ভারতের কাছে হেরে সেমিফাইনালের স্বপ্ন ফিকে

ভারতের কাছে হেরে সেমিফাইনালের স্বপ্ন ফিকে

বিশ্বকাপে টিকে থাকতে হলে বাংলাদেশকে আজ জিততেই হতো। কিন্তু দলটা জেতা তো দূর অস্ত, ভারতকে কোনো প্রকারের চ্যালেঞ্জই জানাতে পারেনি। শুরুতে বোলিং করে ১৯৬ রান হজমের পর ব্যাটারদের জ্বলে উঠতে হতো। কিন্তু শ্লথ ব্যাটিংয়ে তা আর হলো না। বাংলাদেশ আটকে গেল ১৪৬ রানে। ৫০ রানে হেরে শেষ চারের স্বপ্নটা একরকম শেষই হয়ে গেছে দলের।
এখনও স্বপ্নটা শেষ হয়ে যায়নি অবশ্য। একটা সুযোগ আছে। সেটা কীভাবে? আফগানিস্তানকে আজ রাতের ম্যাচে হারাতে হবে অস্ট্রেলিয়াকে। এরপর নিজেরা সেই উজ্জীবিত আফগানদের হারাতে হবে সুপার এইটের শেষ ম্যাচে, তাও আবার বড় ব্যবধানে। শেষ ম্যাচে ভারত যদি অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দেয়। তাহলেই তিন দলের পয়েন্ট হয়ে যাবে সমান। রানের হিসেবটা মিলিয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জিততে পারলে বাংলাদেশ চলে যাবে শেষ চারে।
তবে বাংলাদেশকে এমন এর হার, ওর হারের প্রার্থনায় বসে পড়ার পরিস্থিতিতে নিয়ে গেছে নিজেদের পারফর্ম্যান্স। টিম ম্যানেজমেন্টের ভাবনাও কি? টসের সময় প্রথম চমকটা এল। তাসকিন আহমেদ নেই! রোহিত শর্মার বাঁহাতি পেসে নড়বড়ে পায়ের কথা মাথায় রেখে শরিফুল ইসলামকে একাদশে আনতে পারত কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু শুরুতেই বাংলাদেশ গেছে রক্ষণাত্মক মেজাজে। একাদশে যোগ করা হলো অষ্টম ব্যাটার জাকের আলীকে। হওয়ারই কথা অবশ্য, বাংলাদেশের টপ অর্ডার যে ভঙ্গুর!
দুই পেসার নিয়ে খেলতে নেমে বাংলাদেশ শুরুতেই গেছে স্পিনারদের কাছে। সেটা যে ভালো সিদ্ধান্ত ছিল না, রোহিত আর বিরাট কোহলি মিলে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন। পুরো টুর্নামেন্টে এর আগ পর্যন্ত ২৯ রান করা কোহলি আজ পাওয়ারপ্লেতেই তুলে ফেলেন ২৭ রান, ওদিকে শেষ তিন ম্যাচে ২৪ রান করা রোহিত আজ ১১ বলে করে ফেলেন ২৪। পাওয়ারপ্লেতে তাকে ফেরানো গেল বটে, কিন্তু ততক্ষণে তিনি তার কাজ করে দিয়েছেন, ভারতকে এনে দিয়েছেন উড়ন্ত সূচনা।
তার কাজটাই এখন এমন। একটু আগে ম্যাচের প্রতিক্রিয়াতেও হার্শা ভোগলেকে এসে বলে গেলেন, টি-টোয়েন্টিতে তো ফিফটি-সেঞ্চুরির দরকার নেই আপনার, প্রত্যেকটা ব্যাটার বোলারকে চাপে ফেলতে পারলেই হলো! ভারত করেছেও তাই। দলটার সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল মোটে ৫০ রানের, বলের হিসেবে তা টিকেছে ২৮টি ডেলিভারি। কিন্তু ভারতের রান ঠিকই আকাশে উঠে গেছে। কেন? প্রত্যেক ব্যাটার তাদের দায়িত্বটা ভালোভাবে পালন করেছেন। বিরাট কোহলি, ঋষভ পান্ত আর শিভম দুবেদের সবাই আউট হয়েছেন ত্রিশের ঘরে রান করে। কিন্তু তাদের সবাই খেলেছেন ১৫০র আশেপাশের স্ট্রাইক রেট নিয়ে। শেষ দিকে ১৮৫ স্ট্রাইক রেটে হার্দিক পান্ডিয়ার ফিফটিতেই তাই কাজটা হয়ে গেছে ভারতের, বাংলাদেশের সামনে তুলে দিয়েছে ১৯৭ রানের বিশাল এক লক্ষ্য।
শেষ কিছু দিনে বাংলাদেশের টপ অর্ডার ব্যাটিংয়ের কথা মাথায় রাখলে একে এভারেস্ট নয়, মাউন্ট অলিম্পাসসমই মনে হতে পারত আপনার। বাংলাদেশ ব্যাটিংটাও করেছে ওই মেজাজেই; এভারেস্ট এই কিছুদিন আগেও বাংলাদেশের বাবর আলী চড়ে এলেন; কিন্তু মঙ্গল গ্রহে গিয়ে অলিম্পাসে চড়াটা অসম্ভব, বাংলাদেশ রানটাকে অলিম্পাস-জ্ঞান করেই যেন এগোচ্ছিল।
ওপেনিং রান পাচ্ছিল না, আজ রান এল। তবে লিটন দাস পাওয়ারপ্লেতেই ফিরলেন। তার দোষ নেই, বড় রান তাড়ায় তাকে মারতেই হতো। কিন্তু তার বিদায়ের পর থেকেই বাংলাদেশ যেন খোলসে ঢুকে গেল। তানজিদ তামিম শুরুটা করেছিলেন ভালো, স্ট্রাইক রেট ছিল ১৪০ এর আশেপাশে। কিন্তু যেই না সময় যাচ্ছিল, একটু একটু করে স্ট্রাইক রেট কমে যাচ্ছিল তার। শেষমেশ আউট যখন হলেন কুলদীপ যাদবের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে, তখন তার রান ছিল ২৯, বল খেলে ফেলেছেন ৩১টা, এর চেয়ে তিন বল কম খেলে পান্ডিয়ার নামের পাশে একটা ফিফটি ছিল!
নাজমুল হোসেন শান্তর ইনিংসটাও এগিয়েছে একই টেমপ্লেটে। দ্রুত কিছু রান তুলে উইকেটে থিতু হওয়া, এরপর সময় যত গড়ায়, তিনি খোলসে ঢুকেন তত। ২৪ বলে ৩৬ রান ছিল তার। শেষমেশ তিনি যখন আউট হলেন, তার বলের সংখ্যা গিয়ে ঠেকল ৩২ এ, রান বাড়ল আর মোটে ৪টা।
এমন সব ইনিংসের ফলে আর যাই হোক, ১৯৭ রান তাড়া করা যায় না। তাই ওভার যত যাচ্ছিল, বাংলাদেশের সামনে ওভারপ্রতি রানের বোঝাটাও বাড়ছিল তত।
শান্তর আগে তাওহীদ হৃদয়ও গেলেন, তিনি অবশ্য থিতু হওয়ার আগেই ফিরলেন। সাকিব একটা চেষ্টা করেছিলেন। একটা চার আর একটা ছক্কায় অভিপ্রায়টা জানান দিয়েছিলেন নিজের, কিন্তু শেষমেশ পরিকল্পনার বাস্তবায়নটা হলো না ঠিকঠাক, ক্যাচ দিয়ে ফেরেন।
ব্যাটিংটা কঠিন কিছু নয়, রিশাদের ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিল তাই। তিনি স্রেফ ১০ বল টিকেছেন, ৩ ছক্কা আর এক চারে তিনি খেলেছেন ২৪ রানের ইনিংস। তবে ততক্ষণে বড্ড বেশি দেরি হয়ে গেছে। এই রানগুলো আরও একটু আগে থেকে কেউ তোলার উদ্যোগ নিলে তার রানটা স্রেফ ‘ব্যবধান কমানোর’ রান না হয়ে অন্য কিছুও হতে পারত।
তা হয়নি। সে কারণে টানা দ্বিতীয় হারের কবলে পড়ল বাংলাদেশ। সেমিফাইনালের স্বপ্নটাও ফিকে হয়ে গেল সঙ্গে সঙ্গে।

সম্পর্কিত খবর