বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশি বোলারদের উত্থান
আর মাত্র তিনটি ম্যাচ, এরপর পর্দা নামতে যাচ্ছে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের বৈশ্বিক আসর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপ শুরুর আগে থেকেই যাচ্ছেতাই পারফর্ম্যান্সের কারণে চরম সমালোচিত হচ্ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। অনেকে ধরেই নিয়েছিলেন বিশ্বকাপে করুণ পরিণতি ঘটতে যাচ্ছে নাজমুল হোসেন শান্তের দলের। তবে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে দারুণ বাজিমাত টাইগারদের, এরপর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৩ রানের পরাজয়। পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে ব্যাটসম্যানরা যখন হতাশা উপহার দিয়ে গেছেন, তখন নিজেদের সামর্থ্যের সবটুকু ঢেলে দিয়েছেন বোলাররা। তাদের অতিমানবীয় পারফর্মেন্সের উপর ভিত্তি করেই গ্রুপ পর্বের তিনটি ম্যাচ জিতে টিম বাংলাদেশ।
বিশ্বকাপের আগে সমালোচনায় জর্জরিত ছিল বাংলাদেশ দল। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে সিরিজ হার, ভারতের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে অসহায় আত্মসমর্পণ, সব মিলিয়ে খারাপ সময় পার করছিলো টাইগার শিবিরে। কিন্তু মূল মঞ্চে এসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ জয় সব কিছু পাল্টে দিয়েছে, বাড়িয়েছিল দলের আত্মবিশ্বাস। আর বাংলাদেশের এমন জয়ের পেছনে পুরো অবদানটাই বোলারদের।
এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বোলিং ইউনিট ছিলো দুর্দান্ত, সবগুলো ম্যাচে তানজিম সাকিব এবং রিশাদ হোসেনরা তাদের সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে খেলেছেন। শুরুর ম্যাচে লঙ্কান ব্যাটারদের মাত্র ১২৪ রানে আটকে দেয়। যেই ম্যাচে রিশাদ ও তানজিম সাকিবরা ছিলেন দুর্দান্ত। এরপর, প্রোটিয়াদের বিপক্ষেও ধারাবাহিকতা বজায় রাখে পেসাররা। সেই ম্যাচে তানজিম সাকিব একাই ধসিয়ে দেন পুরো ব্যাটিং অর্ডার। এরপর নেদারল্যান্ডসের সাথে রিশাদের ভেলকিতে বড় জয় পায় বাংলাদেশ, একইভাবে নেপালের বিপক্ষেও বোলাররা ছিলেন অনবদ্য।
বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে টপ পারফর্মার রিশাদ হোসেন, ৭ ম্যাচ খেলে তিনি নিয়েছেন ১৪ উইকেট, বোলিং ইকনোমি ৭ দশমিক ৭৬। এবারের বিশ্বকাপে শীর্ষ উইকেট শিকারির তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে আছেন এই লেগি। দীর্ঘদিন ধরে একজন জেনুইন লেগ স্পিনারের অভাবে ভুগছিল বাংলাদেশ। মাঝেমধ্যে দু’একজন আশা দেখালেও সময়ের সাথে হারিয়ে গিয়েছিলেন, তবে রিশাদ হোসাইন এসে সেই অভাব দূর করার পাশাপাশি এবারের আসরে বাংলাদেশিদের মধ্যে হয়েছেন সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি।
পেসারদের মধ্যে এবারের বিশ্বকাপে ঈর্ষণীয় পারফর্ম্যান্স করেছেন তানজিম সাকিব। সাকিব মূলত দলে দলে জায়গা পেয়েছিলেন শরীফুল ইসলামের ইনজুরির কারণে। তবে সুযোগ পেয়ে নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছেন এই তরুণ পেসার। ভারত অস্ট্রেলিয়া এবং আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ বাদ দিলে বাকি পাঁচ ম্যাচেই দুর্দান্ত বল করে গেছেন, ৭ ম্যাচে শিকার করেছেন ১১ উইকেট। বোলিং ইকনোমি ৬ দশমিক ২০।
বাংলাদেশের অন্য দুই পেসার তাসকিন আহমেদ এবং মোস্তাফিজুর রহমানও তাদের সামর্থ্যের সবটুকু উজাড় করে দিয়ে খেলে গেছেন। দু’জনেই ৭ ম্যাচে নিয়েছেন ৮ উইকেট করে, মোস্তাফিজের বোলিং ইকনোমি ৫ দশমিক ৫৬, এবং তাসকিনের বোলিং ইকনোমি ৬ দশমিক ৪২।
বিশ্বকাপের আগে থেকেই ছন্নছাড়া ছিল বাংলাদেশ দল। মূল পর্বে খেলতে গিয়ে আশার ফানুস জ্বালিয়েছিলেন বোলাররা, ফলে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তরা। বোলাররা তাদের সামর্থ্যের সবটাই ঢেলে দিয়েছেন, বিপরীতে ব্যাটসম্যানরা ধারাবাহিক বাজে পারফর্ম্যান্স করে গেছেন, ফলে সুপার এইটে গিয়ে করুণ পরাজয় দেখতে হলো টাইগারদের। সেই সাথে অনেকটা সহজ সমীকরণ পেয়েও সেমিফাইনালে যেতে ব্যর্থ নাজমুল হোসেন শান্তের দল।