কাবুল থেকে কান্দাহার, আনন্দে ভাসছে আফগানিস্তান
ভোরের আলো ফোটার আগেই আফগানিস্তানের ক্রিকেটপাগল সমর্থকরা বসে পড়েন টিভির সামনে। বাংলাদেশকে হারাতে পারলেই প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠে যাবে আফগানিস্তান। লেখা হবে আফগানদের নতুন ইতিহাস। সুযোগ তৈরি হবে বিশ্বকাপ জয়ের। যেই দিন দেখার জন্য এতগুলো বছর ধরে অপেক্ষা করে আছে দেশটির ক্রিকেট ভক্তরা। রশিদ-নবীরাও দিয়ে যাচ্ছেন নিজেদের উজাড় করে। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশে নানা সমস্যার মধ্যেও আনন্দের খোরাক যুগিয়ে যাচ্ছেন ক্রিকেটপাগল জাতির জন্য।
এবার আফগানদের সেই আনন্দটা কয়েকগুণে বাড়িয়ে দিয়েছেন রশিদ-নবীরা। বাংলাদেশকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো সেমিতে জায়গা করে নিয়েছে দেশটি। এমন দিনে খেলা শেষে টিভির সামনে থেকে উঠে রাস্তায় নেমে এসেছে আফগানিস্তানের ক্রিকেট ভক্তরা। গোটা আফগানিস্তানই যেন পরিণত হয়েছে উৎসবের নগরীতে। কাবুল থেকে কান্দাহার, আফগানিস্তানের সবগুলো শহরেই এখন হচ্ছে আনন্দ উৎসব।
দেশটির ক্রিকেট উন্মাদনার যেই ছবি ছড়িয়ে পড়ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও। যেখানে রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে বাংলাদেশকে হারিয়ে সেমিতে জায়গা করে নেওয়ার পর শহরে জড়ো হয়েছে দেশটির ক্রিকেটপাগল সমর্থকরা। নেচেগেয়ে দলের এই অর্জনকে উদযাপন করছে তারা। গোটা দেশে এখন চলছে আনন্দ উৎসব।
ম্যাচ শেষে সংবাদসম্মেলনেও এই জয়টাকে দেশের ক্রিকেটপাগল তরুণদের জন্য উৎসর্গ করেন রশিদ খান। সেই সঙ্গে জানালেন তাদের এই সেমিফাইনালে খেলাটা কতটা অনুপ্রাণিত করবে দেশটির তরুণপ্রজন্মকে। প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে খেলার অনুভূতি জানাতে গিয়ে রশিদ বলেন, ‘আমি মনে করি এই সেমিফাইনালটি আফগানিস্তানের তরুণদের জন্য একটি বিশাল অনুপ্রেরণা হতে চলেছে। আফগানিস্তান প্রথমবার সেমিফাইনালে উঠেছে। আমরা অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে সেমিতে খেললেও এই পর্যায়ে কখনোই তা পরিনি। এমনকি সুপার এইটও আমাদের জন্য প্রথমবার। আর এখন আমরা সেমিতে। এটি অবিশ্বাস্য অনুভূতি …। আমরা পারি। দল হিসেবে সেমিফাইনালে থাকাটা আমাদের জন্য স্বপ্নের মতো। এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো কোনো শব্দ আমার জানা নেই। নিশ্চিতভাবে দেশে ফিরে সবাইকেই অনেক খুশি দেখতে পাব।’
অজিদের বিপক্ষে সবশেষ ম্যাচে ঐতিহাসিক জয়ের পর আফগানদের কাছে ক্রিকেটটা ঠিক কী সেটা জানিয়েছিলেন রশিদ। বলেছিলেন, ‘আমরা খেলাধুলা ভালোবাসি। দেশের লোকেরা খেলাধুলা পছন্দ করে। আমাদের দেশে ক্রিকেটই সুখের একমাত্র উৎস। আফগানিস্তানে এটাই একমাত্র উৎস যেখানে মানুষ উদযাপন করতে পারে।’
আফগানদের কাছে ক্রিকেট এখন কেবলই একটা খেলা নয়। এটা তাদের কাছে সুখ, দুঃখ ও আনন্দের উপলক্ষ বটে। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে অর্থনৈতিক কারণে বিশ্বের কোথায় গিয়ে তারা হয়তো সমর্থন দিতে পারেন না রশিদ-নবীদের। তবে আফগানদের জয়ে ঠিকই ঝড়ো হন রাজধানী কাবুলে। বিশ্বমঞ্চে আফগানদের প্রতিটি জয়ে গলা ফাটান কাবুলে বসেই। যেই শব্দ বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকেই মনের কানে শুনতে পান রশিদ-নবীরা। যা অনুপ্রাণিত করে তাদের। যোগায় ম্যাচের শেষ বল পর্যন্ত লড়াই করার শক্তি। যে জন্যই নিজেদের সেরাটা দিতে জানেন তারা। লড়াই করেন দেশের মানুষদের হাসি ফোটানোর জন্য। যাদের লক্ষ্যটা দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। তাদের কে থামাবে বলুন..