ইতিহাস গড়ে সেমিফাইনালে আফগানরা
সুযোগটা বাংলাদেশের সামনেও ছিল। হিসেব কষে জয়টা তুলে নিতে পারলে বাংলাদেশই থাকতে পারত সেমিফাইনালে। কিন্তু শেষমেশ তা আর হলো কই!
হলো তার উল্টোটা। সমীকরণটা মেলাল আফগানিস্তানই। ডিএলএস পদ্ধতিতে ৮ রানের জয় তুলে নিয়েছে দলটা। আর তাতেই গড়া হয়ে গেল ইতিহাসটা। প্রথমবারের মতো কোনো আইসিসি টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে চলে গেল আফগানিস্তান।
বাংলাদেশের সামনে সমীকরণটা ছিল ১১.৪ থেকে ১৩.৪ ওভারের মধ্যে জিততে হবে, লক্ষ্যের ওপর নির্ভর করবে ওভারের মাত্রা। আফগানদের ১১৫ রানে আটকে ফেলার পর তা ঠিক হলো ১২.১ ওভার। বাংলাদেশ শুরুটা করেছিল সে লক্ষ্যেই। শুরুর ওভারে লিটন দাস তুললেন ১৩ রান। তবে ওপাশ থেকে তানজিদ তামিম গেলেন, এরপর থেকেই ওপাশে সঙ্গীদের আসা যাওয়ার মিছিল দেখেছেন লিটন।
তবু ওপাশ থেকে একটু একটু করে কাছাকাছি যাচ্ছিল বাংলাদেশ। নাজমুল হোসেন শান্ত, সাকিব আল হাসান, সৌম্য সরকার, তাওহীদ হৃদয়দের বিদায়ের পরও। একটা সময় সমীকরণ ছিল ১৯ বলে ৪৩ রান। টি-টোয়েন্টির যুগে এই খেলায় এর চেয়ে বেশি রানও তো তাড়া করার রেকর্ড ছিল বহু! কিন্তু বাংলাদেশ আর পারল না! ইনিংসের ১০ম ওভারে স্ট্রাইকে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। গোটা বিশ্বকাপে গড়পড়তারও নিচে থাকা পারফর্ম্যান্সকে মুছে দেওয়ার সুযোগ ছিল তার সামনে। কিন্তু নুর আহমেদের ওই ওভার থেকে তিনি মোটে নিতে পারলেন ৪ রান, ডট দিলেন পাঁচটা। সমীকরণটা এরপর এসে ঠেকল ১৩ বলে ৩৯ রানে। এমন লক্ষ্য কি আর তাড়া করা যায়?
যায়ওনি। রশিদ খান এরপর এলেন দৃশ্যপটে। ৯ বলে ৬ রান করা রিয়াদের সঙ্গে রিশাদকেও ফেরালেন। বাংলাদেশ সেমিফাইনালে না যেতে পারলেও জয়টা তুলে নিতে পারল। অস্ট্রেলিয়াও চাইছিল তাই। বাংলাদেশ ম্যাচটা জিতলে তারা চলে যেত সেমিফাইনালে। সে কারণে গত রাতে ভারতের কাছে হারের পর অজি অধিনায়ক মিচেল মার্শ তো বলেই ফেলেছিলেন, কাম অন বাংলাদেশ!
তবে বাংলাদেশ তাও পারল না। বৃষ্টির লুকোচুরির মাঝে তানজিম সাকিব, তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমানদের উইকেট খুইয়েছে দলটা। ওপাশে ফিফটি করা লিটন দাস রইলেন অপরাজিতই। ইতিহাসের দ্বিতীয় ওপেনার হিসেবে ইনিংসের আদ্যন্ত ব্যাট করার কীর্তিটা গড়লেন তিনি। তাতে আর কী আসে যায়! দল তো ম্যাচটা হেরেই গেছে বৃষ্টি আইনে ৮ রানে! তাতে সব বিশ্বকাপ মিলিয়ে বাংলাদেশের আফগানদের কাছে কখনও না হারার দম্ভটাও ভেঙে চুড়ে গেল। চোখের সামনে জন্ম নেওয়া ক্রিকেটীয় জাতিটাকে চলে যেতে দেখল বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে, যা নিজেরা পারেনি কখনও, তাই আফগানদের করতে দেখল বাংলাদেশ।
এর আগে টস জিতে আফগানরা শুরুটা করেছিল দেখেশুনে। পাওয়ারপ্লেতে উইকেট দেয়নি বাংলাদেশকে। এরপর দশ ওভার পেরিয়ে গেলেও উইকেটের দেখা পাননি মুস্তাফিজরা। ওদিকে ইবরাহিম জাদরান আর রহমানউল্লাহ গুরবাজ মিলে গড়ে ফেলেন রেকর্ড। ওপেনিং জুটিতে ৫০ রানের বেশি করে ফেলেন এই বিশ্বকাপে চতুর্থ বারের মতো। এমন কিছু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দেখেনি আর কখনও।
তবে আফগানরা পথ হারায় এরপরই। রিশাদ হোসেনের বলে জাদরান ফেরার পর থেকে রানের গতি কমতে থাকে দলটার। তার চাপটাই পড়ে দলটার ওপর। পরের তিন ওভারে দলটা তুলতে পারে মোটে ৪ রান।
এক ওভারে ১৩ রান তুলে সে শেকলটা ভাঙার চেষ্টা করেছিলেন গুরবাজ। তবে এরপরই তাকে ফেরান রিশাদ। তার আগে মুস্তাফিজ ফেরান আজমতউল্লাহ ওমরজাইকে। গুরবাজকে ফেরানোর পর রিশাদ ফেরান গুলবাদিন নাইবকেও। এরপর মোহাম্মদ নবীকে যখন সাজঘরের পথ দেখালেন তাসকিন, তখনও তিন অঙ্ক ছোঁয়নি আফগানরা। ছুঁল ১৮.২ ওভার পর। সেখান থেকে দলটা আর কোনো উইকেট না খুইয়ে ১১৫ রান তুলে ইনিংস শেষ করে রশিদ খানের ১০ বলে ১৯ রানের ইনিংসে ভর করে।
তবে সে রানটা আফগানরা রক্ষা করেছে সামর্থ্যের শেষ বিন্দু দিয়ে চেষ্টা করে। তাতেই দলটা চলে গেল সেমিফাইনালে। এখন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়া থেকেও আর মোটে ২ ধাপ দূরে আছেন রশিদ খানরা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আফগানিস্তান: ১১৫/৫ (২০ ওভার); গুরবাজ ৪৩, রশিদ ১৯*; রিশাদ ৩-২৬, তাসকিন ১-১২
বাংলাদেশ: ১০৫/১০ (১৭.৫ ওভার); লিটন ৫৪*, হৃদয় ১৪; রশিদ ৪-২৩, নাভিন ৪-২৬
ফলাফল: আফগানিস্তান ৮ রানে জয়ী (ডিএলএস পদ্ধতিতে)