অবশেষে, আবারও বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারত

অবশেষে, আবারও বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারত

আগের বলেই জয় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। শেষ বলটা করেই হার্দিক পান্ডিয়া নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলেন না, বসে পড়লেন পিচের ওপর। সবাই ছুটে এলেন তার কাছে, চোখে পানি সবার। অনেক অপেক্ষা, অনেক বঞ্চনার ইতিহাস পেছনে ফেলে ভারত যে আবারও বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়ে গেছে!

সবার চোখে পানি আসারই কথা। আইসিসির কোনো ইভেন্টে এই একটা মুহূর্তের জন্য ভারতকে যে অপেক্ষা করতে হয়েছে নিদেনপক্ষে ১১ বছর। আর যদি হিসেবটা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের হয়, তাহলে অপেক্ষাটা ছিল ১৭ বছরের। সে অপেক্ষা ঘুচে গেল যখন, তখন আবেগের বাঁধ ভেঙে যাওয়ারই কথা। ভারতের সেটা হলোও।

অথচ ১১ বছর আগে সবশেষ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিটা যখন জিতল ভারত, তখন আপনি ভেবেছিলেন এই ভারত তাদের পরের শিরোপাটার জন্য অপেক্ষা করবে ১১ বছর পর্যন্ত? এরপর আরও ৫ বার শিরোপার খুব কাছে গিয়ে ফিরে ফিরে আসতে হবে তাদের? বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মাদের মতো তারকাদের দলে নিয়েও?

সেটা যেমন কেউ আঁচ করতে পারেনি, তেমনি আজকের এই জয়টাকেও সম্ভব বলে মনে হচ্ছিল না! অক্ষর পাটেলের করা ১৫তম ওভারের পর তো না-ই। দুটো করে চার আর ছক্কায় হাইনরিখ ক্লাসেন যখন ‘হালাকু খান’ বনে ম্যাচটা ছিনিয়ে নিচ্ছিলেন তখন আপনি ভেবেছিলেন ম্যাচটা ভারত জিততে পারবে? ৬ ওভারে ৯ রানের আস্কিং রেট এক লহমায় নেমে এসেছিল ৬-এ! ভারতের জয়টাকে তো তখন অসম্ভবই মনে হচ্ছিল! সেই ভারতই শেষমেশ হাসল শেষ হাসিটা। 

ভারত যে অসম্ভবটাকে সম্ভব করল, তার শেষ অঙ্কের কৃতিত্বটা যাবে যশপ্রীত বুমরাহর দখলে। ৩০ বলে ৩০ রান প্রয়োজন ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার। বিশেষ করে ক্লাসেন আর ডেভিড মিলার মিলে ছিলেন দুর্দান্ত ছন্দে। ১৬তম ওভারে এসে তিনি দিয়ে গেলেন মোটে ৪ রান। দক্ষিণ আফ্রিকার দম আটকে আসার শুরু ওখানেই।

আগের ওভারের চাপটা ১৭তম ওভারের শুরুতেই ক্যারিবিয়ান সাগরে নিয়ে ফেলতে চেয়েছিলেন ক্লাসেন। পারলেন না, হার্দিক পান্ডিয়ার বলটা তার ব্যাট ছুঁয়ে স্রেফ গেল উইকেটরক্ষক ঋষভ পান্তের হাতে। 

পরের গল্পটা স্রেফ প্রোটিয়াদের ভূমিধ্বসের। ক্লাসেন ফিরতেই পায়ের তলার মাটি সরে গিয়েছিল তাদের, সেটা আর ফেরত পেল না শেষ পর্যন্ত। ক্লাসেন-পরবর্তী ব্যাটাররা অতগুলো উইকেট হাতে রেখেও খানিকটা বাড়তি সমীহই করেছেন বুমরাহ, পান্ডিয়া, আরশদীপদের, সর্বনাশটা হয়েছে সেখানেই।

সর্বনাশ আরও একটা জায়গায় হয়েছে। ১৮তম ওভারের শেষ বলে সেট ব্যাটার ডেভিড মিলারের কাছ থেকে স্ট্রাইকটা যখন ‘কেড়ে’ নিলেন কেশভ মহারাজ। পরের ওভারের প্রথম দুই বলে ব্যাটই ছোঁয়াতে পারলেন না, তৃতীয় বলে স্ট্রাইক দিলেন মিলারকে। 

ভারতীয় বোলাররা চাপ বাড়িয়েই যাচ্ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার ওপর। শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১৬ রানের। প্রথম বলে ডেভিড মিলারের অবিশ্বাস্য এক ক্যাচ নেন ব্যাট হাতে এদিন নিজের ছায়া হয়ে থাকা সূর্যকুমার যাদব। জয়টা তো তখনই নিশ্চিত হয়ে গেছে ভারতের!

তবে শঙ্কাও ছিল বৈকি! কাগিসো রাবাদা যখন চার পেয়ে গেলেন, তখন একটু হলেও কি বুক কাঁপেনি শেষ ওভার করতে আসা পান্ডিয়ার? তা হোক আর না হোক, পান্ডিয়া শেষমেশ নিজের স্নায়ুর পরীক্ষায় উতরে গিয়ে দলকে এনে দিয়েছেন ৭ রানের অবিস্মরণীয় জয়!

তার আগের গল্পটা বিরাট কোহলির। ‘মর্নিং শোজ দ্য ডে’ বলে একটা কথা আছে। মার্কো ইয়ানসেনের শুরুর ওভারে যখন কোহলি তিনটে চার হাঁকালেন, তখনই বুঝি জানান দিয়েছিলেন দিনটা আজকে আমাদের। তবে পরের ওভারে রোহিত শর্মা আর ঋষভ পান্তকে বিদায় করে ভারতকে ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছিলেন মহারাজ। কোহলি এরপর গিয়ার বদলে চলে গেছেন অ্যাংকর ভূমিকায়। কারণ তিনি জানতেন, উইকেটে টিকে থাকলে ওপাশে রান করার মতো ব্যাটারের অভাব নেই ভারতের। 

তাই বলে অক্ষর পাটেলও ফাইনালের মতো মঞ্চে ৩১ বলে ৪৭ রানের ইনিংস খেলে দলকে নিয়ে যাবেন ভালো জায়গায়, তা কজনে হলপ করতে পেরেছিলেন? তার বিদায়ের পর শিবম দুবেও ব্যাট চালালেন। ওপাশে কোহলি তখনও খোলসে, বেরোলেন ৪৮ বলে ফিফটি করার পর। ফিফটিটা করে এরপর আউটের আগে ৮ বল খেললেন, দুটো করে চার আর ছক্কায় তিনি তুললেন ২৬ রান। ভারতের ইনিংস রকেটে চড়ে বসেছে ঠিক তখনই। ৫৭ বলে ৭৬ রান করে তিনি ফিরলেন। এরপর হার্দিক পান্ডিয়ার ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে ভারত তাদের ইনিংস শেষ করে বিশ্বকাপ ফাইনালের রেকর্ড ১৭৬ রান তুলে। 

একটা সময় এই রান যথেষ্ট কি না, তা সন্দেহের মুখেই পড়ে গিয়েছিল। তবে সে সন্দেহকে পরে মিথ্যে প্রমাণ করেছেন হার্দিক পান্ডিয়া, যশপ্রীত বুমরাহরা। দীর্ঘ অপেক্ষা শেষে ভারতের প্রায় দেড়শ কোটি মানুষের মুখে হাসি ফুটে গেছে তো তাতেই।

সম্পর্কিত খবর