হওয়াকে সহজভাবে নিতে পারেননি বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার। দল সঙ্কটে-এমন সময় কাঁধে তারা অধিনায়কের হাতের স্পর্শের আশায় ছিলেন। একটা তেজি বক্তব্য, একটা যুদ্ধাংদেহি উদ্দীপনা-নেতিয়ে পড়া পুরো দলের জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারতো। কিন্তু দলের ক্রিকেটাররা দেখলেন অধিনায়ক তাদের ফেলে রেখে এই বিপদে নিজের কথাই বেশি ভাবছেন!
এশিয়া কাপের সুপার ফোরের খেলা চলাকালে সেপ্টেম্বরে সাকিব হঠাৎ টুর্নামেন্টের মাঝপথে কলম্বো থেকে ঢাকায় চলে এসেছিলেন। সেটা অবশ্য কোনো ক্রিকেটীয় কোনো কাজে নয়, সেই সময় তিনি ঢাকায় একটি শোরুম উদ্বোধন করে পরদিন আবার টুর্নামেন্টে খেলতে শ্রীলঙ্কার ফ্লাইট ধরেন। এই কারণে এবার বিশ্বকাপের মাঝপথে শুধুমাত্র ক্রিকেটীয় কারণে ঢাকায় ফিরলেও সাকিবের এই সফরের বিষয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেন। প্রশ্ন তুলেন।
কারণ আর কিছু নয়, সাকিব এমনসব সমস্যা যে নিজেই তৈরি করেছেন! আর তাই যে মাঠে একসময় তিনি শুনেছিলেন সাকিব আল হাসান, বাংলাদেশের জান। সেই মাঠেই তাকে এখন শুনতে হলো ভুয়া ভুয়া।
সাকিব আমাদের অনেক ম্যাচ জিতিয়েছেন। অনেক আনন্দ দিয়েছেন। যে সাকিব ছিলেন এতোদিন সঙ্কটের সমাধান। সেই তিনিই এখন সমস্যা!
সময় কতোকিছুই বদলে দেয় এবং কতো দ্রুত!