অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে বাংলাদেশের আশাও বাঁচিয়ে রাখল আফগানিস্তান

অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে বাংলাদেশের আশাও বাঁচিয়ে রাখল আফগানিস্তান

ফিচারের ছবিটা যে দেখছেন, তখনও কাগজে কলমে জেতেনি আফগানিস্তান। তবু গুলবাদিন নাইবের এমন আগ্রাসী উদযাপন কেন? কারণ গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে যে ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি। এই ম্যাক্সওয়েলই তো আফগানদের জয়টা ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন দুই দলের শেষ দেখায়। মুম্বাইয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ম্যাচে করেছিলেন অবিশ্বাস্য এক ডাবল সেঞ্চুরি। ৯১/৭ থেকে দলকে জিতিয়ে তবেই খোঁড়াতে খোঁড়াতে উঠেছিলেন মাঠ ছেড়ে। সেই ম্যাক্সওয়েলকে ফিরিয়ে এমন উল্লসিত হওয়ারই কথা নাইবের। 

আফগানরা সেখানেই থামেনি। ওয়াংখেড়েতে সেই না পাওয়া জয়টা আজ তুলে নিল আর্নস ভেল স্টেডিয়ামে। ২১ রানের দারুণ এই জয়ে দলটা স্রেফ নিজেদের আশা বাঁচিয়ে রাখল। সঙ্গে বাংলাদেশের আশাটাও বেঁচে রইল একটু করে। 

অথচ ম্যাচটা হতে পারত প্যাট কামিন্সের। আগের ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেছিলেন। আজ রহমানউল্লাহ গুরবাজ আর ইবরাহিম জাদরানের ১১৫ রানের ওপেনিং জুটির পরেও যে আফগানরা ১৫০ ছুঁতে পারল না, তার পেছনে অবদানটা তো তারও! সেটাও আবার যেনতেনভাবে নয়। একেবারে হ্যাটট্রিক করে। হ্যাটট্রিক নিজেই বিরল এক কীর্তি। কিন্তু হ্যাটট্রিকেরও রেকর্ড করে ছাড়লেন অজিদের দীর্ঘতর দুই ফরম্যাটের অধিনায়ক। 

তার আগে আফগানদের ওপেনিং জুটিটা ভাঙেন মার্কাস স্টয়নিস, ফেরান গুরবাজকে। এরপর অ্যাডাম জ্যাম্পার শিকার বনে বিদায় নেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই আর ইবরাহিম জাদরান। পরের ওভারে কামিন্সের কীর্তির শুরু। রশিদ খানকে ফিরিয়ে তুলে নেন প্রথমটা। পরের দুটো পেলেন ইনিংসের শেষ ওভারের প্রথম দুই বলে। ফেরালেন করিম জানাত আর গুলবাদিন নাইবকে। গড়ে ফেলেন হ্যাটট্রিক, বনে যান প্রথম বোলার হিসেবে টানা দুই ম্যাচে হ্যাটট্রিক করা একজন। 

আফগানদের কাজটা প্রায় হয়ে এসেছিল। গুলবাদিন নাইবের ৯ বলে ১৩ আর মোহাম্মদ নবীর ৪ বলে ১০ রানের ইনিংসে ভর করে দলটা পৌঁছে যায় ১৪৮ রানে। কে না জানে, আর্নস ভেলের স্পিন উইকেটের কথা মাথায় রাখলে কাজটা সহজ হওয়ার কথা নয় অস্ট্রেলিয়ার!

নাভিন উল হক আর নাইব মিলে সেটা করতেও দেননি। শুরুর কাজটা করেন নাভিন। শুরুর ওভারে নাভিন উল হক, এরপর মিচেল মার্শকে ফিরিয়ে ধাক্কা দেন অজিদের। এরপর মোহাম্মদ নবী যখন আগের ম্যাচে ফিফটি করা ডেভিড ওয়ার্নারকে ফেরালেন, তখন পাওয়ারপ্লেতেই ৩ উইকেট নেই হয়ে গেছে অস্ট্রেলিয়ার, স্কোরবোর্ডে রান মোটে ৩২!

ওয়াংখেড়ের সেই ম্যাচে দেয়াল তুলে দাঁড়িয়েছিলেন ম্যাক্সওয়েল, তুলে দাঁড়িয়েছিলেন আজও। শুরুতে স্টয়নিসকে সঙ্গে নিয়ে, নাইবের শিকার হয়ে তিনি বিদায় নিলে অনেকটা একাই লড়েছেন ম্যাক্সি। তখন মনে হচ্ছিল, আর্নস ভেলেও বুঝি ওয়াংখেড়েই ফিরে ফিরে আসছে!

তবে এবার সেটা হতে দেননি নাইব, নুর আহমেদও। ওয়াংখেড়ের ওই ২০০* রানের ইনিংসের শুরুতে দুবার ক্যাচ দিয়ে বেঁচে গিয়েছিলেন ম্যাক্সওয়েল। সে দুই ক্যাচের শোধবোধ করতেই হয়তো, এবার তার ৫৯ রানের ইনিংসের ইতি ঘটল দুর্দান্ত এক ক্যাচে। অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে বল পাঠিয়েছিলেন তিনি, অনেকটা দৌড়ে এসে সামনে ঝাঁপিয়ে ক্যাচটা নিয়েছেন নুর। আফগানদের উদযাপন দেখে মনে হচ্ছিল ম্যাচটা তখনই তারা জিতে গেছে।

সেখান থেকে অনেক কিছুই হতে পারত। তবে সে অনেক কিছুর সম্ভাবনা একে একে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন রশিদ খান, নাইব আর নাভিনরা। পরের কেউ আর দুই অঙ্কেও যেতে পারেননি। আফগানিস্তান ম্যাচটা জেতে ২১ রানের ব্যবধানে। আর তাতে সেমিফাইনালের আশাটাও বেঁচে রইল আফগানিস্তানের, বাংলাদেশেরও বৈকি!

সম্পর্কিত খবর