স্বর্গোদ্যানে নরক দেখল বাংলাদেশ, বিশ্বকাপ স্বপ্নভঙ্গ
নন্দনকানন। ইডেন গার্ডেন্স। বাংলায় বললে স্বর্গোদ্যান।
সেই স্বর্গোদ্যানে বাংলাদেশ যা দেখল তার নাম ‘নরক’! নেদারল্যান্ডস ২২৯। বাংলাদেশ ১৪২। হার ৮৭ রানের। এবং এই হারেই বিশ্বকাপ থেকে ছুটি হয়ে গেল বাংলাদেশ দলের। রয়ে যাওয়া বাকি সব ম্যাচের ফল আর কোনো কাজে আসবে না। তিনটি ম্যাচ এখনো বিশ্বকাপে খেলবে বাংলাদেশ। তবে সেই ম্যাচগুলো হবে নেহাৎ অংশগ্রহণের জন্যই খেলা। অন্যকিছু নয়। ইডেনে নেদারল্যান্ডসের কাছে এই হারে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্বপ্ন শেষ। একটু জানিয়ে দেই, ছয় ম্যাচ শেষে এখন পয়েন্ট টেবিলে বাংলাদেশ সবচেয়ে নিচুসারির দল। এই বিশ্বকাপে টানা পাঁচ ম্যাচ হারা প্রথম দল বাংলাদেশ।
১০ দলের মধ্যে দশম এখন!
অনেক স্বপ্ন এবং সুপ্ত ইচ্ছে নিয়ে কলকাতায় এসেছিল বাংলাদেশ দল। পেছনের টানা চার ম্যাচে বড় হারের ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠার জন্য এরচেয়ে ভালো উপলক্ষ আর হয় না। পরিচিত মাঠ। সমর্থনপুষ্ট গ্যালারি। প্রতিপক্ষ অপেক্ষাকৃত দুর্বলসারির। নেদারল্যান্ডসকে ২২৯ রানে আটকে রেখে শুরুতে সেই আনন্দ রথে চড়ার অপেক্ষায় ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ভয়াবহ ব্যাটিং ব্যর্থতায় স্বর্গোদ্যানে নরক যন্ত্রণা দেখল সাকিব আল হাসানের দল।
অথচ নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে এই ম্যাচ জয়ের জন্য প্রায় সব উপকরণই ছিল বাংলাদেশের পক্ষে। গ্যালারিতে বাংলাদেশের সবুজ জার্সির ঢেউ। আগে ব্যাট করতে নামা নেদারল্যান্ডসের মামুলি ২২৯ রানের যোগাড়। রাতের শিশিরের সুবিধায় ব্যাট করা। ম্যাচ জয়ের জন্য রাস্তা সহজ ছিল। কিন্তু একেকজন ব্যাটসম্যান যে কায়দায় আউট হলেন তাতে মনে হচ্ছিল এই প্রথম বাংলাদেশ বড় কোনো ম্যাচ খেলছে।
ব্যাটিংয়ে পিছলে পড়ার এই শুরুটা হলো লিটন দাসের আউটে। রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে গ্লাভসে বল লাগিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন।
১২ বলে লিটনের যোগাড় ৩ রান। নামের পাশে লিখে দিন; ফেল!
আরেক ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম বলের সঙ্গে রানের গতিতে সামনে বাড়ছিলেন। কিন্তু পুল শটস খেলার জন্য ভুল বলটা বেছে নিলেন। উইকেটের মাঝামাঝি সবুজ ঘাসের একটা হালকা আস্তরণ ছিল। লোগান ভ্যান বিক সেটা দারুণভাবে কাজে লাগালেন। ঠিক সেই জায়গায় বলটা রাখলেন। বাউন্স হলো। অফসাইড থেকে ব্যাট টেনে পুল শট খেলার চেষ্টা করলেন তানজিদ। কিন্তু গতিতে পরাস্ত হলেন। বল ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটের পেছনে সহজ ক্যাচ।
১৫ বলে শেষ তানজিমের ১৬ বলের ইনিংস। দলের ১৯ রানের মধ্যেই ড্রেসিংরুমে দুই ওপেনার। আরেকটি বাজে শুরুর দৃশ্য পুনঃমঞ্চায়ন।
স্পিন অপারেট হচ্ছে জেনে ‘ম্যাচআপ’ হিসেবে ওয়ানডাউনে এলেন মেহেদি মিরাজ। স্পিন ভালো খেলার একটা সুনাম আছে তার। কিন্তু শুরুর ১১ বলে কোনো রানই পাননি মিরাজ। চার নম্বরে তার সঙ্গী নাজমুল হোসেন শান্তর অবস্থা আরো শোচনীয়। এই দুজনের জুটি তাদের পার্টনারশিপের শুরুর ১৮ বলে কোনো রানই করতে পারেননি! টানা ডট।
নাজমুল হোসেন শান্তকে বারবার বলে খোঁচা দিতে দেখে ডাচ অধিনায়ক তার জন্য দ্বিতীয় স্লিপে ফিল্ডার দাড় করান। শান্ত সেই ফিল্ডারকে যেন ক্যাচ প্র্যাকটিশের জন্য বলটা তুলে দিলেন। স্লিপে সহজ ক্যাচ। ১৮ বলে ৯ রানের তার যন্ত্রণাকর ইনিংস শেষ।
০, ৭, ৮, ০, ৯। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে ৫০ রানের হাফসেঞ্চুরির পরের পাঁচ ম্যাচে নাজমুল হোসেন শান্তর স্কোর এগুলো। অথচ শুধুমাত্র ব্যাটিংই তার মুল কাজ। দলের সহ-অধিনায়ক তিনি। ব্যাটিং অর্ডারে তিন/চারে নামেন। তবে পেছনের পাঁচ ম্যাচে তার স্কোরের যে নমুনা তা লেজের সারির ব্যাটসম্যানদেরও হয় না!
এই ম্যাচের আগে সাকিব আল হাসানের হঠাৎ ঢাকায় ফিরে ব্যাটিং অনুশীলনের চর্চায় বাংলাদেশের পুরো বিশ্বকাপ গরম। ইডেনে যে কায়দায় সাকিব আউট হলেন তাতে বোঝা গেল অফসাইডের বলে তাকে আরো অনেক অনুশীলন বাড়াতে হবে। ব্যাটের কানায় বল লাগিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে এলেন অধিনায়ক।
১৪ বলে ৫ রানে শেষ সাকিবের ইডেন ম্যাচ।
দলীয় ৬৩ থেকে ৭০ এই ৭ রানের মধ্যে সাকিব, মেহেদি মিরাজ ও মুশফিক রহিম আউট। তাও আবার মাত্র ১১ বলের ব্যবধানে। ১৭.৪ ওভারে বাংলাদেশের শুরুর ৬ উইকেট নেই। স্কোরবোর্ডে সঞ্চয় তখন মোটে ৭০ রান। বাংলাদেশের জন্য এই ম্যাচ মুলত সেখানেই শেষ। বাকি সময় কেবল একটাই অপেক্ষা-হারটা ঠিক কতো অঙ্কের হবে?
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও শেখ মাহেদির সপ্তম উইকেট জুটি সেই অপেক্ষার প্রহর খানিকটা বাড়ালো। রান আউট হয়ে ফিরলেন শেখ মাহেদি। আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ পুল শটের লোভে ত্রিশ গজে কাটা পড়লেন। মাহমুদউল্লাহ আউট হয়ে ফিরছেন সেই সঙ্গে গ্যালারিও ফাঁকা হতে শুরু করলো।
সেই ফাঁকা গ্যালারিতে একটা পোষ্টার ঠাট্টা ছড়ালো, ইংলিশে লেখা সেই শ্লোগান অনুবাদটা ঠিক এমন- ‘আমাদের লক্ষ্য সবসময় পরের বিশ্বকাপ!’
জি¦, ঠিক ধরেছেন প্রতিটি বিশ্বকাপ ব্যর্থতার পর বিসিবি সভাপতি এমন টার্গেটই স্থির করেন, সবসময়!